গড়াপেটা বন্ধে স্টিভ চান প্লেয়ারের উপর আইসিসি-র স্টিং অপারেশন |
‘আমি বসেছি, অন্য ক্যাপ্টেনরাও পলিগ্রাফ পরীক্ষায় বসুক’ |
গৌতম ভট্টাচার্য • লন্ডন |
তাঁকে লংরুমের ঠিক সামনে পাওয়া গেল। সুট-টাইতে সুসজ্জিত। আরও মেদ ঝরিয়েছেন মনে হল। পাকা চুলটায় রং করে দিলে দিব্যি ‘বর্তমান’ ক্রিকেটার হিসেবে চালিয়ে দেওয়া যায়। দেখা হতেই প্রথম প্রশ্ন, সৌরভ কী করছে? ইঙ্গ-অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের মতো এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাটাও বোধহয় ক্রিকেটে থেকেই গেল, সৌরভ বনাম স্টিভ। আপাতত অবশ্য এমসিসি-র ক্রিকেট কমিটির অন্যতম সদস্য স্টিভন রজার ওয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত। অভিনব কিছু আইডিয়া তিনি ম্যাচ দুর্নীতি রোখায় পেশ করছেন। আনন্দবাজারকে সাক্ষাৎকার দিলেন লংরুমের সামনে দাঁড়িয়েই। |
প্রশ্ন: আপনি হঠাৎ লন্ডনে? ম্যাচ দেখতে? |
স্টিভ: না, ক’দিন ধরেই আছি। ছুটি কাটাচ্ছি। আসলে এলাম ইতালি থেকে।
|
প্র: ইতালিতে কিছু ছিল? |
স্টিভ: গ্লেন ম্যাকগ্রার বিয়ে। আইনি কাজগুলো অস্ট্রেলিয়ায় হয়েছিল। কিন্তু পার্টিটা হল ইতালিতে।
|
প্র: লর্ডস টেস্ট দেখবেন? |
স্টিভ: হ্যাঁ, দিনদুয়েক হয়তো দেখব।
|
প্র: সাধারণ ধারণা হল টেস্টে ভারতের সমস্যা আছে। |
স্টিভ: কেন?
|
প্র: কারণ এই ঠান্ডায় বল আরও বেশি সুইং করবে। তার ওপর সহবাগ নেই। |
স্টিভ: আমি মনে করি না। ক্রিকেট এখন এত বেশি খেলা হচ্ছে, এত সব দেশ ঘুরে-ঘুরে হচ্ছে যে, হোম অ্যাডভান্টেজ বলে আর কিছু নেই। সবাই সব কিছু জানে। এ বার সেটা ম্যাচে গিয়ে করে দেখাতে পারার প্রশ্ন।
বল বেশি সুইং করতে কি এই ভারতীয় দল কখনও দেখেনি নাকি? সচিন দেখেনি? না কি রাহুল দেখেনি? যে টিমের আট নম্বরে দুটো সেঞ্চুরি থাকা হরভজন সিংহ ব্যাট হাতে আসে, আমার মনে হয় না তাদের অপরিচিত পরিবেশ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু থাকতে পারে।
|
প্র: আপনি একটু আগে এমসিসি ক্রিকেট কমিটি বৈঠকে কী বললেন? |
স্টিভ: যেটা বললাম কিছু পরে সাংবাদিক সম্মেলনেও বলব। ম্যাচ গড়াপেটা বন্ধ করতে আমি আইসিসি-কে কিছু প্রস্তাব দিয়েছি। যা আমাদের এমসিসি কমিটির মাধ্যমে আইসিসি-র কাছে যাবে।
যেমন আমি মনে করি প্লেয়ারের ওপর প্রয়োজনে আইসিসি স্টিং অপারেশন চালাতে পারে।
|
প্র: স্টিং অপারেশন? |
স্টিভ: হোয়াই নট। খেলাটাকে পরিচ্ছন্ন করার জন্য আপনাকে নানা অভিনব রাস্তায় যেতেই হবে। আমরা সেই কবে থেকে শুনছি অমুক গড়াপেটা হয়েছে। তমুক গড়াপেটা হয়েছে। ধরাটা তো পড়ল মাত্র ক’জন। প্রমাণ করাটা এতই কঠিন। সে জন্য উদ্যোগটাও অন্য রকম নিতে হবে। আমার মতে সবচেয়ে বেশি শাস্তি দিতে হবে ক্যাপ্টেন আর কোচকে। যদি তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ হয়।
