পরিকল্পিত চক্রান্ত, বললেন বিমান
১৬ বছর পরে কোচবিহারে রানওয়ে ছুঁল ছোট্ট বিমান
‘আমি এসে গিয়েছি।’
সকালের মেঘ মুছে রোদে ভাসা কোচবিহারের আকাশে দু চক্কর দিয়ে ডর্নিয়ের ২২৮ থেকে পাইলট বার্তা পাঠালেন, ‘দারুণ, রোদ-ঝলমলে সকাল। পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি রানওয়ে।’
মিনিট তিনেকের অপেক্ষা। তারপর মেঘমুক্ত আকাশ থেকে ১৮ আসনের দুধ সাদা ছোট্ট বিমানটি নিয়ে কোচবিহারের সদ্য সাফ করা রানওয়েতে নির্বিঘ্নে নেমে এলেন নর্থ-ইস্ট শাটল্-এর ডিরেক্টর এবং সংস্থার প্রধান পাইলট ক্যাপ্টেন ফিজো নেপালি। ঘড়িতে তখন ১২টা ৬ মিনিট। দীর্ঘ ১৬ বছরের ব্যবধান মুছে মঙ্গলবার দুপুরে নতুন করে সূচনা হল কোচবিহার-কলকাতা রুটে উড়ান চলাচলের। যার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন আরও দূরে, শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে বসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পতাকা নেড়ে করে দিয়েছেন এ দিনই।
সোমবার রাত থেকেই অঝোর বৃষ্টি কপালে ভাঁজ ফেলেছিল। অন্তত পাঁচ হাজার মিটার দূরের আকাশ থেকে রানওয়ে দেখতে পাওয়া যাবে তো, না হলে শহরের আকাশ থেকেই তাকে ফিরে যেতে হবে যে! এত দিন ধরে এত উদ্যোগ স্রেফ মাঠে মারা যাবে? মঙ্গলবার সকালেও দাঁড়ি পড়েনি বৃষ্টিতে। কাকভোরেও আকাশ ধূসর, অনর্গল বৃষ্টি।
বেলা পৌনে এগারোটা নাগাদ ডিমাপুর থেকে ডর্নিয়ের-এর বিমানটি তিন জন পাইলট এবং এক জন বিমানসেবিকাকে নিয়ে যখন রওনা হয়েছিল, তখনও কোচবিহার থেকে ভরসা মেলেনি। কোচবিহারের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল অফিসার অরিন্দম চক্রবর্তীর কথায়, “মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল, নামতে পারবে না ডর্নিয়ের ২২৮।”
কোচবিহারে নামার পরে।—হিমাংশুরঞ্জন দেব
কিন্তু পৌনে বারোটা নাগাদ আচমকাই আকাশ জেগে উঠতে থাকে। স্পষ্ট হতে শুরু করে সদ্য বৃষ্টি ধোওয়া রানওয়ে। বিমান নিয়ে ১২টা নাগাদ কোচবিহারের আকাশে চলে আসেন ক্যাপ্টেন ফিজো, ক্যাপ্টেন অমিত মাখিজা, ক্যাপ্টেন গুরনীল সিংহ এবং সেবিকা টুইঙ্কল সামভেদি। টুইঙ্কল বলেন, “ডিমাপুর ছাড়ার পরেই শুনলাম বৃষ্টি হচ্ছে। আমাদেরও আশঙ্কা হচ্ছিল। নামতে পারব তো!” ডর্নিয়ের শুধু নামলই না, সাত যাত্রী নিয়ে দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে। সেখান থেকে উড়ে দুপুর ২টা ৫ মিনিটে নামল কলকাতায়। ভিডিও রিমোট সেন্সিং পদ্ধতিতে সেই উদ্বোধন পর্ব দেখল কোচবিহারের মানুষ। ওই বিমান সংস্থা সূত্রে জানানো হয়েছে, অগস্ট মাস থেকেই রবিবার ছাড়া প্রতি দিনই চলাচল করবে ওই বিমান। ভাড়া প্রায় ৫ হাজার টাকা।
কোচবিহারের নাটাবাড়ির বিধায়ক তৃণমূলের রবীন্দ্রনাথ ঘোষ প্রথম উড়ানেই উড়ে গেলেন কলকাতায়। পুরনো স্মৃতি হাতড়ে বললেন, “আশির দশকে ৩১৫ টাকা ভাড়ায় কোচবিহার থেকে প্রথম বিমানে কলকাতা গিয়েছিলাম। নব্বইয়ের দশকেও বেশ কয়েকবার বিমানে গিয়েছি। তার পর বন্ধ হয়ে গেল।” রবীন্দ্রনাথবাবু ছাড়াও প্রথম বিমানের সাত যাত্রীর তালিকায় ছিলেন, মাথাভাঙার বিধায়ক বিনয়কৃষ্ণ বর্মন, কোচবিহারের অতিরিক্ত জেলাশাসক সুদীপ মিত্রও।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের পূর্বাঞ্চলের ডিরেক্টর গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, “দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর কোচবিহার-কলকাতা উড়ান চালু হল। সত্যিই দারুণ লাগছে। আমাদেরও স্বপ্ন পূরণ হল।” খুশি সিপিএম নেতা ও প্রাক্তন বনমন্ত্রী অনন্ত রায়ও। তাঁর কথায়, “নতুন মুখ্যমন্ত্রী উদ্যোগী হয়ে ওই পরিষেবা চালু করায় তাঁকে ধন্যবাদ।” দিনহাটার ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক উদয়ন গুহও বলেন, “জেলার বাসিন্দা হিসাবে মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। আমরা খুশি।”
আর ছোট্ট ডর্নিয়ের রানওয়ে ছুঁতেই বিমানবন্দরের সামনে চাক বেঁধে থাকা ভিড়ের উল্লাসই জানান দেয় — কোচবিহার কতটা খুশি।
First Page Uttarbanga Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.