|
|
|
|
রাজ্যের মদত ছাড়া প্রকল্প অনিশ্চিত |
কাটোয়ায় জমি মিলবে তো, সংশয়ে এনটিপিসি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
পশ্চিমবঙ্গের নতুন সরকার অধিগ্রহণের ‘অস্ত্রে’ জমি নেওয়ার পথে হাঁটতে চায় না। কিন্তু কাটোয়া তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের জমি পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার যদি সহযোগিতা না-করে, সেটির ভার হাতে নিতে রাজি নয় এনটিপিসি।
বামফ্রন্ট জমানায় স্থির হয়, ৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটি একা এনটিপিসি-ই তৈরি করবে। বর্তমান সরকারের পরিবর্তিত জমি-নীতির প্রেক্ষিতে তাই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে।
১৬০০ মেগাওয়াটের কাটোয়া তাপবিদ্যুৎ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের হাত ধরে গড়ে উঠবে বলে ঠিক ছিল। সেইমতো প্রয়োজনীয় ১১০০ একর জমির সবটাই অধিগ্রহণ করতে রাজ্যকে অনুরোধ জানিয়েছিল নিগম। প্রথম দফায় ৫৪৬ একর নিগমের হাতে এসে গিয়েছে। বাকি রয়েছে আরও প্রায় সাড়ে পাঁচশো একর অধিগ্রহণের কাজ।
তবে নিগমের সিদ্ধান্তও বদলেছে। এত বৃহৎ প্রকল্পের অর্থ সংস্থান করতে সমস্যা হবে ভেবে পিছিয়ে এসেছে তারা। তাই ডাকা হয় এনটিপিসি-কে। পূর্বতন সরকারের আমলে বোঝাপড়া হয়, কাটোয়া প্রকল্পের অর্ধেক বিদ্যুৎ পশ্চিমবঙ্গ পাবে, বাকিটা অন্য রাজ্যে রফতানি করবে এনটিপিসি।
কিন্তু নতুন জমানায় বাকি জমি পাওয়ার নিশ্চয়তা আছে তো?
সোমবার কলকাতায় বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বার আয়োজিত ‘কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক আলোচনাসভায় এই সংশয়ের সুরই শোনা গেল এনটিপিসি-র চেয়ারম্যান অরূপ রায়চৌধুরীর গলায়। যাঁর বক্তব্য: জমি অধিগ্রহণ আইনবলে রাজ্য সরকার যে আর জমি নিতে চায় না, সেটা তাঁরা শুনেছেন। রাজ্য চাইলে বাকি জমিটা তাঁরা সরাসরি কিনে নিতেও রাজি। কিন্তু তিনি এ-ও বলেন, “প্রকল্পের জন্য যে ভাবে জমির পরিকল্পনা করা হয়েছে, তাতে বেশি অদলবদল সম্ভব নয়। আগের দফার অধিগ্রহণে জমির যা দাম দেওয়া হয়েছে, সরাসরি একই দামে কিনতে হবে। কারণ, পুরনো ও নতুন জমিদাতারা ভিন্ন দাম পেলে আন্দোলন শুরু হওয়ার আশঙ্কা।”
নিগমের হাতে প্রকল্পের যতটা জমি এসেছে, আপাতত সেটুকু কি এনটিপিসি নেবে? অরূপবাবুর জবাব, “অর্ধেক নিয়ে কী লাভ? আশা করছি, বাকি জমি পাওয়ার ব্যাপারে রাজ্য আমাদের পাশে থাকবে।” এই অনিশ্চয়তা দূর করতে জমির প্রয়োজন কিছুটা কমানো যায়? এনটিপিসি-কর্তা প্রস্তাবটি আদৌ গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন না। তাঁর ব্যাখ্যা, “পুরনো হিসেবে এক মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতার জন্য এক একর জমি লাগত। এখন কমিয়ে ০.৭ একর ধরা হচ্ছে। কাজেই ১৬০০ মেগাওয়াটের প্রকল্প নির্মাণে ১১০০ একর তো লাগবেই।” আর শুধু একটা ইউনিটের প্রকল্প আর্থিক ভাবে লাভজনক হয় না বলে জানিয়ে অরূপবাবুর মন্তব্য, “করলে আটশো মেগাওয়াটের দু’টো ইউনিটই তৈরি করব।”
কাটোয়ায় জমি নিয়ে এই অনিশ্চয়তার পাশাপাশি বিদেশি কয়লার চড়া দাম সার্বিক ভাবে এনটিপিসি-র কাছে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ কোল ইন্ডিয়া প্রয়োজন মেটাতে না-পারায় বাইরে থেকে কয়লা আমদানি ছাড়া উপায়ও নেই বলে আক্ষেপ অরূপবাবুর। এবং কয়লার পিছনে বাড়তি খরচের জের বিদ্যুতের গ্রাহক-মাসুলে পড়তে বাধ্য। এ প্রসঙ্গে বিসিসিএলের চেয়ারম্যান তাপস লাহিড়ির বক্তব্য: তাঁরা ভূগর্ভস্থ খনিতে ১২০ মিটার পর্যন্ত গভীরে গিয়ে কয়লা তুলতে পারেন। আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে বেশি কয়লা উত্তোলনের লক্ষ্যে তাই এ বার বিদেশি সংস্থাদের ডাকা হচ্ছে।
কয়লা-সঙ্কট নিয়ে রাজ্যের বিদ্যুৎ-সচিব মলয় দে-র বক্তব্যেও খুব একটা আশার সুর শোনা যায়নি। মলয়বাবুর কথায়, “কয়লার দাম বেড়ে বিদ্যুৎ এমনই দামি হয়ে উঠেছে যে, বহু রাজ্যের বণ্টন কোম্পানি বিদ্যুৎ কিনতেই পারছে না! বিদেশি ও ভূগর্ভস্থ খনির কয়লার ব্যবহার যত বাড়বে, বিদ্যুৎ ততই মহার্ঘ হবে।” |
|
|
|
|
|