|
|
|
|
বাসভাড়া নিয়ে বিতর্ক কান্দিতে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কান্দি |
বাসের ভাড়ার তালিকা ছাত্র থেকে শুরু করে নিত্যযাত্রীদের কেউ কেউ মানেন না বলে অভিযোগ করেছে কান্দির বাস মালিক সংগঠন ও মোটর শ্রমিক সংগঠন। ওই দুই সংগঠনের মধ্যে বৈঠক হয়েছে সোমবার। বাস মালিক সংগঠনের সহ সম্পাদক বিমল চক্রবর্তী বলেন, “২০০৮ সালে ভাড়ার একটি তালিকা তৈরি করে রাজ্য পরিবহণ দফতর। কিন্তু সেই তালিকা মেনে ভাড়া চাইলে অনেকেই তা দিতে অস্বীকার করেন। এই নিয়ে বাসের কর্মীদের সঙ্গে নিত্য গোলমাল লেগেই রয়েছে। আমরা তাই চাই প্রশাসন এই ব্যাপারে কড়া ব্যবস্থা নিক।” নিত্যযাত্রী ও ছাত্রদের বিভিন্ন সংগঠন কিন্তু এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
সরকারি ভাবে নির্দিষ্ট করা রয়েছে, প্রথম পাঁচ কিলোমিটারের জন্য চার টাকা ভাড়া। তারপরে প্রতি কিলোমিটার পিছু পঞ্চাশ পয়সা। কান্দি থেকে বহরমপুরের দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার। সেখানে এই হিসেব মতো ভাড়া ঠিক হয়েছে ১৭ টাকা। বাস মালিক সংগঠনের বিমলবাবুর দাবি, “কিন্তু বেশিরভাগ নিত্যযাত্রী ভাড়া দেন ১০ টাকা করে। কেউ যদি বেশি ভাড়া দিতে চান, তিনিও ১৫ টাকার বেশি দিতে চান না।”
বহরমপুর থেকে কান্দি নিত্য যাতায়াত করেন অভিজিৎ সরকার। তিনি বলেন, “বাস মালিক সংগঠন একটা তথ্য ভুল দিচ্ছে। কারণ, নিয়মিত যাতায়াত করলে সব জায়গাতেই ভাড়ার একটা ছাড় দেওয়া হয়। ট্রেনে যেমন মান্থলির ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু এই রুটে কোনও মান্থলি নেই।” ওই রাস্তায় আর এক নিত্যযাত্রী আলি শেখ বলেন, “তাই আমরা যারা রোজ যাতায়াত করি, তাঁরা নিজেরাই ঠিক করে নিয়েছি যে রোজ ১০ টাকা করেই ভাড়া দেব। মালিকেরাও তাই মেনে নিয়েছেন।” আর এক নিত্যযাত্রী নমিতা দত্ত কান্দি থেকে বহরমপুর যাতায়াত করেন। তিনি বলেন, “১০ টাকা ভাড়াতে বাস মালিকেরাও কোনও আপত্তি করেননি। এখন হঠাৎ করে কেন এই প্রসঙ্গ উঠছে?”
তাঁদের কথায়, মান্থলির মতো করে ভাড়া কম দেওয়ার মধ্যে কোনও অন্যায় নেই। একই দাবি ছাত্রছাত্রীদেরও। ছাত্র পরিষদের জেলা সাধারণ সম্পাদক জয়দেব ঘটক বলেন, “আগে ছাত্রদের জন্য ভাড়ায় ৫৫ শতাংশ ছাড় দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন ততটা ছাড় দেওয়া হয় না। বরং ছাত্রছাত্রীরা ভাড়ার ৫৫ শতাংশের বেশিই দেন।” এসএফআইয়ের কান্দি লোকাল কমিটির সম্পাদক প্রীতম দাস বলেন, “বাসে যে ভাড়া চাওয়া হয়, তাই দেওয়া হয়। এই নিয়ে কোনও গোলমাল হয় না।” নমিতাদেবী বলেন, “কিন্তু বাসগুলোর অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। বসার আসন ভাল নয়। একটু বৃষ্টি পড়লেই বাসের ভিতরেও জল পড়ে। সেই সব কেন সারানো হচ্ছে না?”
বিমলবাবুর বক্তব্য, “আমরা এত দিন ধরে তো মেনেই নিয়েছি ওই ভাড়া। কিন্তু এর মধ্যে দফায় দফায় পেট্রোপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে। সাধারণ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েছে। বেড়েছে গাড়ির যন্ত্রাংশের দামও। তাই বাস মেরামতি থেকে তা ঠিক ভাবে চালানো, সবেতেই বিরাট খরচের ধাক্কা। তাই এখন আর পুরনো ভাড়ায় চলে না।” মুর্শিদাবাদ জেলা মোটর শ্রমিক সমন্বয় সমিতির সম্পাদক বিনয় সাহা বলেন, “বাসের চালক ও কর্মীদের বেতনও বেড়েছে এই ক’বছরে। কিন্তু তাঁরা এখনও ন্যায্য প্রাপ্য পাচ্ছেন না। বাসের ভাড়া না বাড়লে তাঁদের বেতন বাড়াতে চাইছেন না মালিকেরা। তাই আমরাও চাই এ বার ভাড়ার পুনর্বিন্যাস করা হোক।”
বাস মালিক ও মোটর শ্রমিক সংগঠনের দাবি, ভাড়ার পুনর্বিন্যাসের পরে মান্থলির ব্যবস্থাও প্রয়োজন হলে সরকার করে দিক। সেক্ষেত্রে যে ভাড়া নিত্যযাত্রীদের জন্য নির্দিষ্ট হবে, তা-ই নেওয়া হবে তাঁদের কাছ থেকে। বিনয়বাবুর বক্তব্য, “মৌখিক ভাবে কোথাও কোথাও একটা ভাড়া ঠিক করে নেওয়া মোটেই উচিত কাজ হচ্ছে না। আমরা চাই সরকার ভাড়া বেঁধে দিক।”
কান্দির মহকুমা শাসক নীলাঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি নির্ভর করে রাজ্য সরকারের উপরে। ভাড়া আদায় করা নিয়ে আমাদের কিছু করার নেই। বাস মালিক ও শ্রমিকেরা যদি কোনও দাবি করেন, তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।” |
|
|
|
|
|