‘দেখে নিতে’ এল ৫০ জনের দল
হাওড়া-লিলুয়ার বিভিন্ন স্কুলের ছাত্র ওরা। নিত্য যাতায়াত লোকাল ট্রেনের মহিলা কামরায়। আপত্তি করলে শোনে না। উল্টে অশালীন আচরণ করে মহিলাদের প্রতি। বেশির ভাগ নিত্যযাত্রীই দেখেছেন ব্যাপারটা। তাঁদের কয়েক জন রুখে দাঁড়াতেই, তুলকালাম বাধাল ওই ছাত্ররা। পুলিশ জানায়, সোমবার ওই ছাত্রদের মহিলা কামরা থেকে নামিয়ে দিয়েছিলেন নিত্যযাত্রীরা। এর বদলা নিতে মঙ্গলবার ওই ছাত্ররা জনা পঞ্চাশের এক গুন্ডাবাহিনীই নিয়ে আসে বেলানগর স্টেশনে। ‘প্রতিবাদী’ যাত্রীদের উপর চড়াও হয়ে তাঁদের মারধর করে। ভাঙচুর চালায় স্টেশনে। পাথরও ছোড়ে তারা।
স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে এলে অবশ্য ‘বীরবাহিনী’ লাইন ধরে ডানকুনির দিকে ছুটে পালায়। তবে স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়েছে পাঁচ হামলাকারী। রোহিত তিওয়ারি, আদিত্য শর্মা, রোহিত বর্মা, রিতু রাই সিংহ ও মনজিৎ সিংহ। সকলেই ডানকুনির বাসিন্দা। কেন এই অভব্যতা, জানতে চাওয়া হলে ধৃত রোহিতের সাফাই, “আমরা পাঁচ জন আজই প্রথম এলাম। বন্ধুরা নিয়ে এসেছিল। ওরা খুব মেরেছে।” কারা তাদের ডেকে এনেছে, তাদের নাম অবশ্য বলতে চায়নি ধৃতদের কেউ। নিত্যযাত্রীরা জানাচ্ছেন, ওই পাঁচ জনই রোজ মহিলা কামরায় উঠে অশালীন আচরণ করত।
হাওড়ার বিভিন্ন শাখার নিত্যযাত্রীদেরই ক্ষোভ, মহিলা কামরা বা লেডিজ স্পেশ্যালে বেশ কিছু পুরুষ অফিসযাত্রী ও ছাত্রের যাতায়াতের ঘটনা ঘটছে রোজই। তাদের অভব্য আচরণে নিরাপত্তাহীনতায়ও ভুগছেন অনেক নিত্যযাত্রী। কারণ প্রতিবাদ করলে কী হতে পারে, সেটাই চেখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল বেলানগর স্টেশনের ঘটনা। মঙ্গলবার সকালে একেবারে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় স্টেশন চত্বর। ভাঙচুরের পরে স্থানীয়দের সঙ্গে হামলাকারীদের হাতাহাতি বেধে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে জিআরপি, আরপিএফ-এর পাশাপাশি পুলিশ আসে বালি থানা থেকেও। উত্তেজিত জনতার হাত থেকে উদ্ধার করা হয় হামলাকারী পাঁচ যুবককে। পরে তাদের জিআরপি গ্রেফতার করে।
পুলিশের হেফাজতে দুই যুবক। মঙ্গলবার। রণজিৎ নন্দী
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বেশ কয়েক দিন ধরেই সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বর্ধমান-হাওড়া কর্ড লাইনে হাওড়াগামী সব লোকাল ট্রেনের মহিলা কামরার দরজা আটকে দাঁড়িয়ে থাকত কিছ স্কুল ছাত্র। অভিযোগ, বেলানগর স্টেশন থেকে মহিলারা উঠতে গেলে তাঁদের উদ্দেশে অশালীন মন্তব্য ও আচরণ করত ওই ছাত্ররা। লিলুয়া স্টেশনে নামার আগে পর্যন্ত এমনটা চলত। বেলানগরের বাসিন্দা অশোক দাস বলেন, “রোজই মেয়েকে ট্রেনে তুলতে এসে দেখি ছেলেগুলি মহিলা কামরার দরজায় দাঁড়িয়ে। বারণ করলেও ওরা শুনত না। স্টেশন মাষ্টারকে মৌখিক ভাবে জানিয়েও ফল হয়নি। স্টেশনে বা ট্রেনে কোনও পুলিশের দেখা পাওয়া যেত না।” ভুক্তভোগী এক কলেজ ছাত্রী বললেন, “বার বার নিষেধ করা সত্ত্বেও ওরা শোনেনি। সোমবার তাই অন্য যাত্রীরা মিলে ওদের মহিলা কামরা থেকে নামিয়ে দিয়েছিলেন। তার ফল যে এমন হবে ভাবতেও পারিনি।”
পুলিশ জানায়, মহিলা কামরা থেকে নামিয়ে দেওয়ায় সোমবারই ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দিয়ে গিয়েছিল নিত্য যাত্রীদের। এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ ডাউন বর্ধমান লোকাল থেকে জনা পঞ্চাশ যুবক বেলানগর স্টেশনে নামে। তারা কয়েক জন নিত্যযাত্রীকে ট্রেনে উঠতে বাধা দেয়। শুরু করে মারধর। বাদ যান না মহিলারাও। ট্রেন চলে গেলে তারা রেল লাইন থেকে পাথর তুলে যাত্রীদের গায়ে ছুড়তে থাকে। জখম হন কয়েক জন যাত্রী। প্ল্যাটফর্মেও ভাঙচুর করে তারা। জখম যাত্রী অনিমেষ ধাড়া বলেন, “প্রতি দিনই ওদের মহিলা কামরায় উঠতে বারণ করি। সে জন্য ওরা আজকে আমাকে ট্রেনে উঠতে বাধা দেয়। মারধরও করে।”
হাওড়া শাখার নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, রোজই মেন ও কর্ড শাখার ট্রেনে মহিলা কামরায় এক দল অফিসযাত্রী পুরুষ ও স্কুল ছাত্র উঠে পড়ে। মহিলাদের উত্যক্ত করে তারা। প্রতিবাদ করে লাভ হয় না। হাওড়া স্টেশনে দাঁড়িয়ে ডানকুনির বাসিন্দা করবী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সকালে মহিলা কামরায় পুলিশ থাকে না। ছেলেগুলি যা খুশি তাই করে।” মহিলা যাত্রীদের অনেকেরই বক্তব্য, মহিলা কামরা শুধু নয়, লেডিজ স্পেশ্যালের ছবিটাও প্রায় এক। ব্যান্ডেল থেকে লেডিজ স্পেশ্যালে যাতায়াত করেন বালির মৌমিতা সাহা। বললেন “নিয়মিত জিআরপি, আরপিএফ অভিযান হয় না। লেডিজ স্পেশ্যালেও পুরুষরা উঠে পড়েন।” হাওড়ার এসআরপি রবীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “শ্রাবণী মেলার জন্য এখন পুলিশ কর্মীর সংখ্যা কম। তবে আমরা আরও কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করছি। ধৃতদের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর ও মহিলা কামরায় ওঠার অভিযোগ আনা হচ্ছে।” রেল পুলিশের ডিজি দিলীপ মিত্র বলেন, “মহিলা কামরায় পুরুষদের ওঠা বন্ধ করতে আরও কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে।”
Previous Story South Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.