বিলিতি বৃষ্টি ও হাওয়াকে ধোনিদের প্রতিপক্ষ মানছেন না বিশেষজ্ঞরা
বৃষ্টি কমবেশি চলছেই। সঙ্গে ঠান্ডা হাওয়া। আর শিরশিরে ভাব।
ক্রিকেট বল যদি সিম এবং সুইং করার জন্য ভূমিষ্ঠ হয়ে থাকে তা হলে প্রথম টেস্টের লর্ডস তার পৃথিবীতে আসার অন্যতম কারণ হওয়া উচিত। আবহাওয়ার পূর্বাভাসেও তো প্রথম দু’দিন বৃষ্টি আর হাওয়া বিক্ষত থাকার কথা।
তা হলে কি প্রথম দিনেই ভারতের পাঁচ উইকেটে ৪০ জাতীয় টিপিক্যাল সিরিজের প্রথম টেস্ট মাফিক ভেঙে পড়া দেখতে হতে পারে? একে সহবাগহীন। তারপর রানির দেশের এমন ‘মেড ইন ইংল্যান্ড’ পরিবেশের জন্য তৈরি হওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়নি। লর্ডস প্যাভিলিয়ন থেকে যে দীর্ঘ ছায়ামূর্তি বেরিয়ে জাদুঘরের কোণটায় এসে দাঁড়াল তাকে কিন্তু বিন্দুমাত্র আতঙ্কিত দেখাল না। একটু আগে তাঁকে দেখতে পেয়ে ভারতীয় দল যে সাদরে ওপরের তলার ড্রেসিংরুমে নিয়ে গিয়েছিল তার মধ্যে কোনও আশ্চর্য নেই। দোসরা এপ্রিল রাতে তো এক জিনিস হয়েছিল। বিশ্বকাপ জেতার ওই মাদকতার মধ্যেও টিম ম্যাসিওরকে ডেকে সচিন তেন্ডুলকর বলেছিলেন, “ওই যে দাঁড়িয়ে আছে, ওকে ডেকে আনো।” অনিল কুম্বলের হাতে নিজে তুলে দিয়েছিলেন বিশ্বকাপ। এ দিন লর্ডস ড্রেসিংরুম ফেরত কুম্বলে বললেন, “এই টিমটাই বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরে উঠেছে। আর সেই জায়গাটা ধরে রেখেছে। এত সহজে এরা ভেঙে পড়ার পাত্রই নয়।” একটু দূরে গ্রেস গেট বরাবর ঘোরাঘুরি করছেন ব্যারি রিচার্ডস। ব্র্যাডম্যান যাঁকে তাঁর সর্বকালের সেরা দলে ওপেনার হিসেবে রেখেছেন সেই রিচার্ডস আইসিসি-র স্বপ্নের দল দেখে চিড়বিড় করবেন তাতে আর বিচিত্র কী! কিন্তু তিনি রেগে নেই। “ব্যাপারটা যখন স্রেফ ছেলেমানুষি। গ্যারি নেই, ভিভ নেই, গ্রেম পোলক নেই, তখন মজাদার এক্সারসাইজ হিসেবেই নিয়েছি।”
লর্ডসে প্রথম ইনিংসের ভারতীয় ব্যাটিংও কি মজাদার এক্সারসাইজ হয়ে দাঁড়াতে পারে? কাগজে-পত্রে রোজ তো যা বেরোচ্ছে তার মর্মার্থ হল ইংল্যান্ডকে পয়লা নম্বর হতে হলে দুটো টেস্ট জিততে হবে। ভাবখানা যেন একটা টেস্ট জিতে গিয়েছে। সাংবাদিকদের সামনে এ দিন বেছে বেছে বোলারদের পাঠিয়েছিল ইংল্যান্ড। তা ট্রেমলেট-ব্রেসনানদের সামনে স্পিনার গ্রেম সোয়ান আক্রমণাত্মক ভাবে বললেন, “স্পিনিং উইকেট না হলে না হবে। বল সুইং করুক যত বেশি হোক।” তিনি ব্যারি রিচার্ডস এই আবহাওয়ার মধ্যেও ম্যাচকে এখনও ফিফটি-ফিফটি দেখছেন। “সবাই বলছে ইংল্যান্ড বোলারদের কথা। কিন্তু এই ব্যাটিং লাইন আপকে বিপন্ন করতে হলে ঠিক লাইনে বল করতে হবে। সচিন গত দু’বছর যা ব্যাট করছে, শুধু সুইংয়ে কাত হবে না।”
