দলবল নিয়ে যুবককে অপহরণ করে ধৃত তরুণী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বনগাঁ ও বারাসত |
দলবল নিয়ে এক যুবককে অপহরণ করে ‘মুক্তিপণ’ আদায়ের সময় রেল পুলিশের ধরা পড়ে গেল বছর বাইশের এক তরুণী। গ্রেফতার করা হয়েছে তার মা ও বোন-সহ আরও তিন জনকে। সোনালি পোদ্দার নামে ওই তরুণী বনগাঁর নয়াগোপালগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা। বারাসতের নবতীর্থে মাস কয়েক আগে বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল সে। সঙ্গে শাহি নামে এক যুবক থাকত। যাকে নিজের স্বামী বলেই পরিচয় দিয়েছিল সোনালি। একটি শিশুও ছিল তার।
শাহি মাঝেমধ্যেই বাড়িতে থাকত না। বাড়িওয়ালা অমিত রায়চৌধুরীরা দেখেন, সোনালির কাছে নিয়মিত বাইরের লোক যাতায়াত করছে। ‘মধুচক্র’ চলছে মনে করেন পাড়ার লোকজনও।
|
|
অপহরণের অভিযোগে ধৃতেরা। বাঁ দিকে সোনালি। |
গত শনিবার স্থানীয় ক্লাবের ছেলেরা এবং এলাকার কিছু বাসিন্দা সোনালিকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। এলাকার দুই দুষ্কৃতী তার ছেলের গলা থেকে সোনার চেন খুলে নেয় বলে ধরা পড়ার পরে রেল পুলিশকে জানিয়েছেন ওই তরুণী। তার কাছ থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা লুঠ করা হয় বলেও অভিযোগ। ওই টাকা ‘ফেরত’ পেতেই অপহরণের ফন্দি মাথায় আসে তার।
রবিবার অমিতবাবুকে টেলিফোনে সোনালি ও শাহি জানায়, তারা একটি ল্যাপটপ ফেলে এসেছে। সেটি ফেরত পেতে চায়। কিন্তু বারাসতে গেলে তাদের মারধর করা হতে পারে। ঠিক হয়, ল্যাপটপ ফেরত দেওয়া হবে বামনগাছি স্টেশনে। সেই মতো রবিবার অমিতের বাবা অশোকবাবু ছেলের বন্ধু সন্দীপকে সঙ্গে নিয়ে বামনগাছি স্টেশনে আসেন।
|
অমিতবাবুরা রেল পুলিশকে জানিয়েছেন, সকাল তখন প্রায় ৮টা। সন্দীপকে মোবাইলে সোনালি জানায়, স্টেশনের ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মের শেষ মাথায় দাঁড়িয়ে আছে একটি বাচ্চা মেয়ে। তার হাতেই ল্যাপটপটি তুলে দিয়ে মেয়েটিকে প্ল্যাটফর্মের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা একটি গাড়িতে তুলে দিতে হবে। সন্দীপ গাড়ির কাছাকাছি যেতেই জনা কয়েক যুবক তাঁকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে পালায়। এই দৃশ্য দূর থেকে দেখে ভয়ে গা-ঢাকা দেন অশোকবাবু।
কিছু ক্ষণের মধ্যেই ফোন যায় অমিতবাবুর কাছে। তিনি কলকাতায় একটি শপিং মলের |
অপহৃত সন্দীপ। |
|
ম্যানেজার। বলা হয়, সন্দীপের মুক্তিপণ বাবদ ৬০ হাজার টাকা দিতে হবে। পুলিশকে জানালে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। অমিতবাবু যোগাযোগ করেন বারাসত জেলা আদালতের আইনজীবী গৌরাঙ্গ পালের সঙ্গে। তিনি ঘটনাটি জানান বারাসত জিআরপিকে। টাকা নিয়ে রবিবার রাত ১০টা নাগাদ বনগাঁ স্টেশনে আসতে বলা হয়েছিল অমিতকে। জিআরপি-র পরামর্শ মতোই তিনি টাকার ব্যাগ নিয়ে পৌঁছে যান। অমিতকে স্টেশনের পাশে একটি জায়গায় আসতে বলা হয়। বনগাঁ জিআরপি-র ওসি কৃষ্ণগোপাল মালাকারের নেতৃত্বে রেলপুলিশ সেখান থেকেই ধরে সোনালি, তার মা-বোন এবং জামাইবাবু অজিতকে। পাশের একটি অন্ধকার জায়গায় হাত-পা-মুখ বেঁধে ফেলে রাখা হয়েছিল সন্দীপকে। উদ্ধার করা হয় তাঁকে। পরে স্থানীয়রা ভাঙচুর চালায় সোনালির বাড়িতে।
কিন্তু কে এই তরুণী? তদন্তে নেমে রেল পুলিশের হাতে একাধিক তথ্য এসেছে। কাগজে ‘ম্যাসাজ পার্লারের’ বিজ্ঞাপন দিয়ে ‘খদ্দের’ ধরত শাহি ও সোনালি। তাদের কাউকে কাউকে নিয়ে ‘দল’ খুলে ফেলেছিল ওই তরুণী। মধুচক্র চালানোর পাশাপাশি দলের ছেলেদের নিয়ে নানা অপরাধমূলক কাজকর্মে জড়িয়ে পড়ে সে। ঠিক কী ধরনের অপরাধ সোনালিরা ইতিমধ্যে সংগঠিত করেছে, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে রেলপুলিশ।
পুলিশ জেনেছে, এই বয়সেই বেশ কয়েক বার বিয়েও করেছে সোনালি। যদিও বনগাঁর বাড়িতে বাইরের বহু লোকের যাতায়াত ছিল। পাড়া-প্রতিবেশীরা আপত্তি জানানোয় ইদানীং বাড়িতে থাকত না। তার কাছ থেকে একাধিক যুবকের নানা ধরনের সচিত্র পরিচয়পত্র পেয়েছে রেল পুলিশ। ধৃতদের সোমবার বারাসত মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক সকলকে ১৪ দিন জেলহাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
|
সুদীপ ঘোষের তোলা ছবি। |
|