দাবি, আসবেন দশ লক্ষ
কাজের দিনে ব্রিগেড সমাবেশে ভোগান্তির ভয়
মানুষ যাতে দুর্ভোগে না পড়েন, সে জন্য দল ও প্রশাসনকে বারবার সতর্ক করে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর আশা পূরণের বিশেষ সম্ভাবনা দেখছে না কলকাতা পুলিশ। আগামিকাল, বৃহস্পতিবার তৃণমূলের ব্রিগেড সমাবেশের জেরে মহানগর কার্যত অবরুদ্ধ হতে চলেছে বলেই তাদের আশঙ্কা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার ব্রিগেডে লাখ দশেক মানুষ আসবেন বলে তৃণমূলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। যদি সত্যি সত্যি ওই সংখ্যক মানুষ সে দিন শহরের রাস্তায় নামেন, তা হলে ট্র্যাফিক-ব্যবস্থা সামলাতে বাড়তি কর্মী মোতায়েন করেও, হিমশিম খেতে হবে পুলিশকে। সেই সঙ্গে যানজটে আটকে-পড়া নিত্যযাত্রীদের দুর্ভোগের অতি-পরিচিত ছবিটা যে আরও এক বার উঠে আসবে, তা অনায়াসেই বলে দেওয়া যায়।
এই অবস্থায় মঙ্গলবার বিকেলে লালবাজারে একটি জরুরি বৈঠক করেন পুলিশ কর্তারা। কলকাতার পুলিশ কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দা-সহ পদস্থ কর্তারা এ দিন সকালে ব্রিগেডও ঘুরে দেখেন। কথা বলেন তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গেও। সন্ধ্যায় মহাকরণ থেকে ব্রিগেডে গিয়ে সমাবেশের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। কথা বলেন দলীয় নেতা ও পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে।
পুলিশ কর্তারা জানান, অতীতে ব্রিগেডে অধিকাংশ সমাবেশই হয়েছে রবিবার, ছুটির দিনে। সেই কারণে অগুনতি ছোট-বড় মিছিলের জেরে যানজটের সমস্যা হলেও, নিত্যযাত্রীদের সে ভাবে ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়নি। সপ্তাহের কাজের দিনের তুলনায় রবিবার যানবাহনের চাপ যথেষ্ট কম থাকে। অন্য দিকে, কাজের দিনে যে-কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচির (মূলত মিছিল) জেরেই নিত্যযাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ে। নাকানি-চোবানি খেতে হয় পুলিশকেও। এ বার যে হেতু অনেক বেশি মানুষ ব্রিগেডে আসবেন, তাই স্বাভাবিক কারণেই বাড়তি মাথাব্যথা পুলিশের।
সমাবেশের দু’দিন আগে ব্রিগেড পরিদর্শনে তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সঙ্গে মেয়র শোভন চট্টোপাধায় ও বিধায়ক তাপস রায়। সুদীপ আচার্য
ট্র্যাফিক পুলিশের হিসেব অনুযায়ী, কাজের দিনে যে-কোনও সময় শহরে দু’ হাজারের বেশি বাস ঢুকে পড়লেই, যান-চলাচলের সমস্যা মারাত্মক আকার নেয়। আগামিকাল সেখানে কলকাতায় হাজার চারেক বাস ঢুকতে পারে বলে ইতিমধ্যেই তৃণমূল নেতারা পুলিশকে জানিয়েছেন। পুলিশের অভিজ্ঞতা বলছে, এ ধরনের সমাবেশে আসা যানবাহন ও মিছিল একই সঙ্গে, একই রাস্তা ধরে সমাবেশস্থলের দিকে যায়। ফলে একসঙ্গে দু’টি চাপ সামলাতে বিপাকে পড়তে হয়।
বৃহস্পতিবারের সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে আরও একটি সমস্যা। পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ব্রিগেডে সমাবেশের জায়গা আগের চেয়ে এখন অনেকটাই ছোট হয়ে এসেছে। বর্তমানে ব্রিগেডের যে আয়তন, তাতে সেখানে মেরেকেটে সাড়ে চার লক্ষ মানুষ ঢুকতে পারেন। তৃণমূল নেতাদের দাবিমতো দশ লক্ষ মানুষ এলে তাঁরা কী করে ব্রিগেডে ঢুকবেন?
পুলিশ কর্তারা জানিয়েছেন, যদি এত লোক ব্রিগেডে আসেন, তবে অর্ধেকের বেশি মানুষকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে হবে রাস্তায় রাস্তায়। তাতে বন্ধ হয়ে যাবে ওই পথগুলিও।
পুলিশের আশঙ্কা অবশ্য এখানেই শেষ নয়। ট্র্যাফিক বিভাগের বক্তব্য, এ ধরনের রাজনৈতিক মিছিলগুলির জন্য কোনও রাস্তাই সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা যায় না। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রাস্তা জুড়ে মিছিল এগোতে থাকায়, তার পিছনেই আটকে পড়ে সারি-সারি গাড়ি। মিছিলগুলি লম্বায় যত বড় হবে, ততই তীব্র হবে যানজট। শহরে রাস্তার পরিমাণ বেশি থাকলে, বিকল্প পথ দিয়ে মিছিলগুলিকে পার করানো সম্ভব হত। সেই সুযোগ এমনিতেই কম, তার উপর ব্রিগেড শহরের কেন্দ্রে হওয়ায় তা আরওই সম্ভব নয়। তাই যানজট এড়ানো কার্যত অসম্ভব বলেই পুলিশ কর্তাদের বক্তব্য।
যেখানে মূল মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে, তার আশপাশে নিরাপত্তার কেমন বন্দোবস্ত থাকবে এবং মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য মূল মঞ্চ থেকে কতটা জায়গা ফাঁকা রাখা হবে সব ব্যাপারেই পুলিশের সঙ্গে এ দিন তৃণমূলের নেতাদের আলোচনা হয়। কোনখান দিয়ে লোক ঢুকবে, কোথায় গাড়ি রাখা হবে, আলোচনা হয় সে-সব ব্যাপারেও। পুলিশ কমিশনার এ দিন বলেন, “বৃহস্পতিবার তৃণমূলের বিজয় সমাবেশ উপলক্ষে নিরাপত্তার ব্যাপারে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশ মেনেই সব আয়োজন করা হয়েছে।”
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী মুকুল রায়, দলের রাজ্য সভাপতি তথা রাজ্যের পূর্ত এবং পরিবহণমন্ত্রী সুব্রত বক্সী এ দিন দলের কর্মীদের সঙ্গে সমাবেশের ব্যাপারে আলোচনা করেন। পরে মুকুলবাবু বলেন, “ওই দিন বিপুল সংখ্যক মানুষ বিভিন্ন জায়গা থেকে আসবেন। সমাবেশ যাতে সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয়, সে ব্যপারে দলের নেতা ও কর্মীদের বেশ কিছু নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ব্রিগেডের সবুজ যাতে নষ্ট না-হয়, সে ব্যাপারে হাইকোর্টের সব নির্দেশ মানা হচ্ছে।”
কোথা থেকে কোন পথে মিছিল

