বরাদ্দের টাকায় ‘অপ্রয়োজনীয়’ জিনিস
দমকলের এমন দুর্দশা কেন, খতিয়ে দেখবে কেন্দ্র
‘ঢাল-তরোয়াল’ কেনার টাকা বহুবারই মিলেছে। কিন্তু সেই টাকা অন্যত্র ব্যয় করে ‘নিধিরাম সর্দার’ হয়েই রয়ে গিয়েছে দমকলবাহিনী।
গ্যাস-মুখোশ, অগ্নি-নিরোধক পোশাক ইত্যাদি নানা জিনিসপত্র কেনা দরকার। বরাদ্দও হয়েছিল ৩০ কোটি টাকা। কিন্তু সে টাকা দিয়ে কিনে ফেলা হয়েছে ৮৭টি গাড়ি। এমনিতেই যত গাড়ি রয়েছে, চালকের অভাবে সেগুলি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। দমকল সূত্রের খবর, বাহিনীতে এখন ৪১৯টি চালকের পদ শূন্য। এই পরিস্থিতিতে গ্যারাজে পড়ে থাকা গাড়ির ভিড়ে যুক্ত হয়েছে নতুন ৮৭টি গাড়ি। দমকলকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে নতুন গাড়িগুলি।
‘খামখেয়ালিপনা’র এমন ভুরি ভুরি নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে দমকল দফতরে। দমকলকর্তাদের একাংশ জানান, নন্দরাম মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের পরে দেখা যায়, আগুন নেভানোর জন্য প্রয়োজনীয় অনেক জিনিসপত্রই বাহিনীর কাছে নেই। এর পরেই গ্যাস-মুখোশ, অগ্নি-নিরোধক পোশাক, লোহা কাটার যন্ত্র, ইমার্জেন্সি আলো ইত্যাদি কিনতে সরকার ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে। কিন্তু কেনা হয় ৮৭টি গাড়ি ও ৭০টি পোর্টেবল পাম্প।
স্টিফেন কোর্টে অগ্নিকাণ্ডের পরে সরকার ফের দরকারি জিনিসপত্র কিনতে ১১ কোটি টাকা বরাদ্দ করে। কিন্তু সে টাকাও পড়ে রয়েছে বলে দমকলকর্তাদের অভিযোগ।
নিউ মার্কেটের একাংশ তখন আগুনের গ্রাসে। দমকলের গাড়ির সামনে জনতার বিক্ষোভ। ফাইল চিত্র
নন্দরাম ও স্টিফেন কোর্ট, দুই ঘটনাতেই দমকলবাহিনীর দুরবস্থার ছবিটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। স্টিফেন কোর্টের অগ্নিকাণ্ডের পরেও প্রায় দেড় বছর কেটে গিয়েছে। কিন্তু ছবিটা পাল্টায়নি। বুধবার নিউ মার্কেটে আগুন লাগার পরেও দেখা গিয়েছে, এ বারও প্রয়োজনীয় সাজসরঞ্জাম ছাড়াই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে দমকল। দমকলের এক ডিভিশনাল অফিসারের অভিযোগ, “আগুন নেভাতে যে সব জিনিস দরকার, তা বাহিনীর কাছে নেই। অথচ, যে সব জিনিসপত্র কেনা হচ্ছে, তার একটি বড় অংশই অপ্রয়োজনীয়। ব্যবহার না হওয়ায় সে সব পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে।”
রাজ্য দমকল দফতরের এই ‘খামখেয়ালিপনা’ এবং পরিকাঠামোয় ঘাটতির বিষয়টি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। দেশের যে সমস্ত শহর ও জেলায় অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কা সব থেকে বেশি, সম্প্রতি তার একটি তালিকা তৈরি করেছে কেন্দ্র। এর মধ্যে কলকাতা ও হাওড়া অন্যতম। এই সব এলাকার অগ্নিনির্বাপণ ও জরুরি পরিষেবার পরিকাঠামো মজবুত করতে ২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকার ২০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। ওই প্রকল্পে এখনও পর্যন্ত রাজ্য সরকারকে মোট ৩ কোটি ৪২ লক্ষ টাকা দিয়েছে কেন্দ্র। একই ভাবে অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরকে মজবুত করতেও পশ্চিমবঙ্গের জন্য ৭ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। সেই টাকা কোথায়, কী ভাবে ব্যয় করা হয়েছে, তার পরেও কোথাও খামতি রয়েছে কি না, তা সরেজমিন খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