ফ্লেচারের সঙ্গে অর্জুনের আলাপ করিয়ে দিচ্ছেন বাবা সচিন।-রয়টার্স
অবশ্য টিম সঙ্কটে পড়তে পারে এমন আশঙ্কা এখনও কাগজ-কলমেই। ভারত অধিনায়ককে দেখে মনে হচ্ছে না কোনও রকম বিতর্ক বা টিমের ওপর চাপ তাঁকে স্পর্শ করেছে বলে। চ্যারিটিতে গতকাল রাতে নিজের বিশ্বকাপ ফাইনাল জেতানো ব্যাটটা বিক্রি করে দিয়েছেন ধোনি। দর উঠেছে এক লাখ পাউন্ড, যে দামে সচিনেরও সরঞ্জাম বিক্রি হয়নি। ব্যাটটা সংগ্রহ থেকে চলে গেল বলে খারাপ লাগবে না কখনও? ধোনি বলেন, “ধুর রাঁচিতে তোলা থাকত ওপরে। তার চেয়ে ক্রিকেট অ্যাকাডেমি খুলব। আরও নানারকম কাজ করব। সেই কাজে অনেক উপহার এল।” একটু পর রাহুল দ্রাবিড়কে জিজ্ঞেস করলাম লর্ডসে জীবনের প্রথম টেস্ট ইনিংসে ৯৫ করা ব্যাটটা নিয়ে দ্রাবিড় কী করেছেন? দ্রাবিড়: “ব্যাক্তিগত সংগ্রহে রেখে দিচ্ছি। খেলতে খেলতে ব্যাটটা খানিকটা ভেঙেও গিয়েছিল।” শুনে মনে হল দুটো পৃথক প্রজন্ম। দু’রকম চিন্তা। দু’ধরনের মূল্যবোধ।
যাক। আশিস নেহরাকে এদিন ভারতীয় নেটে দেখে অনেকেই আশ্চর্য হয়ে গেলেন। নেহরা তো নির্বাচিত দলে নেই! তা হলে টানা দেড় ঘণ্টা বল করে যাচ্ছেন কী করে? তাঁর গায়েও তো একই সফরের জার্সি। তা হলে কি তাঁকে দলে বাড়তি প্লেয়ার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হল? অতীতের ইংল্যান্ড সফরে এমন নজিরও আছে। বিনু মাঁকড়কে আনা হয়েছিল ল্যাঙ্কাশায়ার লিগ থেকে। মদনলালকে একই ভাবে আচমকা দলে ঢুকিয়েছিলেন কপিল দেব। এক্ষেত্রে অবশ্য জল্পনার কোনও সন্তোষজনক পরিণতি নেই। নেহরা জানালেন, তিনি লন্ডনে ডাক্তার দেখানোর ফাঁকে ঘুরে গেলেন। এখনও পুরো ফিট হননি। তবে ওয়ান ডে সিরিজ খেলতে চান। নেহরা ইঙ্গিত দিলেন, টেস্ট ক্রিকেট আর খেলবেন না। শরীরের ওপর বেশি চাপ পড়ে। রুটির জন্য থাকল টি-টোয়েন্টি আর ওয়ান ডে। এটাও নতুন মূল্যবোধ। টেস্ট মর্যাদা কামানোর পক্ষে সেরা হতে পারে কিন্তু টাকা বেশি অন্য দু’ধরনের ক্রিকেটে। আধুনিক ক্রিকেটার আয়ে বিশ্বাসী।
অবশ্য মর্যাদার পুরস্কার যদি কেউ ছোটখাটো জিনিসে খুঁজে পায় সে সচিনকে অনুসরণ করবে। নেহরাকে নয়। এদিন যুবরাজ সিংহ সফরকারী ভারতীয় মিডিয়ায় তত্ত্বতালাশ করছিলেন কোনও ভাল ফটোগ্রাফার পাওয়া যায় কি না। আজ পর্যন্ত ফটোগ্রাফার কেউ সফরে আসেননি। আর যুবরাজ অ্যামেচার ক্রিকেটলেখক নয়, পেশাদার ফটোগ্রাফার দিয়ে একটা ছবি তোলাতে চান। নার্সারি এন্ডে সচিনের ছবি আর সঙ্গে এই লেখা যা আনন্দবাজারে সোমবার বেরিয়েছে তার সামনে নিজে পোজ দেবেন! শ্রদ্ধাটা এই পর্যায়ের।
