|
|
|
|
সম্পাদক সমীপেষু... |
শুরু করেছিল কিন্তু ওলন্দাজরা |
অমিতাভ ঘোষের ‘রিভার অব স্মোক’ নিয়ে উক্ত লেখকের সঙ্গে আলাপচারিতা করে গৌতম চক্রবর্তীর ‘ফেয়ারলি সাহেবের টাকাও আফিম থেকে’ (১৯-৬) পড়ে সাধারণ পাঠকের মনে হতে পারে যে, ইংরেজরাই চিন দেশে আফিম রফতানির পথপ্রদর্শক ও মূল উদ্যোক্তা। এর মূল কান্ডারি কিন্তু ওলন্দাজরা। সপ্তদশ শতকের আশির দশক থেকে মূলত ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিই দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় আফিম রফতানি করত। এই বাণিজ্যে ইংরেজ বা ফরাসি কোম্পানির কোনও ভূমিকাও ছিল না। হল্যান্ডের দ্য হেগ শহরে রাজকীয় মহাফেজখানায় রক্ষিত ও ডাচ ভাষায় লেখা ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নথিতে তার বিশদ বিবরণ পাওয়া যায়। বাংলায় ডাচ কোম্পানির ডিরেক্টররা এখান থেকে অন্যত্র বদলি হয়ে চলে যাওয়ার আগে তাঁদের উত্তরসূরিদের জন্য বিস্তারিত রিপোর্ট (‘মেমরিজ’) লিখে যেতেন। স্মৃতিকথা নয়, এগুলি তাঁদের উত্তরসূরিদের অবগতির জন্য বাংলার অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক সব বিষয়ের প্রেক্ষাপট সম্বন্ধে বিস্তারিত বিবরণ, যা বাংলার বিশেষ করে অর্থনৈতিক ইতিহাসের জন্য অমূল্য আকর। এ সব নথি থেকে জানা যায় যে, সুবে বাংলায় সবচেয়ে বেশি এবং সবচেয়ে উৎকৃষ্ট আফিম উৎপন্ন হত বিহারে। যদিও বাংলার রংপুরেও কিছু নিম্নমানের আফিম হত। |
|
১৬৮৮ সালের একটি ডাচ তথ্য অনুযায়ী বিহারের ৪৮টি পরগনাতে স্বাভাবিক বছরে আনুমানিক ৮৭০০ মন আফিম তৈরি হত। যার মধ্যে ৫,৪০০ মন অতি উৎকৃষ্ট মানের। ডাচ ডিরেক্টর শিকটারমান তাঁর মেমোরিতে ১৭৪৪ সালে লিখছেন যে, সে বছর বিহারে ৮০০০ মন আফিম উৎপন্ন হয়। আর এক জন ডিরেক্টর টেলেপার্ট-এর বিবরণ অনুযায়ী ১৭৫৫ সালেও বিহারে ৮ হাজার মন আফিম উৎপন্ন হয়, যার মধ্যে ডাচরা কেনে ৩,৪০০ মন। ইংরেজ ও ফরাসিরা ১৬০০ মন, ভারতীয় ব্যবসায়ীরা ২০০০ মন আর স্থানীয়রা ১০০০ মন। টেলেপার্ট জানাচ্ছেন, বিহারের মধ্যে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট আফিম তৈরি হত আরা, পটনা, শরণ, ফুতওয়াড়ি, মুজির (মুঙ্গের), জাহানাবাদ প্রভৃতি জেলায়। ভাগলপুর ও পূর্ণিয়াতে যে সব আফিম হত তা নিম্নমানের। ডাচরা বাংলা থেকে আফিম পাঠাত মূলত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তাদের প্রধান কার্যালয় ইন্দোনেশিয়ার বাটাভিয়াতে। সেখান থেকে এই আফিম চলে যেত ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন দ্বীপপুঞ্জে আর সেখান থেকে চিনদেশে। ইংরেজ ও ফরাসিরা আফিম রফতানি করত চেন্নাই উপকুলে, সুরাত, মালব আর মালাস্কাতে। ভারতীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল মারোয়াড়িরা। কিন্তু ১৭৫৭ সালে ইংরেজদের বাংলা বিজয়ের পর তারা আস্তে আস্তে বাংলার রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে বহির্বাণিজ্য অন্তর্বাণিজ্য সব কিছু নিজেদের কুক্ষিগত করে নেয়। ফলে, আফিম রফতানিও। যার পরিমাণও তখন অনেক বেড়ে যায়। এ নিয়ে বিশদ আলোচনা আছে আমার ‘ফ্রম প্রসপারিটি টু ডিক্লাইন’ বেঙ্গল ইন দ্য এইটিন্থ সেঞ্চুরি’ (মনোহর, নিউদিল্লি, ১৯৯৫) গ্রন্থে। পূর্বোক্ত রচনায় লেখা হয়েছে যে, চা আর চিনি রফতানির টাকা দিতে দিতে ব্রিটেন ক্রমে দেউলিয়া হয়ে পড়ছিল দেখেই সোনা রুপোর বদলে আফিম। এটা কিন্তু ঠিক নয়। বাংলার রাজস্ব থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়েই ইংরেজরা তথাকথিত ‘চায়না ট্রেড’ চালাত আর সে বাণিজ্যের যা লাভ হত তা সোজা চলে যেত ইংল্যান্ডে। আর এ ভাবেই অষ্টাদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলা থেকে যে ধন নিয়ন্ত্রণ শুরু হয়, তার একটি হত দ্বীপের সঙ্গে বাণিজ্যের মাধ্যমে। |
সুশীল চৌধুরী। ভূতপূর্ব চেয়ার-প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় |
মাস পয়লা বেতন |
রাজ্যের শিক্ষকদের মাসের ১ তারিখে বেতন পাওয়ার ন্যায্য দাবি বহু দিন পর পূরণ হওয়ার জন্য মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। এই প্রসঙ্গে যে সরকারি আদেশ স্কুলে স্কুলে পাঠানো হয়েছে তাতে প্রত্যেক শিক্ষকের নামে কোর ব্যাঙ্কিংয়ের আওতাভুক্ত ব্যাঙ্কে জিরো ব্যালান্স অ্যাকাউন্ট খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মোট বেতন থেকে পি এফ, প্রফেশনাল ট্যাক্স, ইনকাম ট্যাক্স কেটে নিট বেতন সরাসরি শিক্ষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়বে। স্কুলের অ্যাকাউন্টে আর বেতনের টাকা জমা পড়বে না। এই ব্যবস্থায় কতকগুলি সমস্যার সৃষ্টি হবে।
১) প্রায় সব স্কুলেই GSLI LIC Co-op প্রভৃতির মাসিক কিস্তি বেতন থেকে কেটে সংশ্লিষ্ট সংস্থায় জমা দেওয়া হয়। কিন্তু নির্দেশে বলা হয়েছে, মোট বেতন থেকে পি এফ, পি ট্যাক্স, ইনকাম ট্যাক্স ছাড়া আর কোনও টাকা কাটা হবে না। ১৯৮৯ থেকে জি এস এল আই প্রকল্পে মাসিক ৪০ টাকা কাটানো বাধ্যতামূলক করা হয়। এখন এই প্রকল্পে কাটা টাকা কী ভাবে জমা হবে তার কোনও উত্তর মেলেনি। এল আই সি-র প্রিমিয়ামের টাকা জমা দেওয়াও নতুন ব্যবস্থায় সম্ভব হবে না।
২) প্রতি মাসে বেতন বাবদ যে টাকা চাওয়া হয় তা ঠিক পাঠানো হল কি না, তা এখন যাচাই করা সহজ হবে না। ফলে, স্কুল অডিটের সময় সমস্যা সৃষ্টি হবে। তা ছাড়া ভুল করে কোনও শিক্ষকের বেতন কম বা বেশি দেওয়া হলে তা সংশোধন করা কঠিন হবে।
৩) বেতন বই এক গুরুত্বপূর্ণ নথি। পেনশনের সময় প্রয়োজন হলে বেতনক্রম যাচাই করে নেওয়া হয় বেতন বই থেকে। এখন থেকে বেতন বই রাখার কোনও প্রয়োজনীয়তা থাকবে না। ফলে, পেনশনের সময় জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তা ছাড়া এত দ্রুত এই ব্যবস্থা চালু করতে বলা হচ্ছে, তা কার্যত সম্ভব নয়।
আমার প্রস্তাব:
১) জি এস এল আই, এল আই সি-র প্রিমিয়াম এবং কো-অপারেটিভের ঋণের কিস্তি বাবদ টাকা শিক্ষকদের বেতন থেকে কেটে স্কুলের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হোক। যাতে স্কুল সংশ্লিষ্ট সংস্থায় ওই টাকা পাঠিয়ে দিতে পারে।
২) প্রতি মাসে বেতন অনুদান বাবদ মোট কত টাকা বরাদ্দ হল তার মেমো স্কুলকে দেওয়া হোক।
৩) জিরো ব্যালান্স অ্যাকাউন্টে নমিনি রাখার সুযোগ দেওয়া হোক।
|
অমলকুমার ঘোষ। শিক্ষক, হরিনাভি ডি ভি এ এস হাইস্কুল।
|
আর অন্য অন্য সব কলেজ?
