সম্পাদকীয় ১...
সমাধানের পথ
ত ৭ জুন, মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসিবার তিন সপ্তাহের মধ্যে মহাকরণে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতাদের সহিত চুক্তি সম্পন্ন করিয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করিয়াছিলেন, পাহাড়ের সমস্যার সমাধান হইয়া গিয়াছে। ইহাতে নিঃসন্দেহে কিছু অতিরঞ্জন ছিল। চুক্তি আর সমাধান এক নহে। চুক্তি সমাধানের পথে একটি পদক্ষেপ। জুন মাসের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি যদি প্রথম পদক্ষেপ হয়, সোমবার কেন্দ্র, রাজ্য এবং মোর্চার যে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি সম্পন্ন হইল তাহা দ্বিতীয় পদক্ষেপ। কিন্তু, কথিত আছে, একটি হাজার মাইলের অভিযাত্রাও এক পা ফেলিয়াই শুরু করিতে হয়। গোর্খাল্যান্ড আঞ্চলিক প্রশাসন (জি টি এ) প্রতিষ্ঠার আয়োজনটি পাহাড়ের সমস্যার শেষ উত্তর না হইতেই পারে, কিন্তু এই পথে যদি উত্তরের সন্ধানে অগ্রসর হওয়া যায়, দীর্ঘকাল যাবৎ অমীমাংসিত একটি সমস্যার ইতিহাসে তাহার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। রাজ্য সরকার বনাম জনমুক্তি মোর্চা এই দ্বৈরথ বামফ্রন্ট সরকারের আমলে দৃশ্যত এক ‘অমীমাংসেয়’ অবস্থায় পৌঁছাইয়াছিল, মনে হইতেছিল যে, দুই তরফের মধ্যবর্তী দূরত্ব নিতান্তই অসেতুসম্ভব। রাজনীতিতে দূরত্ব অতিক্রম করিতে হইলে দুই পক্ষকেই কিছুটা অগ্রসর হইতে হয়, অর্থাৎ অন্যের চাহিদা মাফিক কিছুটা ছাড়িতে হয়। ইহাকে আপস বলা চলে নিশ্চয়ই, কিন্তু সদর্থে। জি টি এ চুক্তিতে তেমন আপসের ক্রিয়া রহিয়াছে। রাজ্য সরকার মোর্চার দাবি মানিয়া অনেক দূর অবধি স্বশাসনের অধিকার দিয়াছে, এমনকী ‘গোর্খাল্যান্ড’ শব্দটি লইয়া ছুতমার্গ দেখায় নাই। মোর্চাও স্বতন্ত্র রাজ্যের দাবি মন্থন হইতে আপাতত নিবৃত্ত। ইহা সুলক্ষণ।
আপাতত, সুলক্ষণমাত্র। চুক্তি এবং তাহার পরিণাম সম্পর্কে সংশয়ের বিলক্ষণ কারণ আছে। বিমল গুরুঙ্গ আপাতত ইতিবাচক, বিবেচক, মধপন্থী অবস্থানে। তাহা আশার কথা। কিন্তু তিনি এই অবস্থানে সুস্থিত থাকিবেন কি না, তাহার নিশ্চয়তা দেওয়া কঠিন। হয়তো তাঁহার পক্ষেও কঠিন। যে রাজনীতির সওয়ার তিনি, তাহা মধ্যপন্থায় চলিতে চাহে না, দেখিতে দেখিতে চরম অবস্থানে সরিয়া যাইতে চাহে। সুবাস ঘিসিংকে সরাইয়া বিমল গুরুঙ্গের উত্থান অংশত তাহারই প্রমাণ দিয়াছে। মোর্চা যদি ভবিষ্যতে মধ্যপন্থা ত্যাগ করিতে চাহে, স্বতন্ত্র রাজ্যের দাবি যদি আবার উচ্চকণ্ঠে ধ্বনিত হয়, তাহা হইলে কিন্তু সমগ্র শান্তি-প্রক্রিয়াটি বানচাল হইয়া যাইবে। তাহার প্রবল অভিঘাত পড়িবে সমতলেও। সমতল এখনই অশান্ত, কিছুটা অগ্নিগর্ভ, সেই আগুনে ইন্ধন জোগাইতেছে দলীয় রাজনীতি। জোগাইয়া চলিবে, এমন আশঙ্কাই প্রবল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম পর্বে এই দ্বন্দ্ব সামাল দিতে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়াছেন। বিশেষত, ত্রিপাক্ষিক চুক্তির স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিমল গুরুঙ্গ, রোশন গিরিদের পাশে বসাইয়া অখণ্ড পশ্চিমবঙ্গের অঙ্গীকার করা এবং পাহাড় ও সমতলের সুসম্পর্কের উপর জোর দেওয়ার মধ্যে একই সঙ্গে শুভবুদ্ধি ও সূক্ষ্মবুদ্ধির পরিচয় আছে। আশা করা যায়, শেষ পর্যন্ত এই বুদ্ধির জয় হইবে।
তবে বুদ্ধি জরুরি হইলেও যথেষ্ট নয়, তাহার সহিত প্রয়োজন উন্নয়নের। ত্রিপাক্ষিক চুক্তিতে উন্নয়নের রূপরেখাটি স্পষ্ট এবং সারগর্ভ। কেবল অর্থ বরাদ্দের পরিকল্পনা নহে, সেই অর্থ ব্যবহারের স্বাধীনতাও প্রস্তাবিত হইয়াছে। যদি এই সুযোগের সদ্ব্যবহার হয়, অতীতের মতো বরাদ্দ অর্থের সিংহভাগ দুর্নীতির রন্ধ্রে তলাইয়া না যায়, পাহাড়ের মানুষের আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়নের গতি যদি সত্যই ত্বরান্বিত হয়, তাহাই হইবে সমস্যা সমাধানের যথার্থ দীর্ঘমেয়াদি উপায়। পাহাড়ের এবং সমতলের নায়করা যদি দলমতনির্বিশেষ, ক্ষুদ্র এবং স্বল্পমেয়াদি স্বার্থ ভুলিয়া সেই উন্নয়নের শরিক হইতে পারেন, তাহা হইলে দার্জিলিংকে সুইটজারল্যান্ড বানাইবার প্রয়োজন হইবে না, দার্জিলিং দার্জিলিং হিসাবেই শান্তি ও সুস্থিতির প্রতীকে পরিণত হইতে পারে, তাহা কেবল সম্ভব নয়, সম্ভাবিত। সেই সম্ভাবনা পূর্ণ হইলে, বাস্তবিকই, পাহাড়ের সমস্যার সমাধান হইবে।
First Page Editorial Next Item


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.