ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়।
জেলায় জেলায় অভিভাবক-শিক্ষক দ্বন্দ্ব, গাফিলতির অভিযোগে স্কুলে তালা, শিক্ষক ঘেরাও যখন এ রাজ্যের ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন সহযোগিতার এক নজির গড়লেন কুলটির মিঠানি গ্রামের বাসিন্দারা।
মিঠানি গ্রামের কামালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন তিন জন। তাঁরাই শ’দুয়েক পড়ুয়ার পড়ানো থেকে মিড ডে মিলের দেখাশোনা, সব কিছুই সামলান। কিন্তু তাঁদের তিন জনের মধ্যে দু’জন শিক্ষকই বর্তমানে প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছেন।
এই অবস্থায় যখন পঠনপাঠন প্রায় বন্ধ হওয়ার মুখে, এগিয়ে এলেন গ্রামের বাসিন্দারাই। পালা করে ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর দায়িত্ব তারাই কাঁধে তুলে নিলেন। পাঁচ দিন ধরে এ ভাবেই চলছে পঠনপাঠন। আর নতুন ‘স্যার-দিদিমণি’ পেয়ে খুশি খুদে পড়ুয়ারাও। |
বর্ধমান জেলা শিক্ষা সংসদের অধীন কুলটি প্রাথমিক শিক্ষা চক্রের প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য তৃতীয় শ্রেণিতে ইংরেজি পড়ানোর পদ্ধতি সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছেন প্রধান শিক্ষক-সহ দুই শিক্ষক। বাকি রয়েছেন এক জন মাত্র শিক্ষিকা। বাণী রায় নামে ওই শিক্ষিকা বলেন, “সোমবার কোনও রকম ভাবে সামাল দিয়েছি। কিন্তু তখনই বুঝেছি দশ দিন এ ভাবে চালাতে পারব না।” তবে শেষ পর্যন্ত মুশকিল আসান করেছেন সুবল বাউরি, নীলমণি চট্টোপাধ্যায়, পাপিয়া পাত্ররা। |
শুক্রবার স্কুলের একতলা ও দোতলার তিনটি ঘরেই শিক্ষকের ভূমিকায় দেখা গেল গ্রামবাসীদের। তৃতীয় শ্রেণির ঘরে তখন অঙ্ক বোঝাচ্ছেন শিল্পী সুবল বাউরি। ছবি আঁকা, ব্যানার, ফেস্টুন লেখার পাশাপাশি প্রতিদিন সকালে দু’ঘণ্টা পড়িয়ে যাচ্ছেন। সুবলবাবু বলেন, “গ্রামটা আমাদের, স্কুল ও ছাত্রছাত্রীরাও তো আমাদেরই। এই কাজটা করতে এসে ভাল লাগছে।” অন্য দিকে, বাংলা পড়াচ্ছিলেন গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা নীলমণি চট্টোপাধ্যায়। এক সময় বার্ন স্টান্ডার্ড কোম্পানিতে চাকরি করেছেন। তিনি কথায়, “যখন শুনলাম শিক্ষকের অভাব চলছে তখন ঠিক করলাম আমিও যাব।” আর চতুর্থ শ্রেণিতে ভূগোল পড়ানোর ফাঁকে নিজের কুলটি কলেজের ছাত্রী পাপিয়া পাত্র বললেন, “সামাজিক দায়িত্ব পালন করছি, ভালই লাগছে।” এঁদের পেয়ে দারুণ খুশি দ্বিতীয় শ্রেণির ডালিয়া বন্দোপাধ্যায় থেকে চতুর্থ শ্রেণির সঙ্গীতা বাউরিরা। |
কিন্তু শুধু কি পড়ানো? স্কুলের মিড ডে মিল রান্নার তদারকিতেও মুশকিল আসান গ্রামবাসীরাই। স্থানীয় বাসিন্দা আশিস পাত্র বললেন, “ছাত্রছাত্রীরা পড়তে আসবে, খাবার পাবে না তা হয় না। তাই আমিই এ দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছি।”
গ্রামবাসীদের এই সহযোগিতায় খুশি প্রধান শিক্ষক প্রণবকুমার চট্টরাজ। তিনি বলেন, “প্রশিক্ষণে এসে চিন্তায় ছিলাম। গ্রামবাসীদের কাছে সাহায্যের আবেদনও করেছিলাম। তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ।” কুলটি শিক্ষা চক্রের স্কুল পরিদর্শক নুর আলি জানান, ১৮ জুলাই থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত প্রশিক্ষণ চলবে। তারপর আর কোনও সমস্যা থাকবে না। প্রাথমিক স্কুলের জেলা পরিদর্শক মাজারুল হক বলেন, “কুলটি প্রাথমিক শিক্ষাচক্রের প্রশিক্ষণটি কোনও কারণবশত এখানে সয়মমতো শুরু করা যায়নি। তাই সেটি তড়িঘড়ি শেষ করতেই ওই স্কুলের দু’জন শিক্ষককে একসঙ্গে প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়। ফলে কিছু অসুবিধা হয়েছে।” তবে ভবিষ্যতে এ রকম না হওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
|