|
|
|
|
কুষ্ঠরোগীদের পাশে দাঁড়িয়ে বার্তা প্রশাসনের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বিষ্ণুপুর |
কুষ্ঠরোগ ছোঁয়াচে নয়। কুষ্ঠরোগীরাও কোনওভাবেই অপাংক্তেয় নন। বাকি সবার মতোই তাঁরাও সমাজেরই অংশ। কুষ্ঠরোগীদের সঙ্গে নিয়ে নানা কর্মসূচির সূচনা করে এই বার্তাই দিতে চাইলেন বাঁকুড়ার জেলাশাসক-সহ বিভিন্ন প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। রাজ্য সরকারের সামাজিক কাজের অঙ্গ হিসেবে শনিবার বিষ্ণুপুরের পিয়ারডোবার লেপ্রসি আফটার কেয়ার কলোনিতে বাসিন্দাদের উন্নয়নের জন্য নেওয়া হল কয়েকটি কর্মসূচি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত পরিত্যক্ত সেনা ছাউনিতে গড়ে উঠেছে কুষ্ঠরোগীদের এই কলোনি। ‘সমাজ-ব্রাত্য’ কুষ্ঠরোগীদের জীবনের মূল স্রোতে ফেরাতেই এই কলোনির সূচনা। ১৯৭৪ সালে বাঁকুড়ার গৌরিপুর কুষ্ঠ হাসপাতালে চিকিৎসায় সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার পরেও বিশ্বজিৎ, রাজেন, আনন্দ মাহাতোর ঠাঁই হয়নি বাড়িতে। |
 |
কলোনির পুকুরে ছাড়া হচ্ছে মাছ। ছবি: শুভ্র মিত্র। |
কলোনিতেই শুরু হয় তাঁদের নতুন জীবন। সরকারের দেওয়া সেনা ছাউনি লাগোয়া প্রায় ৬০০ বিঘা জমিতে সবজি চাষ ও ফলের বাগান গড়ে শুরু হয় জীবনধারণ। এ ভাবেই কোনওরকমে দৈনিক ৩০-৪০ টাকা উপার্জন করে বেঁচে আছেন তাঁরা।
বিষ্ণুপুরের এসডিও সুশান্ত চক্রবর্তীর উদ্যোগে সাড়া দিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাঁকুড়ার জেলাশাসক মহম্মদ গুলাম আলি আনসারি-সহ জেলার কৃষি, মৎস, স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা। লাগানো হয় প্রচুর ফলের গাছ। কলোনীর দুটি পুকুরে ছাড়া হয় মাছ। জেলাশাসক বলেন, “মাছ চাষ করে আর্থিক উন্নয়ন হতে পারে মানুষগুলির। ফলের বাগান এখানে রয়েছে। তবু ওঁদের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে আরও বেশি করে ফলের চারা লাগানো হল। জৈব সার দিয়ে কৃষি উন্নয়নেরও চেষ্টা করা হবে। আমরা এই কলোনীর বাসিন্দাদের দিয়ে তসরের রেশম কীট চাষ-সহ আরও কিছু পরিকল্পনা নিয়ে এগোবার চেষ্টা করছি।” কৃষি, প্রাণী সম্পদ ও স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরাও উন্নয়নের কাজে সামিল হয়েছেন। ছিলেন বিষ্ণুপুরের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক সুদীপ্ত সাঁতরা এবং বিষ্ণুপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অসিত মাঝিও। তাঁরাও এলাকার উন্নয়নে নানা ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা জানান।
সরকারি আধিকারিকদের কাছে পেয়ে এই কলোনির অধিবাসীরা তাঁদের বাসস্থানের দ্রুত মেরামত ও সংস্কার, আবাসিকদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য শিশু শিক্ষাকেন্দ্র ও প্রাথমিক স্কুল স্থাপন-সহ পাঁচ দফা দাবি জানান। বিষয়গুলি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন জেলাশাসক।
উল্লেখ্য, ১৯৭৪ সালে ১৭জন আবাসিককে নিয়ে গড়ে ওঠা এই কলোনির বর্তমান পরিবার সংখ্যা ২৪। দীর্ঘদিন পর জেলাশাসক-সহ বিভিন্ন সরকারি আধিকারিকদের কাছে পেয়ে খুশী কলোনির বাসিন্দারা। বললেন, “জেলাশাসক, মহকুমাশাসক আমাদের কলোনির উন্নয়নে কিছু কর্মসূচীর সূচনা করলেন। আশা করছি এর সুফল আমরা পাব। এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।” কলোনির ছোট্ট মেয়ে রিমকা শীলের মিঠে গলায়, “আনন্দলোকে মঙ্গলা লোকে...” গানে ছিল সেই অভ্যর্থনারই বার্তা। |
|
|
 |
|
|