শিক্ষকের সঙ্গে বাদানুবাদ, বন্ধ রান্না
শিশুশিক্ষাকেন্দ্রের সহায়ক তথা শিক্ষকের সঙ্গে স্বনির্ভর দলের বাদানুবাদের জেরে চার দিন মিড-ডে মিল বন্ধ থাকল স্কুলে। শুধু তাই নয়, স্বনির্ভর দলের সদস্য তথা স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক ওই শিশুশিক্ষাকেন্দ্রে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায় বারান্দায় বসে ক্লাস করতে হয়েছে পড়ুয়াদের। ঘটনাটি দুবরাজপুর ব্লকের হোসনাবাদ শিশুশিক্ষাকেন্দ্রের। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার সকালে দুবরাজপুরের বিডিও মৌমিতা সাহার নির্দেশে সমস্যার আপাত সমাধান হলেও শিশুশিক্ষাকেন্দ্রে এই ধরনের ঘটনায় বেজায় চটেছেন অভিভাবকেরা। তাঁদের দাবি, শিক্ষকের সঙ্গে স্বনির্ভর দলের সমস্যার জন্য কেন শিশুদের ভুগতে হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হোসনাবাদ গ্রামে ২০০০ সালে ওই শিশুশিক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে। অতীতে ওই কেন্দ্রকে ঘিরে একাধিকবার জামেলা পাকিয়েছিল। বর্তমানে ওই কেন্দ্রে ৭৮ জন পড়ুয়া রয়েছে। এক শিক্ষিকা-সহ তিন জন শিক্ষক আছেন। ওই স্কুলে পড়ুয়াদের বেশিরভাগই আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া পরিবার থেকে আসা।
স্কুলে জমায়েত। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত
সমস্যার সূত্রপাত স্কুল পরিচালন সমিতিকে ঘিরে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দাবি, এখানে স্কুল পরিচালন সমিতি বলে কিছু নেই। শেখ নজরুল নামে এক ব্যক্তি নিজেকে পরিচালন সমিতির সম্পাদক বলে দাবি করছেন। ঘটনাচক্রে শেখ নজরুল মিড-ডে মিল রান্নার কাজের দায়িত্ব পাওয়া স্বনির্ভর দলের সদস্য।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমান স্কুলে ইমামবাবা ও খাজা গরিব নওয়াজ নামে দু’টি স্বনির্ভর দল রান্না করে। চলতি বছরের জুন মাসে রান্নার দায়িত্বে ছিল শেখ নজরুলের দল ইমামবাবা। ওই দলের সদস্যদের দাবি, ওই মাসে মোট ১১ দিন রান্না করলেও প্রধান শিক্ষক উত্তম চক্রবর্তী সই না করায় টাকা পাচ্ছিলেন না। সেই কারণেই ক্ষোভে তালা বন্ধ করেছিলেন। সই না করার ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক উত্তমবাবুর কাছ থেকে কোনও সদুত্তর মেলেনি। আর জুলাই মাসে রান্নার দায়িত্ব পাওয়া খাজা গরিব নওয়াজ দলের সদস্যা রাবিয়া বিবির দাবি, “শেখ নজরুলের সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের ঝামেলার জন্য আমরাও ৮ দিন রান্না করতে পারলাম না। কারণ স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক শেখ নজরুলের কাছেই শিশুশিক্ষাকেন্দ্রের চাবি থাকে।” খাজা গরিব নওয়াজ দলের নেতা শেখ গুলজার জানান, শিক্ষকদের সঙ্গে ঝামেলার জেরে তাঁরা রান্না করতে সুযোগ পাননি। সে কথা তাঁরা থানায় এবং বিডিও-র কাছে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক মঙ্গলবার সই করে দেওয়া তালা খুলেদেন সদস্যরা।
তবে টানা চার দিন স্কুল বন্ধ থাকায় ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। স্থানীয় বাসিন্দা তথা অভিভাবক লাল চাঁদ, লাল মহমম্দ, হাসিনা বিবিদের ক্ষোভ, “শুধু স্বনির্ভর দল নয়, প্রধান শিক্ষকও সুবিধার লোক নন। উনি কখন যে কী করেন সেটা তিনিই বলতে পারবেন। আর এর জন্য ভুগতে হচ্ছে বাচ্চাদের। আমাদের মতো শ্রমবীজী মানুষদের কাছে মিড-ডে মিল খুব গুরুত্বপূর্ণ।” তাঁদের অভিযোগ, “শিশুশিক্ষাকেন্দ্রের জন্য বরাদ্দ টাকা নিয়েও একটা ধোঁয়াশা তৈরি করে রেখেছেন প্রধান শিক্ষক।” প্রধান শিক্ষক উত্তমবাবু অবশ্য এ সব বিষয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, “এ ব্যাপারে যা বলার বিডিওকে বলব।” এলাকার নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্য রফিউল কান বলেন, “প্রধান শিক্ষক অভিভাবক এবং আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে মিটিয়ে নিতে পারেন। সেক্ষেত্রেও কিছু ত্রুটি রয়েছে।”
বিডিও মৌমিতা সাহা বলেন, “আমি প্রধান শিক্ষককে বলেছি, শিশুশিক্ষাকেন্দ্রটি যেহেতু আপনার দায়িত্বে আছে, তাই বিষয়টি আপনাকে দেখতে হবে। তবে স্কুল পরিচালন সমিতির অস্তিত্ব থাকলেও বর্তমানে আর্থিক লেনদেন করার ক্ষেত্রে ওই কমিটির স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে। অভিভাবকদের দাবি অনুযায়ী শিক্ষাকেন্দ্রের জন্য বরাদ্দ টাকা কী অবস্থায় পড়ে রয়েছে সেটে খোঁজ নিয়ে দেখছি।” তবে তালা দেওয়া ঠিক হয়নি বলে স্বীকার করে নিয়েছেন শেখ নজরুল।
Previious Story Purulia Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.