|
|
|
|
মুম্বই বিস্ফোরণে পটনায় ধৃত ১ |
নজরে কলকাতার হারুন, আটক দক্ষিণ দিনাজপুরের যুবক |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
বিস্ফোরণের তদন্তে নেমে মুম্বই পুলিশ হারুন নামে কলকাতার এক যুবককে খুঁজছে। ওই তদন্তে মুম্বই পুলিশকে সাহায্য করছে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)।
এসটিএফ সূত্রের খবর, কয়েক বছর আগে গুজরাত পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিল কলকাতার বাসিন্দা হারুন। পরে জামিনে মুক্তিও পায় সে। জুন মাসে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন (আইএম)-এর সদস্য সন্দেহে দানিশ রিয়াজকে গ্রেফতার করে গুজরাত পুলিশ। মুম্বই বিস্ফোরণে এ বার ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের নাম জড়ানোয় গুজরাত পুলিশ জেলে গিয়ে দানিশকে জেরা করে। সেখানে হারুনের নাম উঠে আসে। সেই সূত্রে মুম্বই পুলিশ কলকাতা পুলিশের এসটিএফ-কে হারুনের কথা জানায়। কিন্তু এই মুহূর্তে হারুন কোথায়, সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট তথ্য নেই কলকাতা পুলিশের হাতে। হারুনও ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের সদস্য বলে এসটিএফ-এর সন্দেহ।
এসটিএফ সূত্রের খবর, বেনিয়াপুকুরের মফিদুল ইসলাম লেনের উপরে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ওই রাস্তাতেই বাড়ি ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আসিফ রেজা খানের। গুজরাত পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বছর ১০ আগে মৃত্যু হয়েছিল তার। আসিফের ভাই আমির বর্তমানে দুবাইয়ের বাসিন্দা। তার সঙ্গেও ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে জানিয়েছে এসটিএফ। তাই আসিফ ও আমিরের ঘনিষ্ঠদের উপরে নজরদারি বাড়িয়েছে এসটিএফ।
মুম্বই বিস্ফোরণ-কাণ্ডে নাম জড়িয়ে গিয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুরের এক যুবকেরও। রবিবার বিহারের কিষানগঞ্জ থেকে ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আটক করা হয় রিয়াজুদ্দিন খান ওরফে আকাশ শেখ ওরফে রিয়াজুল সরকারকে। তার বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর থানার ফুলবাড়ি এলাকায় নাকোড় গ্রামে। যদিও বিহার পুলিশ সোমবার তাকে বিদেশি আইনে গ্রেফতার করে। কারণ, প্রাথমিক ভাবে তাকে বাংলাদেশের নাগরিক বলেই সন্দেহ করে তারা। গ্রেফতার করা হয়েছে রিয়াজুদ্দিনের বাড়িওয়ালা মহম্মদ মেহতাব আলম ওরফে মুন্নাকেও।
সাদামাটা চেহারার বছর ৩৫-এর যুবক রিয়াজুল মুম্বইয়ে বেসরকারি সংস্থায় কাজ করত বলেই জানতেন এলাকার বাসিন্দারা। সোমবার তার গ্রেফতারের খবর জানাজানি হতেই হতবাক তাঁরা। শুধু তা-ই নয়, চতুর্থ শ্রেণি পাশ রিয়াজুল ইংরেজি, হিন্দি, মরাঠি-সহ ৫টি ভাষা জানে বা সে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ‘হুজি’র সদস্য শুনে অবাক তার পরিবারের লোকেরাও। জেলা পুলিশ সুপার কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় পূর্ণপাত্র বলেন, “সংবাদ মাধ্যম থেকে বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশ রিয়াজুলের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
গরিব কৃষি মজুর পরিবারের ছেলে রিয়াজুলরা পাঁচ ভাই। রিয়াজুল চতুর্থ। তার ভাইপো ইব্রাহিম সরকার বলেন, “কাকা চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত লেখা পড়া করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে বাড়িতে থাকেন না। মাঝে মধ্যে আসতেন। পরে শুনেছি মুম্বইতে একটি কোম্পানির ম্যানেজারের কাজ করতেন।” রাজ্য সড়ক থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে রেল স্টেশনের কাছে তাদের বাড়ি। মাটির দেওয়াল, টিনের ছাউনির চালা ঘর। এলাকার বাসিন্দারা অধিকাংশই চাষ আবাদ করেন। রিয়াজুলের ভাইরাও তাই করেন। বৃদ্ধা মা রাবেয়া বেওয়ার চোখে জল। তিনি বলেন, “দেড় বছর আগে রিয়াজুল বাড়িতে এসেছিল। কিছু দিন থেকে চলে যায়। বাড়িতে টাকাও পাঠায় না। কী যে হল কিছুই বুঝতে পারছি না।”
রিয়াজুদ্দিনের কাছ থেকে তিনটি মোবাইল ছাড়াও পাঁচটি সিমকার্ড উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বরও। পুলিশ সূত্রে খবর, সিম কার্ডে বিহার-ঝাড়খণ্ড ছাড়াও বাইরের বেশ কিছু নম্বরও রয়েছে। রিয়াজুদ্দিনের দুই হাতে গোল পোড়া দাগ নিয়েও ধন্দে পড়েছে পুলিশ। ওই দাগ কী ভাবে হল, তা দেখা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাবাহিনীর এক অফিসারের কথায়, “ওর দুই হাতের পোড়া দাগ দেখে প্রাথমিক ভাবে মনে হয়েছে, সিগারেট কিংবা সিগার দিয়ে ওই দাগ তৈরি করা হয়েছে।” |
|
|
|
|
|