|
|
|
|
বায়োপসিতে ধরা পড়ল তরুণীর দ্বৈত অস্তিত্ব |
সোমা মুখোপাধ্যায় • কলকাতা |
ডিম্বাশয়ের ক্যানসার অস্ত্রোপচার করার পরে চিকিৎসকদের চক্ষু চড়কগাছ। বায়োপসি রিপোর্টে তাঁরা দেখছেন, একইসঙ্গে ডিম্বাশয় ও শুক্রাশয় দুই-ই ছিল ১৯ বছরের তরুণীর দেহের ভিতরে। চিকিৎসা পরিভাষায় এর নাম ‘ওভোটেস্টিস’। ক্যানসারের মতো মারণ ব্যাধির সূত্র ধরেই তার দেহের ওই অস্বাভাবিকতার বিষয়টি সামনে এল। জানা গেল, চেহারায় মেয়েলি হলেও সে ছিল অর্ধেক পুরুষ। অস্ত্রোপচার করে সেই ‘পৌরুষ’টুকু বাদ দিলেন ক্যানসার চিকিৎসকেরা।
উত্তর কলকাতার বাসিন্দা সোনালি চৌধুরীর পেট ক্রমশ ফুলে উঠছিল। সঙ্গে অসহ্য ব্যথা। পরীক্ষা করে জানা গিয়েছিল, তার ডান দিকের ডিম্বাশয়ে বাতাবি লেবুর মতো বিশাল আকারের একটি টিউমার রয়েছে। আকার এতটাই বড় এবং টিউমারটি অন্যান্য অঙ্গের সঙ্গে এমন ভাবে জড়িয়ে রয়েছে যে, সেটির অস্ত্রোপচার তখনই সম্ভব নয় বলে জানান চিকিৎসকেরা। নমুনা সংগ্রহ করে বায়োপসির জন্য পাঠান তাঁরা। রিপোর্টে জানা গেল ‘ডিসজার্মিনোমা’ হয়েছে। অর্থাৎ, কমবয়সী মেয়েদের ডিম্বাশয়ে যে ধরনের ক্যানসারের কথা জানা যায়, এটি তেমনই। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর প্রধান চিকিৎসা কেমোথেরাপি।
সেই অনুযায়ী, পরপর চারটি কেমো দেওয়া হল সোনালিকে। আর তাতেই টিউমারের আকার এক ধাক্কায় অনেকটাই ছোট হয়ে গেল। চিকিৎসকেরা সিদ্ধান্ত নিলেন, এ বার ডান দিকের টিউমার সমেত ডিম্বাশয়টি বাদ দেওয়া যেতে পারে। ক্যানসার-শল্য চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “অস্ত্রোপচার করার পরে বায়োপসির জন্য সেটি পাঠানো হল। আর সেই রিপোর্টেই জানা গেল, বায়োপসির জন্য পাঠানো অঙ্গটি শুধু ডিম্বাশয় নয়, তার অর্ধেকটা শুক্রাশয়।”
এই দ্বৈত অস্তিত্বের কথা কি আগে বোঝা যায়নি? গৌতমবাবু বলেন, “মেয়েটির যোনি ঠিক মতো তৈরি হয়নি। জরায়ুটিও ওই বয়সের মেয়েদের তুলনায় ছোট। কিন্তু তা কারও কারও থাকে। দেহের ভিতরের ওই রহস্যের কথা আগে একেবারেই বোঝা যায়নি।” পরিবারের লোকেরা অবশ্য জানিয়েছেন, জন্মের সময়ে সন্তানটি ছেলে না মেয়ে, তা নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি ছিল। কিন্তু তখন যে শিশু চিকিৎসক দেখেছিলেন, তিনি জানান, শিশুটি কন্যাসন্তান। তাই এ নিয়ে পরিবারের লোকজনেরাও পরে আর ভাবেননি।
এসএসকেএম হাসপাতালের স্ত্রী-রোগ বিভাগের প্রধান চিকিৎসক তরুণকুমার ঘোষ জানান, ওভোটেস্টিস খুবই বিরল ঘটনা। তিনি বলেন, “অনেক সময়ে শুক্রাশয় পেটের ভিতরে বছরের পর বছর থেকে গেলে তার থেকে ক্যানসার হতে পারে। তাই গোড়াতেই অস্ত্রোপচার করে নেওয়া প্রয়োজন।” এ ক্ষেত্রেও শৈশবে অস্ত্রোপচার করা হলে সোনালির ক্যানসারের আশঙ্কা অনেকটাই কমে যেত বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
ক্যানসার-শল্য চিকিৎসক গৌতমবাবু জানান, অল্পবয়সী মেয়েদের ডিম্বাশয়ে ক্যানসার যদি প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করা যায়, তা হলে আরোগ্যের সম্ভাবনা অনেক বেশি। সোনালির ক্ষেত্রে ক্যানসারের উৎস তার দ্বৈত অস্তিত্ব। তবে কেমোথেরাপি ও অস্ত্রোপচারের পরে আপাতত বিপদ কেটেছে বলে গৌতমবাবু জানান। |
|
|
|
|
|