|
|
|
|
১৪৪ ধারা অমান্য করার অভিযোগ, গাড়িতে আগুন |
ছাত্র সংঘর্ষে উত্তাল বহরমপুর কলেজ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বহরমপুর |
গণ্ডগোলের আশঙ্কায় মঙ্গলবার সকাল থেকে ১৪৪ ধারা জারি করার পরেও বহরমপুর কলেজে গণ্ডগোল ঠেকানো গেল না। সোমবারের পরে এদিনও ফের সকাল ১১টা থেকে কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের বহিরাগতদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়। দু’পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বচসা থেকে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। উত্তাল হয়ে ওঠে কলেজ চত্বর।
তার প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে লাগোয়া এলাকাতেও। স্বর্ণময়ীর রাস্তায় একটি ছোট লরিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বহরমপুর থানার পুলিশের উপস্থিতিতেই কলেজের ভেতরে ঢুকে বহিরাগতরা ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। প্রহৃত হন কলেজ অধ্যক্ষও। ওই ঘটনায় ১৪ জন জখম হয়েছেন বলে দু’পক্ষের দাবি। তৃণমূলের ৮ জন এবং কংগ্রেসের ৬ জন এই ঘটনায় আহত হয়েছেন বলে দাবি। তবে তাঁদের সকলকেই প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ভঞ্জন বিশ্বাস নামে বহরমপুর থানার এক এএসআই-এর মাথা ফেটে যায়। একই ভাবে গুরুতর জখম হন বৈদ্যুতিন মাধ্যমের চিত্র সাংবাদিক রঞ্জিত মাহাতো। তাঁকে বহরমপুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেয়। এই দিন দু’পক্ষই বোমা ও গুলি চালানোর অভিযোগ করে। যদিও পুলিশ প্রশাসন তা অস্বীকার করেছে। |
|
|
প্রহৃত হন কলেজ অধ্যক্ষ ও এক পুলিশকর্মী।
আগুন দেওয়া হয় গাড়িতে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
|
|
|
|
পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বহরমপুর থানার পুলিশ লাঠি চালাতে বাধ্য হয়। ঘটনার পরেই দু’পক্ষই বেশ কয়েক জনের বিরুদ্ধে বহরমপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করে। যদিও ওই ঘটনায় এদিনের প্রথম বর্ষ অনার্সের দ্বিতীয় কাউন্সেলিং ও প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা ব্যাহত হয়নি। তবে ওই ঘটনায় পুলিশের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ১৪৪ ধারা জারি সত্ত্বেও বহিরাগতদের কলেজ চত্বরে জটলা করা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার ভরতলাল মিনা অবশ্য বলেন, “১৪৪ ধারা জারি সত্ত্বেও কলেজের ২০০ মিটারের মধ্যে বহিরাগতদের যাওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বহিরাগতদের জন্যই এদিনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। লাঠি চালিয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ওই ঘটনার জেরে দু-পক্ষই থানায় বেশ কয়েক জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেছে। এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। পুলিশের তদন্ত চলছে।”
এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ ১৪৪ ধারা অমান্য করে কংগ্রেসের বেলডাঙার বিধায়ক-সহ অন্য নেতারা মিছিল করে কলেজ চত্বরে পৌঁছন। তার আগে থেকেই তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা কলেজের গেটের সামনে জটলা করে দাঁড়িয়ে থাকে। এই অবস্থায় মিছিল করে কলেজের ভিতরে ঢুকতে গেলে পুলিশের সঙ্গে কংগ্রেস নেতাদের ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। ১৪৪ ধারা অমান্য করে কলেজ চত্বরে কংগ্রেস মিছিল করার প্রতিবাদে কলেজের সামনের রাস্তায় তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা অবস্থান করে। পাল্টা কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরাও রাস্তায় বসে পড়ে। এর পরেই ফের কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা কলেজের ভেতরে ঢুকতে গেলে দু’পক্ষে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। দু’পক্ষের কর্মী-সমর্থকই লাঠি, রড-বাঁশ হাতে মারমুখী হয়ে ওঠে। বিপক্ষকে লক্ষ করে শুরু হয়ে যায় ইট-বৃষ্টি। কলেজের মধ্যে ঢুকে ভাঙচুর শুরু হয়।
কলেজ অধ্যক্ষ সমরেশ মণ্ডল বলেন, “কাউন্সেলিং চলাকালীন কলেজের ভেতরে ঢুকে বহিরাগত গুণ্ডারা আমাকে মারধর শুরু করে। ওদের হাত থেকে বাঁচতে কাউন্সেলিং চলছিল, সেই ১৪ নম্বর রুমে চলে যাই। সেখানে গিয়েও তারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হুমকি দেয়। তারা বেশ কয়েকটি চেয়ার, বেঞ্চ ও টেবিল ভাঙচুর করে।” সমরেশবাবুর অভিযোগ, “কলেজ চত্বরে ১৪৪ ধারা জারি থাকা সত্ত্বেও কলেজের ভেতরে ঢুকে বহিরাগতরা যদি তাণ্ডব চালায়, তাহলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? বুধবার জেলাপ্রশাসনের বৈঠকের পরেই আমি স্টাফ কাউন্সিলের সদস্যদের নিয়ে বসব। প্রশাসনের বৈঠকে কোনও সমাধান সূত্র বের না হলে স্টাফ কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে সোমবার থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য কলেজ বন্ধ রাখব।”
বহরমপুর কলেজের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথা মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী মৌসুমী বেগম বলেন, “আমরা কলেজের ২০০ মিটারের বাইরে মিছিল করেছি। কিন্তু ১৪৪ ধারা জারি সত্ত্বেও তৃণমূল কংগ্রেসের বহিরাগতরা কলেজের গেট আটকে দাঁড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করেনি। কলেজে ছাত্রপরিষদ করতে দেবে না বলে তৃণমূল কংগ্রেস ঠিক করেছে। ছাত্রপরিষদ করলে তৃণমূল কংগ্রেস কী করে আমরাও দেখব।”
অন্য দিকে তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্র নেতা পার্থ পাল বলেন, “১৪৪ ধারা জারি সত্ত্বেও এদিন কংগ্রেসের বিধায়ক থেকে জেলার নেতারা বহিরাগতদের নিয়ে এসে কলেজে মিছিল করেছে। পুলিশ তাদের কিছু বলেনি। আমরা তার প্রতিবাদ জানিয়েছি। কলেজে ছাত্রপরিষদের সদস্য থাকলে তো ছাত্রপরিষদ করবে! ওদের কোনও সংগঠনই নেই। আসলে গণ্ডগোল তৈরি করে কলেজের পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করছে তাঁরা। আমরা তা মেনে নেব না।” |
|
|
|
|
|