যানজট ছাড়াতে গিয়ে মারধরে হত বাসচালক
রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাক সরাতে গিয়ে চালক-খালাসির হাতে বেধড়ক মার খেয়ে মৃত্যু হল উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের এক বাস চালকের। মঙ্গলবার সকাল পৌনে ৭টা নাগাদ মালদহের আট মাইলের কাছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে ঘটনাটি ঘটে। হত বাস চালকের নাম প্রদ্যোত সরকার (৫০)। তাঁর বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুরের বুনিয়াদপুরে। তিনি তৃণমূল শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির বংশীহারী ব্লক সম্পাদক। মালদহ ডিপোর কর্মী প্রদ্যোতবাবু রাতের ডিউটি সেরে এনবিএসটিসি’র বালুরঘাটগামী বাসে চড়ে বাড়ি ফিরছিলেন।
তৃণমূল প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠনের অভিযোগ, সাত সকালে এমন ঘটনার পরেও টনক নড়েনি জেলা পুলিশের। উল্টে এ ব্যাপারে অভিযোগ জানাতে গেলে ইংরেজবাজার, গাজল এবং মালদহ থানার পুলিশ অভিযোগ গ্রহণ করা নিয়ে ঠেলাঠেলি শুরু করে। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব পুলিশ সুপারকে ফোন করতেই নড়েচড়ে বসেন ওই পুলিশ কর্মীরাই। তড়িঘড়ি অভিযোগ নেওয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে অভিযুক্ত ট্রাক চালক ও খালাসি পালিয়েছে। যাত্রীদের সামনে প্রদ্যোতবাবুকে এমন ভাবে মারধর করা হলেও যাত্রী কিংবা বালুরঘাটগামী বাসের কর্মীরা কেউই তাঁকে বাঁচাতে যাননি বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ সুপার ভুবন মন্ডল বলেন, “যে ট্রাকের চালক ও খালাসি বাস চালককে মেরেছে সেটি শনাক্ত করা হয়েছে। তারা পালিয়ে গিয়েছে।”
নিহত প্রদ্যোত সরকার।মনোজ মুখোপাধ্যায়
বালুরঘাটগামী ওই এনবিএসটিসি বাসের চালক নুরুল ইসলাম জানান, কালুয়াদিঘির কাছে একটি ট্রাক রাস্তয় খারাপ হয়ে যাওয়ায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে কয়েকশো গাড়ি আটকা পড়ে। যানজট কাটিয়ে বার হওয়ার সময় উল্টো দিকে একটি ট্রাক সামনে এসে পড়ে। বহু চেষ্টাতেও নুরুলবাবু বাস বার করতে না পারায় প্রদ্যোতবাবু এগিয়ে যান। তিনি ট্রাকের চালককে রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলতেই মারধর শুরু হয়। নুরুলবাবু বলেন, “রাস্তায় পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যান প্রদ্যোতবাবু। স্টিয়ারিং ছেড়ে নামতে পারিনি। কোনও রকমে বাসে তুলে নিয়ে গাজল হাসপাতালে নিয়ে যাই।” সেখানেই চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে প্রদ্যোতবাবুকে মৃত ঘোষণা করেন।
উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “অমানবিক ঘটনা। মালদহের পুলিশ সুপারকে দোষীদের গ্রেফতার করতে বলা হয়েছে। নিয়ম মোতাবেক মৃতের পরিবারকে অর্থ সাহায্য দেওয়া হবে।” সংস্থার তরফে মৃতের পরিবারের হাতে ১০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়।
এ দিন বুনিয়াদপুরে প্রদ্যোতবাবুর মৃত্যুর খবর পৌঁছতে শোকের ছায়া নেমে আসে। ভেঙে পড়েন বৃদ্ধ বাবা-মা। শোকে প্রলাপ বকছেন স্ত্রী মীরা দেবী। এক ছেলে জলপাইগুড়ির এক বেসরকারি সংস্থায় কাজের পাশাপাশি এমএ পড়ছেন। একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়েছে। বাসিন্দারা জানান, পাড়াতেও অন্যায় দেখলে ছুটে যেতেন প্রদ্যোতবাবু। ইদানীং তাঁর শরীর ভাল যাচ্ছিল না। দু’দিনের ছুটি নিয়ে তিনি বাড়ি ফিরছিলেন। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদের সদস্য তৃণমূলের অখিল বর্মন প্রদ্যোতবাবুর চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগও করেন। তাঁর অভিযোগ, নিয়ে যাওয়ার পর গাজল হাসপাতালে প্রদ্যোতবাবুকে এক ঘণ্টা ফেলে রাখা হয়। পরে চিকিৎসক জানান তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
Previous Story Uttarbanga Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.