|
|
|
|
বাড়ির ভগ্নদশা থেকে বেহাল কর্মসংস্কৃতি, ধুঁকছে ‘রূপায়ণ’ |
অশোক সেনগুপ্ত |
বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে ঝাঁ-চকচকে ভবন। কিন্তু ভিতরে ঢুকলেই অন্য চিত্র।
সারি সারি বন্ধ ঘর। এ দিক-ও দিক থেকে ঝুলছে বিদ্যুতের তার। দেওয়ালে কোথাও ফাটল, কোথাও নোনা ধরেছে। পিছনের ব্লকে গেলেই চমকে উঠতে হয়। বাড়ির এই অংশটি বসে গিয়েছে খানিকটা। যেন যে কোনও দিন ভেঙে পড়বে হুড়মুড়িয়ে।
এই হল বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নতির জন্য সরকারি উদ্যোগে তৈরি হওয়া কালার ল্যাব ‘রূপায়ণ’। সল্টলেকের ওই প্রতিষ্ঠান নিয়ে এক সময়ে বেশ গর্ব ছিল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। সভা-সমাবেশে আশার কথাও বলেছিলেন তিনি। এখন এখানকার পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, কেএমডিএ-র ইঞ্জিনিয়ারেরাই বলছেন, “ভবনের পিছনের অংশটি বসে গিয়েছে। যে কোনও দিন ভেঙে পড়তে পারে।”
সেক্টর ফাইভে স্বাস্থ্য ভবনের ঢিল-ছোড়া দূরত্বে পাঁচিল দিয়ে ঘেরা ‘রূপায়ণ’। শু্যটিংয়ের পরে এই কালার ল্যাবে সম্পাদনা, কালার-প্রোসেসিং, সাউন্ড-ডাবিং ইত্যাদির কাজ হওয়ার কথা। কিন্তু ‘রূপায়ণ’-এর কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, এখন এখানে কাজ নেই বললেই চলে। অভিযোগ, সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এখানের কর্মসংস্কৃতিও শিকেয়। যন্ত্রপাতি মান্ধাতার আমলের। চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একাংশের মত, এখানে খরচও বেশি পড়ে, আবার মানের সঙ্গেও আপস করতে হয়। তাই বাংলা ছবির নির্মাতারা আর পারতপক্ষে ঢুকতে চান না ‘রূপায়ণ’-এ। |
|
সম্প্রতি ‘রূপায়ণ’-এর প্রধান গেটের ভিতরে যেতে চাইতেই তেড়ে এলেন নিরাপত্তাকর্মীরা। চত্বরে মানুষ-সমান আগাছার জঙ্গলে ভর্তি। ভবনের ভিতরের অবস্থাও শোচনীয়। গোটা বাড়িতে অগ্নি-নির্বাপণের কোনও রকম ব্যবস্থা নেই বললেই চলে।
কেএমডিএ-র ইঞ্জিনিয়ারেরা জানিয়েছেন, ‘রূপায়ণ’-এর তিনটি ব্লকের মধ্যে পিছনের ব্লকটি বসে গিয়েছে। যে কোনও দিন ভেঙে পড়তে পারে হুড়মু্ড়িয়ে। সম্প্রতি কেএমডিএ-র যে প্রতিনিধিদল ওই ভবন পরিদর্শন করেছেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন চিফ ইঞ্জিনিয়ার অরূপ ঘোষ, অতিরিক্ত চিফ ইঞ্জিনিয়ার জগদীশ গঙ্গোপাধ্যায়, সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার গদাধর সাহা প্রমুখ। তাঁরা রূপায়ণের কর্তাদের কাছে জানতে চান, ভবনের এ রকম হাল কী করে হল? কেএমডিএ-র কর্তারা বলেন, “এর কোনও যুক্তিসঙ্গত উত্তর দিতে পারেননি রূপায়ণ-কর্তারা।”
রাজনৈতিক পালাবদলের পরে ‘রূপায়ণ’-এর জন্য নয়া কমিটি তৈরি হয়েছে। ভবনের বেহাল দশার কথা জানেন সেই কমিটির চেয়ারম্যান, চলচ্চিত্র পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “আমরা ‘রূপায়ণ’-এর হাল নিয়ে আলোচনা করেছি। ভবনের পুরনো নকশা দেখে কথা বলেছি সেটির স্থপতির সঙ্গে। স্থপতির বক্তব্য, তিনটি পর্যায়ে ভাগ করে তৈরি হয়েছিল ভবনটি। একটি ব্লক বসে গেলেও ভয়ের কিছু নেই। অন্য ব্লকগুলির কোনও ক্ষতি হবে না তাতে।” কেএমডিএ-র ইঞ্জিনিয়ারেরা অবশ্য এর সঙ্গে একমত নন। প্রকাশ্যে তাঁরা এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তাঁদের দাবি, মাটি ভরাটের (পাইলিং) কাজ যথাযথ হয়নি। তাই গোটা বাড়িটিই বিপদের মধ্যে রয়েছে। হরনাথবাবুর বক্তব্য, “আমরা ফের গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখব। দীর্ঘকাল বাড়িটার কোনও রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি। সেই কারণেই বাড়িটির এই হাল হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে।”
পাইলিং-এর কাজ কতটা ভাল ভাবে হয়েছে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন ‘রূপায়ণ’-এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান নিলয় ঘোষও। তিনি বলেন, “পরীক্ষাগারে অ্যাসিড পড়ে বাড়ির বিম ও থামের ক্ষতি হয়েছে। বাড়িটিকে বাঁচাতে কয়েক মাস আগে এ ধরনের পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়া হয়।” রাজ্য সরকারের তরফে এমডি হিসেবে ‘রূপায়ণ’-এর দায়িত্বে রয়েছেন তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের যুগ্ম সচিব দিলীপ চট্টোপাধ্যায়। তিনিও স্বীকার করেন, ভবনের অবস্থা খুব খারাপ। তবে এর চেয়ে বেশি কোনও মন্তব্য করতে রাজি নন তিনি।
ভবনের দেখভাল ভাল ভাবে না হওয়ার যুক্তি হিসেবে নিলয়বাবু বলেন, “আমরা বুঝতে পারছি, ভবনটি রাখা সম্ভব হবে না। পুরো বাড়ি ভাঙতে হবে। বছর তিনেক আগে ঠিক হয়, যৌথ উদ্যোগে এটিকে বাঁচানোর চেষ্টা হবে। ডিএফআইডি-র সহযোগিতায় পরিকল্পনাও হয়।” কিন্তু তার পরে আর কোনও কাজ এগোয়নি। |
|
|
|
|
|