পরিবেশবান্ধব
আরও তো অনেক স্কুল আছে দক্ষিণ দিনাজপুরে। কেউ কিন্তু আর এ ভাবে ভাবেনি। কেউ উদ্যোগী হয়নি পরিবেশ রক্ষার কথা ভেবে এমন একটি ব্যবস্থায়। বর্তমান ও ভবিষ্যতের জলসংকটের মোকাবিলায় দক্ষিণ দিনাজপুরের কোনও স্কুলই ভাবেনি বৃষ্টির জল ধরে রাখার এমন একটি ব্যবস্থার কথা। এই পরিবেশবান্ধব বিদ্যালয়টির নাম গঙ্গারামপুরের ‘প্রমোদ দাশগুপ্ত স্মৃতি বিদ্যাপীঠ’। ২০১০ থেকে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের জন্য স্কুলটি তৈরি করে ফেলল কুড়ি হাজার লিটারের একটি বৃষ্টির জল সংরক্ষণ পাত্র বা রিজার্ভার।
ছবি: তুহিনশুভ্র মন্ডল
শুধু তাই নয়, বর্তমানে এই জল পরিশোধন করে তাকে পানীয় জলে রূপান্তরিত করা হয়েছে, তা পান করছে বিদ্যালয়ের সমস্ত ছাত্রছাত্রী। কী ভাবে এমন একটি ব্যবস্থা করা হল? প্রধান শিক্ষক দিব্যেন্দু সরকার বললেন, বেলবাড়ি অঞ্চলের এই স্কুলটির সংলগ্ন বিষ্ণুপুর, দুর্গাপুর গ্রামগুলি ফ্লোরাইড-আক্রান্ত। আমাদের স্কুলের ছাত্রছাত্রী সহ গ্রামবাসীদের নিরাপদ পানীয় জলের খোঁজ দিতেই এমন ভাবনা। এ ছাড়া জলসংকটের মোকাবিলায় বৃষ্টির জল ব্যবহারের দিকটি তো রয়েইছে। ২০০৯-’১০-এ স্যানিটেশন টাস্ক ফোর্স-এর শিক্ষণ-কর্মশালায় যে সব স্কুল যোগ দিয়েছিল, তাদের মধ্যে একমাত্র পরিবেশ বাঁচানোর কাজে উদ্বুদ্ধ এই স্কুলটি চায়, বৃষ্টির জল সংরক্ষণের ভাণ্ডারটির আয়তন বাড়াতে, চায় পাশের গ্রামের মানুষও যাতে নিজেদের বাড়িতে বিভিন্ন আধারে বৃষ্টির জল সঞ্চয়ে উদ্যোগী হন। জয়ন্ত আচার্য, সনাতন তামলি সহ বিদ্যালয়ের ১৮ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা-শিক্ষাকর্মীর এখন মূল লক্ষ্য বিদ্যালয়ের ৯৫০ জন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নাগরিককে বিন্দু বিন্দু বৃষ্টির জল সঞ্চয়ের পাঠদান।

অবহেলিত
রামাবতী থেকে আমাতি নামের উৎপত্তি। আমাতি উত্তর দিনাজপুর জেলার ইটাহার থানার একটি গ্রাম। অদূরে মহানন্দা নদী। কথিত আছে, পাল যুগে সেখানে ভীমাখালে রামপাল কৈবর্তরাজ ভীমকে পরাজিত করে নিহত করেন, তার পর তিনি সেখানে তাঁর রাজধানী স্থাপন করেছিলেন। আর সেই নগরের প্রবেশদ্বারে স্থাপিত ছিল সেনাশিবির, যা আজ কোটবাড়ি নামে পরিচিত।
ছবি: বৃন্দাবন ঘোষ
সে দিনের উত্তর হট্ট, পূর্ব হট্ট ও মদৈহট্টে প্রচুর জিনিসপত্র আমদানি-রফতানি হত। আজকের উত্তরহাট, পূর্বহাট ও মাধাইহাট তার নামান্তর। সেখানে হাট আর বসে না। নগরে দোসতীনো, কাজলদিঘি, গাবরা নামে ছোট বড় বহু জলাশয় খনন করা হয়েছিল। আমাতি গ্রামের বহু পুরনো মাটির ঢিবির পাশে সে-সব জলাশয় আজও দেখা যায়। নগরের মন্দিরে মন্দিরে পূজিত হত বহু দেবদেবীর মূর্তি। অবহেলায় পড়ে থাকা বৌদ্ধচক্রটি তার পরিচয় বহন করে থাকে। সে কালের চাষবাস, শিক্ষাদীক্ষা, ধর্মচর্চা, রাজ্য শাসনের কেন্দ্রটি আজ পুরোপুরি অবহেলার শিকার। তার পরেই দিনে দিনে যে যার মতো করে তার অমূল্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলি আত্মসাৎ করছে। চেষ্টা করলে এই নগরীর হৃত গৌরব কি রক্ষা করা যায় না?

