|
|
|
|
বহরমপুর কলেজে সংঘর্ষে কংগ্রেস-তৃণমূল, জখম ১৪ |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
বিধানসভা নির্বাচনে জোটধর্ম না মেনে মুর্শিদাবাদে তৃণমূল প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ‘গোঁজ’ দিয়েছিলেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। রাজ্যে জোট সরকার প্রতিষ্ঠিত হলেও মুর্শিদাবাদে কিন্তু দুই দল এখনও পরস্পরের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চালিয়ে যাচ্ছে। এতটাই যে, বহরমপুর কলেজের ছাত্র সংসদের দখল নেওয়াকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার তৃণমূল ও কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনের মধ্যে ধুন্ধুমার বাধল। সংঘর্ষে ১৪ জন আহত।
এ দিন প্রথম বর্ষের কাউন্সেলিং ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষার জন্য বহরমপুর কলেজ চত্বরে এমনিতেই ১৪৪ ধারা জারি ছিল। তার মধ্যেই বেলডাঙার বিধায়ক হুমায়ুন কবীর, জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র অশোক দাস, জেলা মহিলা কংগ্রেস সভানেত্রী মৌসুমী বেগম-সহ কংগ্রেসের জেলা স্তরের নেতারা মিছিল করে গিয়ে কলেজের ভিতরে ঢুকতে চান। প্রতিবাদ করেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতারা। কিছু ক্ষণের মধ্যেই সংঘর্ষ বাধে। গণ্ডগোল থামাতে গিয়ে আহত হন বহরমপুর থানার এএসআই ভঞ্জন বিশ্বাস। জেলার পুলিশ সুপার ভরতলাল মিনা বলেন, “১৪৪ ধারা জারি ছিল। তবু কী করে কলেজের ভিতরে এত লোক ঢুকলেন, তা আমরা খতিয়ে দেখছি।”
বহরমপুর কলেজে বিগত ছাত্র সংসদের নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল এসএফআই। কিন্তু এসএফআই-এর জেলা সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমানের অভিযোগ, “বিধানসভা নির্বাচনে জেতার পরে তৃণমূল জোর করে কলেজ দখল করে রেখেছে। কলেজে ঢুকলেই এসএফআই কর্মী-সমর্থকদের মারধর করে বার করে দেয় তৃণমূলের সমর্থক বহিরাগতেরা।” তৃণমূল সমর্থকদের হাতে বেধড়ক মারধর খেয়েই এসএফআই পরিচালিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়েছেন বলেও অভিযোগ। তৃণমূল অবশ্য ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি পার্থ পালের দাবি, “এসএফআই যারা করত, তারা তৃণমূলে যোগ দিয়েছে।” তাঁর বরং পাল্টা অভিযোগ ছাত্র পরিষদের দিকে।
এ দিনের গণ্ডগোলও যে ছাত্র সংসদের দখল নেওয়াকে কেন্দ্র করেই, উভয় পক্ষের কথাতেই তা স্পষ্ট। তৃণমূল এবং কংগ্রেস দু’লই একে অন্যের উপরে দোষ চাপিয়েছে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের তরফে পাথর্বাবুর দাবি, “ছাত্র পরিষদ ওই কলেজ নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। তাই ওদের জেলা স্তরের নেতারা এসে গণ্ডগোল করছেন।” কংগ্রেসের মৌসুমী বেগমের বক্তব্য, “তৃণমূল বলছে, কলেজে ছাত্র পরিষদ করা যাবে না। সেটা আমরা মানব না। তাই ছাত্র পরিষদের সদস্যদের সাহায্য করতেই আমরা সকলে কলেজে গিয়েছিলাম।” জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র অশোকবাবুর বক্তব্য, “এই জেলায় তৃণমূলের পায়ের তলায় মাটি নেই। কিন্তু রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে বলে প্রশাসন, পুলিশের সাহায্য নিয়ে ওরা কলেজ নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে।”
অবশ্য জেলা কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এবং তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা পূর্ত প্রতিমন্ত্রী সুব্রত সাহা বলেন, বহরমপুর কলেজে যা ঘটেছে তা দুর্ভাগ্যজনক। অধীরবাবু বলেন, “বহরমপুর কলেজের সমস্যা মেটানোর জন্য সব রাজনৈতিক দলকেই দায়িত্ব নিতে হবে।” সুব্রতবাবুর বক্তব্য, “জোটধর্ম অস্বীকার করার ফলেই এই ঘটনা ঘটছে। জোটধর্ম পালন করলে সমস্যা মিটবে।”
নেতা-সমর্থকদের হাত ধরে বাইরের রাজনীতি কলেজ চত্বরে ঢুকে পড়ার অভিযোগ দীর্ঘ কালের। ছাত্র রাজনীতির দোহাই দিয়ে রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা ছাত্র ভর্তি থেকে ছাত্র সংসদ নির্বাচন সবই নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন। এর জেরে রাজ্যের বিভিন্ন কলেজে সংঘর্ষের ঘটনাও নতুন নয়। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেই নাটকের পাত্রপাত্রী থাকে সিপিএম এবং তৃণমূলের সমর্থকেরা। এ বার তৃণমূল এবং কংগ্রেস পরস্পরের প্রতি মারমুখী হয়ে তাতে ভিন্ন মাত্রা যোগ করল। |
|
|
|
|
|