|
|
|
|
পরিষেবায় ‘নেই-রাজ্য’,
নিত্য দুর্ভোগ গার্ডেনরিচ হাসপাতালে
পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায় • কলকাতা |
মমতা দেখুন |
|
|
|
অস্ত্রোপচার: হয় না। সিজার: হয় না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক: এক জনও নেই। অ্যাম্বুল্যান্স: একটাও নেই। পানীয় জল: লাইন নেই। এক্স রে: হয় না। আল্ট্রাসোনোগ্রাফি ও ইসিজি: হয় না। রক্ত পরীক্ষা: শুধু এইচআইভি ও ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে হয়। |
প্রত্যন্ত গ্রামের কোনও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র নয়, এই চিত্র কলকাতার গার্ডেনরিচ স্টেট জেনারেল হাসপাতালের।
মাসখানেক আগে বাঘা যতীন হাসপাতালে আচমকা পরিদর্শনে গিয়ে দেরিতে আউটডোর শুরু এবং চিকিৎসকের অভাব দেখে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে। মেডিক্যাল কলেজগুলিতে রোগীর চাপ কমাতে বাঘা যতীন হাসপাতালের পাশাপাশি বিদ্যাসাগর, গার্ডেনরিচ, বিজয়গড় স্টেট জেনারেলের মতো হাসপাতালগুলির হাল ফেরাতেও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিলেন মমতা।
কিন্তু এর পরেও বিন্দুমাত্র বদলায়নি গার্ডেনরিচ স্টেট জেনারেল হাসপাতালের ছবিটা। ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকার এই হাসপাতাল এখন মূলত একটাই কাজ করে। কী সেই কাজ? চিকিৎসকেরা জানান, এসএসকেএম এবং ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে রোগী ‘রেফার’ করাই এখন তাঁদের প্রধান কাজ।
মাস আটেক আগে এই হাসপাতালের শয্যা-সংখ্যা ১৫ থেকে বাড়িয়ে ৬৮ করে স্বাস্থ্য দফতর। সেই সঙ্গে চিকিৎসক-সহ মোট ৪০ জন নতুন কর্মীর পদও অনুমোদিত হয়। কিন্তু এক জনও যোগ দেননি। মুখ্যমন্ত্রীর বাঘা যতীন হাসপাতাল পরিদর্শনের পরে আবার গার্ডেনরিচকে নিয়ে তেড়েফুঁড়ে ওঠে স্বাস্থ্য দফতর। এ বার স্ত্রীরোগ-বিশেষজ্ঞ ও শিশুরোগ-বিশেষজ্ঞ মিলিয়ে মোট পাঁচ জন চিকিৎসককে গার্ডেনরিচে নিয়োগের সরকারি নির্দেশ জারি করা হয়। তার পরে এক মাস হতে চলল, তাঁদের এক জনও অবশ্য হাসপাতালে কাজে যোগ দেননি।
ফলে এই স্টেট জেনারেল হাসপাতালে রোগীরা এখন জ্বর, পেটব্যথা, আন্ত্রিক ও ম্যালেরিয়ার মতো রোগ হলে চিকিৎসা পান। এ ছাড়া, শুধুমাত্র স্বাভাবিক প্রসব হলেই পরিষেবা দিতে পারে হাসপাতাল। কিন্তু মা অথবা সদ্যোজাতের কোনও রকম শারীরিক জটিলতা দেখা দিলে অন্য হাসপাতালে ‘রেফার’ করে দেন চিকিৎসকেরা।
হাসপাতালের উন্নতির জন্য দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মহলে দাবি জানিয়ে আসছে গার্ডেনরিচ নাগরিক পরিষদ। পরিষদের সহ-সম্পাদক কুশল দেবনাথ বলেন, “বছরখানেক আগে হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার পর্যন্ত ছিল না। বর্তমানে পাঁচ জন চিকিৎসকের মধ্যে দু’জন কাজ করেন। বাকিরা আসেনই না। হাসপাতালের ভিতরে অবাধে ঘুরে বেড়ায় ছাগল, কুকুর।”
গার্ডেনরিচ হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য দফতরের অফিসার বিশ্বরঞ্জন শতপথী এ নিয়ে বিশদে কিছু বলতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, “শয্যা ও পরিকাঠামো বাড়ানো হচ্ছে। তবে এত দিন কেন তা হয়নি, বলতে পারব না।”
হাসপাতালের এই দুরবস্থার কথা মেনে নিয়েছেন সুপার নিলয় চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, “রেডিওলজিস্ট, ল্যাব টেকনিশিয়ান, এক্স-রে মেশিন অপারেটরই নেই। পরীক্ষা হবে কী করে? যন্ত্রপাতি রাখার জায়গারও খুব অভাব।”
অভাব মিটবে কবে, তা অবশ্য জানেন না কেউই। |
|
|
|
|
|