বর্ধমান মেডিক্যাল
শিশু ওয়ার্ডে হঠাৎ আগুন, আতঙ্কে পালালেন মায়েরা
ক হাতে স্যালাইনের বোতল, অন্য হাতে কোনও মতে সদ্যোজাতকে আঁকড়ে ধরে এক মা। আতঙ্কে মুখ সাদা। কাঁপছেন থরথর করে।
তিনি একা নন। শিশুদের কোলে তুলে নিয়ে ওয়ার্ড ছেড়ে দলে দলে বেরিয়ে আসছেন মায়েরা।
রবিবার সকালে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ছবি। ঘড়িতে তখন সকাল ১০টা। আচমকাই শিশু ওয়ার্ডের স্যুইচ বোর্ডে আগুনের ফুলকি! সঙ্গে ধোঁয়া। গুজব ছড়াতে দেরি হয়নি। আতঙ্ক ছড়ায় ততটাই দ্রুত। সার দিয়ে বেরিয়ে হাসপাতালের সামনের মাঠে আশ্রয় নেন সদ্য প্রসূতিরাও। দমকল আসার আগেই অবশ্য আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়। কিন্তু তার মধ্যেই আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে গিয়েছেন শিশুদের বাবা-মায়েরা। হাসপাতালের সুপার সুবোধ ভট্টাচার্যকে ওয়ার্ড মাস্টার অফিসের সামনে ঘেরাও করেন তাঁরা। আগুনের কারণ খতিয়ে দেখছে দমকল।
কী হয়েছিল এ দিন?
আগুনের আতঙ্ক। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রবিবার উদিত সিংহের তোলা ছবি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শিশু ওয়ার্ডের স্যুইচ বোর্ডে মোবাইলে চার্জ দিতে বসান কেউ। কিছু পরেই সেখান থেকে আগুনের স্ফুলিঙ্গ বেরোতে শুরু করে। দ্রুত সেখানকার বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করে দেন হাসপাতালের কর্মীরা। কিন্তু তার মধ্যেই ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে চার দিক। শিশুদের কোলে নিয়ে দুড়দাড় করে নীচে নেমে আসেন মায়েরা। তাঁদেরই এক জন মন্তেশ্বরের পুঁটশিড়ির বাসিন্দা কল্পনা কর্মকার। বলেন, “ওয়ার্ডের ভিতরে এত ধোঁয়া বেরোচ্ছিল যে ওখানে থাকা নিরাপদ বলে মনে হয়নি। এক দিনের বাচ্চাকে নিয়ে বেরিয়ে আসি।” অম্বিকা কালনার বাসিন্দা ফিরদৌসি বিবিও অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে ওয়ার্ডের বাইরে চলে আসেন। তাঁর কথায়, “ধোয়াঁয় শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। তাই ওখানে আর থাকতে পারিনি।”
এর পরে হাসপাতালের এক দল কর্মী তাঁদের বোঝাতে শুরু করেন, তেমন কিছু ঘটেনি। এতে ওই মায়েদের অনেকেই ওয়ার্ডে ফিরে যান। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই রটে যায়, ওয়ার্ডে দাউদাউ করে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গিয়েছে একটি শিশু। আতঙ্ক ফের ছড়ায়। প্রায় সব শিশুকে নিয়ে বাইরে চলে আসেন মায়েরা। অনেককে জামাকাপড়ের ব্যাগ গুছিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে বেরিয়ে যেতেও দেখা যায়। সন্ধ্যার মধ্যে অবশ্য প্রত্যেকেই ওয়ার্ডে ফিরে এসেছেন বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
৩২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর রত্না রায়। তাঁর অভিযোগ, “হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনা অনেক পুরনো। বারবার রোগীদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়েছে। সুপারকে বলা সত্ত্বেও তিনি সমস্যা সমাধানে তেমন উদ্যোগী হননি।” বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক তথা রাজ্যের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এই শিশু ওয়ার্ডের নানা সমস্যা। শিশু মৃত্যুর সংখ্যা জানতে চেয়ে রিপোর্ট দিতে বলেছিলাম হাসপাতালের সুপারকে। সেই রিপোর্ট আজও হাতে পাইনি। আজকের ঘটনা কেন ঘটল, তা নিয়ে সুপারের কৈফিয়ত তলব করা হবে।”
সুপারের দাবি, “হাসপাতালের বিদ্যুতের লাইন পুরনো। তাই শর্ট সার্কিট থেকে এই ঘটনা বারবারই ঘটছে। মাস চারেক হল ওই তার বদলাতে বলা হয়েছে বিদ্যুৎ দফতরকে।” কেন, কাজ এখনও শুরু হয়নি, তার সদুত্তর মেলেনি। পাশাপাশি একাধিকবার আগুন লাগলেও গোটা হাসপাতালে কোনও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নেই। সুপারের আশ্বাস, সেই ব্যবস্থা করা হবে। তত দিন অবশ্য প্রাণ হাতে করেই থাকতে হবে রোগীদের। শিশুদেরও।
First Page Swasth Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.