|
|
|
|
সম্পাদকীয় ২... |
দায়িত্ব সকলের |
টালিগঞ্জে বাণিজ্যিক সুদিন ফিরিয়াছে। এখন মাল্টিপ্লেক্সেও বাংলা ছবি হাউসফুল হয়, টেলিভিশনের চ্যানেলে চ্যানেলে মেগা সিরিয়ালের রমরমা। অনুমান করা চলে, ধনলক্ষ্মী টালিগঞ্জের স্টুডিয়োপাড়ায় ফিরিয়া আসিয়াছেন। কিন্তু, লক্ষ্মীর প্রত্যাবর্তনেও যে পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্রনির্মাণের প্রাণকেন্দ্রের ছবিটি বদলায় নাই, সোমবার ভারতলক্ষ্মী স্টুডিয়োর লেলিহান অগ্নিশিখা তাহা প্রমাণ করিয়া গেল। বিদ্যুতের খোলা তার, অতিদাহ্য পদার্থের স্তূপ এবং সাবধান না থাকিবার দীর্ঘ দিনের অভ্যাস বিপর্যয়ের সমস্ত উপাদানই ভারতলক্ষ্মী স্টুডিয়োর সেটে মজুত ছিল। অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র ছিল না। শুধুমাত্র এই স্টুডিয়োটিই নহে, অন্যান্য স্টুডিয়োর অবস্থাও এই রকমই। ২০০০ সালে টেকনিশিয়ান্স স্টুডিয়োয় আগুন লাগিয়াছিল। তাহার পর এগারো বৎসর কাটিয়া গিয়াছে। কিন্তু, স্টুডিয়োর রক্ষণাবেক্ষণের ভারপ্রাপ্ত কে এম ডি এ-র আধিকারিকই বলিলেন, এখনও স্টুডিয়োটি কার্যত জতুগৃহ। অগ্নি যাহাকে দগ্ধ করিতে পারে না, তাহার নাম অবহেলা। টালিগঞ্জের স্টুডিয়োপাড়ায় সেই অবহেলার ছাপ বড় স্পষ্ট। এমন নহে যে কেহ এই সম্ভাব্য বিপদের কথা জানিতেন না, জানেন না। শিল্পী হইতে প্রযোজক, স্টুডিয়োর মালিক, সরকার সকলেই প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় জানেন, এই বারণাবত যে কোনও সময় জ্বলিয়া উঠিতে পারে। কিন্তু, তাহার প্রতিকার করা হয় নাই।
প্রতিকারের একমাত্র পথ পেশাদারিত্ব। যাহা করা কর্তব্য, তাহা নিখুঁত ভাবে করিবার পেশাদারিত্ব। যেখানে প্রত্যহ বহু শত মানুষ কাজ করেন, সেইখানে যাহাতে বিদ্যুতের তার বিপজ্জনক ভাবে না ঝোলে, দাহ্য বস্তুর সহিত যাহাতে আগুনের নিরাপদ দূরত্ব বজায় থাকে, যাহাতে অগ্নি নির্বাপণের সম্যক ব্যবস্থা থাকে তাহা নিশ্চিত করিতে হইবে। স্টুডিয়োপাড়ায় বিনিয়োগের পরিমাণ বিপুল। সেই বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় বিমার ব্যবস্থা করিতে হইবে। টালিগঞ্জ পাড়ার অর্থনীতি অগ্রসর হইয়াছে, সৃষ্টিশীল ভাবনা-চিন্তায় পর্বান্তর ঘটিয়াছে স্টুডিয়োগুলিতেই বা পরিবর্তনের সুবাতাস বহিবে না কেন? এই পরিবর্তনের দায়িত্ব সকলের। বেসরকারি স্টুডিয়োর মালিকের ওপর দায়িত্ব চাপাইয়া দিলেই কাজ ফুরাইয়া যাইবে না। যাঁহারা প্রত্যহ এই স্টুডিয়ো ব্যবহার করেন, তাঁহাদেরও দায়িত্ব লইতে হইবে। অভিনেতা হইতে নির্দেশক, কলাকুশলী হইতে প্রযোজক দায়িত্ব প্রত্যেকের। এই স্টুডিয়োপাড়াই তাঁহাদের রুজির জোগান দেয়, ফলে তাহার মানোন্নয়নের প্রক্রিয়ায় প্রত্যেককে শামিল হইতে হইবে বইকী। তাঁহারা এই দায়িত্ব গ্রহণে সমর্থ, তাঁহাদের সংগঠনগুলির স্বাস্থ্যই এই সামর্থ্যের প্রমাণ। অগ্নিকাণ্ডের পরেই যে ভাবে প্রত্যেকে ঘটনাস্থলে পৌঁছাইয়াছেন, তাহাতে তাঁহাদের মানসিক টানও স্পষ্ট। কাজেই, দায়িত্ব গ্রহণে তাঁহাদের দ্বিধা থাকিবার কথা নহে। সরকারেরও কি দায়িত্ব নাই? আছে, কিন্তু তাহা গৌণ। যথাবিধি নিয়ম মানা হইতেছে কি না, তাহা দেখা যেমন সরকারের দায়িত্ব, তেমনই স্টুডিয়োগুলির মানোন্নয়নে প্রশাসনিক কোনও সাহায্য প্রয়োজন হইলে তাহাও সরকার নিশ্চিত করিবে। কিন্তু, উন্নয়নের দায়িত্ব সরকার লইতে পারে না। তাহা এই শিল্পের সহিত যুক্ত সংগঠনগুলিকেই লইতে হইবে। |
|
|
|
|
|