নিউ টাউনে একটি ঝিল ঘিরে ইকো-ট্যুরিজম পার্ক গড়ে তুলতে চায় রাজ্য সরকার। মঙ্গলবার ওই ঝিলের আশপাশ ঘুরে দেখে এ কথা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
উত্তরবঙ্গ সফর শেষে কলকাতা বিমানবন্দরে নেমে শহরে ঢোকার পথে এ দিন মমতা নেমে পড়েন ওই জলাশয়ের কাছে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, আবাসনমন্ত্রী শ্যামাপদ মুখোপাধ্যায়, পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং হিডকো ও নগরোন্নয়নের আধিকারিকেরা। হিডকো সূত্রে খবর, ইকো-ট্যুরিজম পার্ক গড়ে তোলার জন্য গোটা বিষয়টি পর্যালোচনা করে ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজারহাটের প্রধান রাস্তা দিয়ে বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে বাঁ দিকে ওই ঝিলটি রাজারহাটের ঘুনি যাত্রাগাছি মৌজার অন্তর্গত। এ দিন নিউ টাউনের ওই জলাশয়ের কাছে মমতার নেমে পড়াটা অবশ্য আচমকা নয়। ঝিলের ধারে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “বহু বার এই রাস্তা ধরে বিমানবন্দরে গিয়েছি। যাওয়ার পথে এই ঝিল ও আশপাশের এলাকাটা আমার খুব সুন্দর লাগত। মনে হত, কোনও এক দিন এখানে এক বার নেমে জায়গাটা দেখব। এ বার উত্তরবঙ্গ যাওয়ার সময়েই আমি শোভনকে বলে রেখেছিলাম, ফেরার পথে শহরে ঢোকার আগে ওই ঝিলটা দেখতে নামব।” |
পরিকল্পনা মতোই এ দিন বিমানবন্দরে নগরোন্নয়নমন্ত্রীকে ডেকে নেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে ছিলেন আবাসনমন্ত্রীও। মমতা বলেন, “কলকাতার খুব কাছেই এই বিশাল ঝিল ঘিরে ইকো-ট্যুরিজম পার্ক গড়ে উঠলে এটি শহরের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠবে। দেশ-বিদেশের পর্যটকেরা এখানে বেড়াতে আসতে পারবেন। কর্মসংস্থানও হবে। তবে সবুজ বাঁচিয়েই করা হবে পার্ক।” মমতা প্রস্তাব দেন, ওই জলাশয়ে নৌকা চালানো থেকে শুরু করে নানা ধরনের আকর্ষণের ব্যবস্থা হতে পারে। জলাশয়ের মাঝখানে দ্বীপ তৈরি করে সেখানে করা যায় রেস্তোরা।ঁ ঝিলের পাশে মুক্ত মঞ্চ তৈরি হতে পারে। ঝিল ঘিরে ছোট ছোট কটেজ গড়ে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা করা যায়। ঝিলের পাশে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তৈরির প্রস্তাবও দেন তিনি। ওই জলাশয় ঘিরে শিক্ষা-সংস্কৃতি ও পরিবেশের মেলবন্ধন হতে পারে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান।
ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কলকাতার সৌন্দর্যায়নে নজর দিয়েছেন মমতা। শহরের সব রাস্তায় হোর্ডিং খুলে নেওয়া থেকে শুরু করে গঙ্গার পাড় সাজিয়ে তোলা নানা বিষয়েই উদ্যোগী হয়েছেন তিনি। হিডকো তৈরি হওয়ার পরে এত বছরেও নিউ টাউন-রাজারহাটের সৌন্দর্যায়নে কার্যত কিছুই হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিউ টাউন-রাজারহাটে শুধুই কংক্রিটের জঙ্গল তৈরি হচ্ছে। ক্রমেই কমে আসছে সবুজ। সে রকম ভাবে গাছও লাগানো হয়নি। এলাকার বহু ছোট-বড় জলাশয় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার মাস কয়েকের মধ্যেই মমতা নিউ টাউন এলাকার সবচেয়ে বড় ঝিলটি ঘিরে এই পরিকল্পনা নেওয়ায় খুশি এলাকার মানুষ।
হিডকো সূত্রে খবর, ওই জলাশয় ও তার আশপাশের সবুজ মিলে মোট এলাকা ৪৮৮ একর। তার মধ্যে ১২২ একর জলাশয়। বাকি ৩৬৬ একর জলাশয়ের আশপাশের সবুজ এলাকা। পুরো জায়গা জুড়েই সৌন্দর্যায়ন করা হবে বলে জানা গিয়েছে।
হিডকোর চেয়ারম্যান তথা আবাসনমন্ত্রী শ্যামাপদ মুখোপাধ্যায় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুসারে আমরা দ্রুত প্রোজেক্ট রিপোর্ট তৈরি করে ফেলব। উনি অনুমোদন করলেই পরবর্তী পর্যায়ের কাজ শুরু হবে।” |