|
প্রেসিডেন্সি কলেজ যা অধুনা বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত, তার মানোন্নয়নের জন্য অমর্ত্য সেনের নেতৃত্বে অতি বিখ্যাত বিদ্বজ্জনদের নিয়ে একটি মেন্টর গ্রুপ তৈরি হয়েছে। একটি জায়মান বিশ্ববিদ্যালয়ের উৎকর্ষ বিধানে সরকারের এই পদক্ষেপ অবশ্যই অভিনন্দনযোগ্য এবং আশা করি এঁদের পরামর্শ ও তত্ত্বাবধানে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় অচিরেই সেই অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছবে। এ নিয়ে কোনও মতান্তর নেই, কিন্তু বিচলিত হচ্ছি সরকারের কিছুটা একদেশদর্শী মনোভাবের কারণে। একদেশদর্শী, কেননা গত কয়েক বছরে নতুন যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পত্তন হয়েছে, তা কি সৃষ্টিলগ্নের কাল থেকেই এমন উৎকর্ষে পৌঁছে গিয়েছে যে তাদের নিয়ে ভাবনা-চিন্তার অবকাশ নেই? উচ্চশিক্ষামন্ত্রীকে অনুরোধ, তিনি গৌড় বা বারাসত নামাঙ্কিত নব বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পরিকাঠামোর হালহকিকত একবার দেখে আসুন, তা হলে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে উচ্চকিত প্রচারকে একতরফা বলেই মনে হবে।
শুধু এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিই বা কেন, কলকাতা এবং তার বাইরের অনেক সরকারি বা বেসরকারি কলেজের নানা বিভাগ তৎকালীন প্রেসিডেন্সি কলেজের সেই সব বিভাগের সঙ্গে তুল্য ও উপমেয় ছিল। প্রেসিডেন্সি কলেজের যেমন অবনমন ঘটেছে, এ সব কলেজেরও তাই। তা হলে উৎকর্ষ সাধনের সদিচ্ছায় এরা ব্রাত্য কেন? ইংরেজ সরকার একটি এলিট গ্রুপ তৈরি করতে চেয়েছিল যারা তাদের বশংবদ হয়ে থাকবে। দেশ প্রশাসনে তাদের সাহায্য করবে। রাজকোষ সে জন্য বরাবরই অবারিত ছিল প্রেসিডেন্সির জন্য। এক বর্ণভেদ প্রথার সৃষ্টি হয়েছিল এরই সুবাদে। ‘সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলিতেছে’। শরীরের একটিমাত্র অঙ্গের শ্রীবৃদ্ধিতে দেহ পুষ্ট ও সবল হয় না। সমাজের আকুল তৃষ্ণা নিবারণে প্রয়োজন স্বচ্ছ ও পেয় জলাশয়ের আধিক্য। শুধুমাত্র সুদৃশ্য এক কলসে রাখা কয়েক গণ্ডূষ জলে তা মেটে না। |
পুলক লাহিড়ী। বালিগঞ্জ প্লেস, কলকাতা-১৯
|
২ |
প্রেসিডেন্সি কলেজ (থুড়ি, বিশ্ববিদ্যালয়)’কে নিয়ে আবেগ, উচ্ছ্বাস ও উদ্দীপনার বন্যা বইছে, সে প্রসঙ্গে আমার এই প্রতিবেদন।
একটি কলেজকে রাতারাতি বিশ্ববিদ্যালয়ের তকমা পরিয়ে দিলেই তা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে যায় না। গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকে আমার ছাত্রাবস্থায় এই কলেজ তখনকার কলকাতার স্বল্প সংখ্যক ভাল কলেজের একটি ছিল, কিন্তু কোনও ভাবেই তা অন্যান্য বা অদ্বিতীয় নয়। আমি স্নাতকস্তর পর্যন্ত সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের ছাত্র ছিলাম। পরে স্নাতকোত্তর স্তরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান কলেজে ছাত্রাবস্থায় সপ্তাহে দু’দিন প্রেসিডেন্সি কলেজে ক্লাস করতে হত। সেই সময় যাঁরা ওখানে রসায়ন পড়াতেন, তাঁদের যোগ্যতা এবং দক্ষতা আহামরি ছিল না।
পরবর্তী কালে ১৯৭০ থেকে ১৯৯৪ কাল পর্যন্ত বিজ্ঞান কলেজে অধ্যাপক রূপে কাজ করার সময়, অন্তত রসায়নের পঠনপাঠনে প্রেসিডেন্সিতে যে অবনতি হয়েছিল, তার যে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আমার আছে, তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। |
দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা-৫৪ |
|
|
|
|
|