চড়কমেলা
এ বছরেও কোচবিহার জেলার মাঘপালা অঞ্চলের ঝাউবাড়ি গ্রামে চড়ককে কেন্দ্র করে সাত দিন ব্যাপী ৬৫ বছরের বিশাল ঐতিহ্যবাহী মেলা অনুষ্ঠিত হল। মেলা স্থানের উত্তরপ্রান্তে গৌরীপাটে শিবমূর্তি শয়ান ও ত্রিশূল উন্মোচিত পাটমন্দির অবস্থিত। কথিত আছে, মেলার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক স্বর্গীয় গঙ্গাচরণ সরকার ও ভবানী হালদার ১৯৫৬-য় গৌরীপাটটি সুদূর নবদ্বীপ থেকে আনয়ন করেন। গৌরীপাটটি নিম কাঠের, কারিগর মনোহর সূত্রধর।
ছবি: সুশীল ভৌমিক
মেলায় সাত দিনে প্রায় দেড় লক্ষ লোকের সমাগম ঘটে, মেলাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের নাচ-গানের আসর বসে, যেমন বাউল, পদাবলি, যাত্রা ইত্যাদি। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত ও ভিন রাজ্য থেকেও গায়কেরা এই মেলায় এসে থাকেন। সাধারণত চড়কের গাছ শিমুল কাঠের হয়, কিন্তু এ মেলায় চড়কগাছটি তেঁতুল কাঠের তৈরি এবং সেটি চড়কের পর একটি জলা জায়গায় ডুবিয়ে রাখা হয় এবং পরের বার তুলে এনে আবার চড়কে লাগানো হয়। মেলার আকর্ষণ এতটাই যে, এলাকার মেয়েরা পুজোয় বাপের বাড়ি না এসে এই মেলার সময় আসেন।

নিবেদিতপ্রাণ
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বংশীহারি ব্লকের সাঁওতাল অধ্যুষিত গ্রাম চটকাহার। এই গ্রামেরই বাসিন্দা ভোজরাই হেমরম আদিবাসী সমাজে শিক্ষার প্রসারে কাজ করে চলেছেন বহু বছর। প্রচারবিমুখ মানুষটি রাজ্য সরকারের নদীসেচ প্রকল্পের এক জন কর্মচারী, অবসরের দুয়ারে। বাড়ির সামনে বলিপুকুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছোট মাঠের এক কোণে আমগাছের ছায়ায় সকাল-বিকাল তাঁকে দেখা যায় সৃষ্টির নেশায়, কবিতা-প্রবন্ধ-গল্পের আঙিনায়।
সাঁওতালি ভাষায় লিখেছেন কবিতা ও গানের বই বারোটি। প্রবন্ধের বই তিনটি। ছোটদের জন্য ছড়ার বই ‘গিদা’। তাঁর কাব্যগ্রন্থ ‘সাঁদেশ’ স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষার সিলেবাসভুক্ত। রাঁচি (ঝাড়খণ্ড) বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর কবিতা পাঠ্য। বাংলা ভাষাতেও তাঁর দখল অপূর্ব। রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের কিছু কবিতার অনুবাদ করেছেন সাঁওতালি ভাষায়। সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলা কবিতার বই কালের প্রবাহে। স্থানীয় কয়েকটি সংস্থা তাঁকে সংবর্ধনা দিয়েছে। ২০০৪-এ তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে তাম্রপত্র ও সাম্মানিক দিয়ে সংবর্ধিত করেন। ওঁর লেখা প্রকাশ করতে কোনও প্রকাশনই এগিয়ে আসেনি।
নিজের টাকায় নিজের উদ্যোগে স্থানীয় প্রেস থেকে নিজের সৃষ্টি প্রকাশ করেন মাঝে মাঝে। কোনও অভিমান নয়, ক্ষোভ নয়, আপনভোলা এই আদিবাসী লেখক জীবনযাপন করেন অতি সাধারণ ভাবে। জেলার সংস্কৃতি ও সাহিত্য চর্চাকেন্দ্র বুনিয়াদপুর সাহিত্যবাসর-এর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন, তাঁর কবিতা ইত্যাদি প্রকাশিত হয় কবিতাজগৎ, চষেল, রুদোক প্রভৃতি পত্রিকায়। সাহিত্যচর্চায় নিবেদিতপ্রাণ এই প্রবীণ আদিবাসী লেখক।
ছবি: গোবিন্দ তালুকদার
Previous Story Uttarbanga First Page



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.