হাঁড়ির হাল
উপকরণ থাকার কথা যা আছে
গ্যাস-মুখোশ
অগ্নি-নিরোধক পোশাক নেই
গাড়ি ১০০ বিকল
জাম্পিং কুশন প্যাকেটবন্দি
পোর্টেবল পাম্প ৭০
বিভিন্ন ধরনের কাটার নেই
ইমার্জেন্সি লাইট নেই
কর্মী থাকার কথা যা আছে
ডিরেক্টর
ডেপুটি ডিরেক্টর
ডিভিশনাল অফিসার
স্টেশন অফিসার ২৫১
সাব অফিসার ১৬৪
লিডার ৯০৮
ফায়ার অপারেটর ২৮২৫
গাড়িচালক ৭৪৮
ঝাড়ুদার ৬০
টেলিফোন অপারেটর ১১
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, দমকলের পরিকাঠামোয় ঠিক কোথায় কোথায় খামতি রয়েছে, তা জানতেই বিস্তৃত পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অগ্নিনির্বাপণ ও জরুরি পরিষেবা ব্যবস্থা মজবুত করতে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের ৮৯ শতাংশ টাকায় নতুন সাজ-সরঞ্জাম কেনার কথা হয়েছিল। বাকি অর্থ ব্যয় হওয়ার কথা দমকলকর্মীদের প্রশিক্ষণ, সাধারণ মানুষের সচেতনতা বাড়ানোর মতো কাজে। নতুন সাজ-সরঞ্জামের মধ্যে আগুন নেভানোর অত্যাধুনিক ইঞ্জিন, ‘মিস্ট টেকনোলজি’-সহ উচ্চক্ষমতার পাম্প, ‘কুইক রেসপন্স টিম’-এর গাড়ি, আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধারের জন্য মুখোশ ও অন্যান্য যন্ত্র কেনায় জোর দেওয়া হয়েছিল। গোটা প্রকল্পের ৭৫ শতাংশ অর্থই দিচ্ছে কেন্দ্র। বাকি ২৫ শতাংশের দায় রাজ্যের। কোথায় কী কী যন্ত্র, সরঞ্জাম কেনা হবে, তার পুরো দায়িত্বই রাজ্যকে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, কেনাকাটায় এই খামখেয়ালিপনা নিয়েই। পাশাপাশি, প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডেই প্রকট হয়ে পড়ছে দমকলের পরিকাঠামোর দৈন্য দশা। পুরো বিষয়টি তাই খতিয়ে দেখতে চায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, কলকাতায় বিভিন্ন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা থেকে স্পষ্ট, শহরের দমকল-পরিষেবায় অনেক খামতি। সেগুলি খুঁজে বার করে দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে একটি ‘অ্যাকশন প্ল্যান’-ও তৈরি হবে। যে সব জায়গায় অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কা বেশি, সেখানকার দমকল কেন্দ্রগুলি ঘুরে দেখবেন কেন্দ্রীয় বিশেষজ্ঞেরা। সামগ্রিক ভাবে দমকলবাহিনীর হালও খতিয়ে দেখা হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দুর্যোগ-মোকাবিলা বিভাগের কর্তাদের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার উপরে জোর দেওয়া খুব জরুরি। কারণ, অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কা-সম্পন্ন জেলাগুলির যে তালিকা তৈরি হয়েছে, তার মধ্যে কলকাতা-সহ এ রাজ্যের ন’টি জেলা রয়েছে। মন্ত্রক জানিয়েছে, সেই জেলাগুলি হল: হাওড়া, হুগলি, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর। ওই জেলাগুলির দমকল পরিষেবার উন্নতিতেও জোর দেবেন কেন্দ্রীয় বিশেষজ্ঞেরা।
First Page Calcutta Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.