সকাল ১০টা। ভারতলক্ষ্মী স্টুডিওর দগ্ধ সেটের ছাই সরিয়ে কিছু খুঁজে চলেছিলেন কাঁচাপাকা চুল-দাড়ির মাঝবয়সী মানুষটি। বহুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পরে হাতে উঠে এল একটি ফুলদানি। হাতে নিয়ে ঘাড় নাড়লেন তিনি। আপন মনেই বলে ফেললেন, “এটাও চলবে না। রংটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আগুনের তাপে বেঁকেও গিয়েছে অনেকটা।”
তিনি তাপস সরকার। ‘মেঘের পালক’ মেগা-সিরিয়ালের শিল্প নির্দেশক। পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া সেটের কোনও জিনিস ফের কাজে লাগানো যায় কি না, মঙ্গলবার তা তন্নতন্ন করে খুঁজেছেন তিনি। তাপসবাবু বলেন, “এত টাকা খরচ করে সেট বানানো হয়েছিল। অনেক পুরনো আসবাবপত্র আনতে হয়েছিল। সব শেষ হয়ে গেল।” তিনি বলেন, “মেঘের পালকের সেট তৈরি করতে প্রায় কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। ছ’মাস ধরে সেট তৈরি হয়েছিল। দামি পুরনো আসবাবপত্র ভাড়া করে আনা হয়েছিল। কী ভাবে এই ক্ষতি পূরণ হবে, বুঝতে পারছি না।”
আগুন লাগার ২৪ ঘণ্টা পরেও ভারতলক্ষ্মী স্টুডিওর ভিতরে ঢুকতেই নাকে এল ঝাঁঝালো পোড়া গন্ধ। এখানে-ওখানে ছড়িয়ে আধপোড়া প্লাইউড, কাঠ, চট। চার দিক শুনশান। স্টুডিওর এক ধারে ছোট্ট অফিসঘরে বসে রয়েছেন স্টুডিও ম্যানেজার। সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে গোটা কুড়ি অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র। সেগুলো দেখিয়ে তিনি বলেন, “সব ক’টাই ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু আগুন রোখা গেল না।” ম্যানেজার-সহ চার জন রয়েছেন অফিসে। ওই স্টুডিওয় প্রায় চারটি সিরিয়ালের নিয়মিত শু্যটিং চলত। মঙ্গলবার থেকে ‘মেঘের পালক’-সহ চারটি সিরিয়ালের ইউনিটই টালিগঞ্জ এলাকার অন্য স্টুডিওয় শু্যটিং চালু করেছে। তাপসবাবু বলেন, “অন্য জায়গায় একটি সেট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। তবে এই বিপুল ক্ষতি কী করে সামলাব, জানি না।” |
তাপসবাবুর মতোই মাথায় হাত তপন নন্দীর। শু্যটিংয়ের কাজে আসবাব ভাড়া দেওয়াই তাঁর পেশা। ভারতলক্ষ্মী স্টুডিও থেকে কিছুটা দূরেই তপনবাবুর অফিস। বললেন, “শুটিংয়ের সময়ে উত্তমকুমারের ব্যবহার করা একটি পুরনো পালঙ্ক মেঘের পালকের সেটে দিয়েছিলাম। সেটাও পুড়ে গিয়েছে। ও রকম পালঙ্ক আর পাব না।” তপনবাবুর দাবি, আগুনে তাঁর প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
দমকল কর্তৃপক্ষ জানান, এ দিন তাঁরা ভারতলক্ষ্মী স্টুডিওর মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে গাফিলতির অভিযোগ দায়ের করেছেন। অগ্নিকাণ্ডের তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ওই সময়ে স্টুডিওয় উপস্থিত কর্মীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কী করে আগুন লাগল, তা অবশ্য এখনও জানতে পারেননি পুলিশ ও দমকলের অফিসারেরা।
শুধু পুলিশ ও দমকলই নয়, ঘটনার সময়ে উপস্থিত ‘মেঘের পালক’ সিরিয়ালের কর্মীরাও আগুন লাগার কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না। সোমবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ সেটের মধ্যে থেকে পোড়া গন্ধ পেয়েই ছুটে গিয়ে দরজা খোলেন নির্দেশক অরিজিৎ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “তখনও সেটে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়া হয়নি। বন্ধ ঘরের মধ্যে আগুন ধরে গিয়েছিল। কী করে আগুন ধরল, তা বুঝতে পারছি না।” আশপাশের বাসিন্দাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানান তদন্তকারী অফিসারেরা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল) মুরলীধর শর্মা বলেন, “স্টুডিওর কর্মীদেরও জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে।” দমকলমন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খান বলেন, “এ বার থেকে মাঝেমধ্যেই স্টুডিওগুলো পরিদর্শন করবেন দমকল অফিসারেরা।” |