ক্রিকেটের মক্কার নানা মুখ। সচিন পুত্র অর্জুন বই দেখার ফাঁকে আলাপ সেরে নিচ্ছে ডানকান ফ্লেচারের সঙ্গে।
ডানদিকে দ্বৈরথের আগে জাহির খান ও ইংল্যান্ড অধিনায়ক স্ট্রস।-এএফপি, রয়টার্স
সচিন নিজে কী করছেন? নেটে দু’বার ব্যাট করলেন কিন্তু কার্স্টেনবিহীন তাঁর কি সামান্য ফাঁকা ফাঁকা লাগছে? বল ছুড়ে ছুড়ে যে থ্রোয়িং ডাউন এক্সারসাইজ তাঁকে দেওয়াটা জগদ্বিখ্যাত হয়ে গিয়েছে সেটাই তো একবারও করতে দেখলাম না। বোলিং কোচ এরিক সিমন্স হয়তো কাল এটা করাবেন। ম্যাচের আগের দিন তো তেন্ডুলকরের ওটা রুটিন। কিন্তু শয়ে শয়ে বল অত জোরে নিখুঁত ভাবে ছোড়ার ক্ষমতা আছে সিমন্সের? একে তো থ্রো নির্দিষ্ট গতিতে রাখতে হবে। তার ওপর কাঁধ অত্যন্ত শক্তিশালী হতে হবে।
তেষট্টি ছুঁইছুঁই ডানকান ফ্লেচারের পক্ষে সম্ভব বলে মনে হয় না। শরীরী ভাষা দেখেও মনে হল না নতুন কোচ আর সচিনের কোনও সম্পর্ক এখনও তৈরি হয়েছে বলে। ফ্লেচারকে নিয়ে ইংরেজ মিডিয়ার আগ্রহ অবশ্য সচিনকে নিয়ে কৌতূহলের পরেই। মিডিয়ার সঙ্গে তাঁর মোটেও বনিবনা ছিল না। ফ্লেচার মনে করেন, ব্রিটিশ প্রেস বড় নেগেটিভ। দলের সঙ্গে থাকে না। আর মিডিয়া মনে করে লোকটা চূড়ান্ত উন্নাসিক। নিজেকে কী না কী মনে করে। একই সঙ্গে ২০০৫-এর অ্যাসেজ জয়ের কৃতিত্ব তারা ফ্লেচারকেই দেয়। তখনকার অধিনায়ক মাইকেল ভনকে নয়। তাই ভারতীয় দল নিয়ে লর্ডসে ফ্লেচার নামা মানে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে বার্সেলোনার কোচ হয়ে ঢুকছেন ফার্গুসন!
দু’হাজারতম টেস্ট ম্যাচ ঘিরে বাজনা-বাদ্যি চরমে। ইংল্যান্ড এবং ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড মিলে প্রথম দিনের খেলা দেখার জন্য কিছু বিশেষ আমন্ত্রণ পাঠিয়েছে। হোমরাচোমরা কর্তা এবং নানা দেশের বরেণ্য ক্রিকেটারদের। পুরো তালিকা জানানো হবে বুধবার। ভারত থেকে সবার আগে যাঁর আমন্ত্রণ পাওয়া উচিত তিনি লর্ডসে বিশ্বকাপ জয়ী এবং ছিয়াশির ২-০ সিরিজ জয়ী দলের অধিনায়ক।
তিনি কি আসছেন? নয়াদিল্লি থেকে রাতে কপিল দেব বলছেন, “বোর্ডের নেমন্তন্ন? নো আইডিয়া।”
কিছু কিছু জিনিস প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরেও বদলায় না। ভারতীয় বোর্ড!
First Page Khela Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.