|
প্র: এই দু’জনের বেশি শাস্তি কেন? |
স্টিভ: কারণ তারাই চালায় টিমটা। টিমের সংস্কৃতি ক্যাপ্টেন থেকেই তৈরি হয়। সে বা কোচ জড়িত থাকলে আজীবন নিষিদ্ধ করো। কোনও কথা নয়।
|
প্র: এ ছাড়া? |
স্টিভ: এ ছাড়া আমি কমিটিকে বলেছি পলিগ্রাফ পরীক্ষা চালু করতে। সেখান থেকে প্লেয়ার সত্যি বলছে না মিথ্যে বলছে বেরিয়ে আসবে।
আমার মনে হয়েছিল, আইডিয়াটা সুপারিশ করার জন্য সবার আগে আমার নিজের পরীক্ষাটার সামনে বসা উচিত। তাই পারথে আমি নিজে পলিগ্রাফ পরীক্ষাটা দিই। তিন ঘণ্টা সময় লাগে। প্রথমে নিজেকে বলতে হয়, আমি প্রাক্তন অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপ্টেন স্টিভ ওয়। এতগুলো ম্যাচ খেলেছি। এতগুলো ম্যাচে ক্যাপ্টেন্সি করেছি। জীবনে কখনও কোনও ম্যাচে ইচ্ছাকৃত আন্ডারপারফর্ম করিনি। বা ক্রিকেটজুয়াড়ির কাছে টাকাও নিইনি।
এই স্বীকারোক্তিটা ঠিক কি না এর পর নানা ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে ওরা ‘চেক’ করে। হার্টরেট, প্রেশার এগুলো কথা বলার সময় হেরফের হচ্ছে কি না? এত পরিশ্রম-সাপেক্ষ এবং এত রকম দিক দিয়ে এটা করা হয় যে, আমার ধারণা, কেউ মিথ্যে বলছে কি না পলিগ্রাফ ঠিক বার করে ফেলবে।
|
প্র: আপনার সুপারিশ কি যে প্রত্যেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারের ওপর এটা চালু করা উচিত? |
স্টিভ: তা নয়। তবে যাকে দেখে বাকি টিম অনুপ্রাণিত হয়, বা যে দলের নেতা। সে যদি এই পরীক্ষায় বসে, তরুণদের মধ্যে দারুণ সাড়া পড়বে। কেউ চট করে এই সব বুকি-টুকির চক্করে যাবে না।
|
প্র: আপনি অবসরোত্তর এত সব ব্যস্ততার মধ্যে হঠাৎ তিন ঘণ্টার পলিগ্রাফ টেস্টে বসলেন। |
স্টিভ: ভাল প্রশ্ন। বসলাম এ জন্য যে, আমি মধ্যিখানে বিরক্ত হয়ে যেতাম। যেখানে যাচ্ছি, লোকে এত জিজ্ঞেস করছে, আচ্ছা এই যে আপনারা এত জিততেন-টিততেন সব ক্লিন ছিল তো? এক সময় আমি ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছিলাম একই উত্তর দিতে দিতে যে, আমাদের জেতার মধ্যে কোনও অস্বচ্ছ্বতা ছিল না। সততার একটা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় তাই নিজেকে ফেললাম যাতে ক্রিকেটমোদীদের আস্থা অন্তত কিছুটা ফেরত আনা যায়।
|
প্র: কিন্তু পলিগ্রাফও তো বলে শতকরা ৯৮ শতাংশ নিখুঁত। দু’শতাংশ ভুলের ঝুঁকি তো থাকল। |
স্টিভ: থাকল। কিন্তু ৯৮ খারাপ কী? আরে বাবা কিছু আস্থা তো ফেরত আসবে। |
|