এ ছাড়াও যানজটের সম্ভাবনা রয়েছে
• মহাত্মা গাঁধী রোড
• রবীন্দ্র সরণি
• সিআইটি রোড
• বেলেঘাটা মেন রোড
• মানিকতলা মেন রোড
• উল্টোডাঙা মেন রোড
• বি টি রোড
• আর জি কর রোড
• পার্ক সার্কাস মোড়
• রাসবিহারী অ্যাভিনিউ
• সার্কুলার গার্ডেন রিচ রোড
• ডায়মন্ডহারবার রোড
• দরগা রোড
• আলিপুর রোড
কোথায় মিছিলের গাড়ি পার্কিং
• বিদ্যাসাগর সেতুর তলায় সেন্ট জর্জেস গেট রোড
• হেস্টিংস মাজার
• শ্যামবাজার থেকে রাজাবাজার (এপিসি রোডের বাঁ-দিকে)
• ইন্দ্র বিশ্বাস রোড, রাজা মণীন্দ্র রোড
• বাবুঘাট, পলাশি গেট রোড
• বাবুঘাট, গঙ্গাসাগর মেলা মাঠ
• ময়দানে বঙ্গবাসী কলেজ মাঠের পাশে
• ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান মাঠের পিছনে
• আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের পাশে
• থিয়েটার রোড-জওহরলাল নেহরু ক্রসিং থেকে ডোরিনা ক্রসিং, রাস্তার এক দিকে
• চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট ক্রসিং থেকে উত্তর দিকের একাংশে
• মৌলালি মোড় থেকে মল্লিক বাজার এজেসি বোস রোডের এক দিকে
• আর জি কর রোড থেকে বিবেকানন্দ রোড, রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রিটের পূর্ব দিকে
কোনও গাড়িই পার্ক করা চলবে না

• ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল সংলগ্ন এলাকায়
• হসপিটাল রোড
• ক্যুইনস ওয়ে
• ক্যাথিড্রাল রোড
• ক্যাসুরিনা অ্যাভিনিউ
• লাভার্স লেন
• পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা
• প্রয়োজনে ট্রাম বন্ধ রাখা বা অন্য রুটে ঘোরানো হতে পারে।

Previous Story Calcutta Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.