|
|
|
|
বন্ধে অনড় কমিটি, প্রশাসনের চ্যালেঞ্জ |
সঞ্জয় চক্রবর্তী ও সৌমিত্র কুণ্ডু • শিলিগুড়ি |
চিঁড়ে ভিজল না!
আজ, সোমবার দার্জিলিং পাহাড় নিয়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সঙ্গে রাজ্যের ত্রিপাক্ষিক চুক্তির দিন বন্ধের ডাকে অনড়ই রইল বাংলা ও বাংলাভাষা বাঁচাও কমিটি সহ একাধিক সংগঠন। চুক্তির প্রতিবাদে সোমবার থেকে টানা ৪৮ ঘণ্টা শিলিগুড়ি ও লাগোয়া এলাকায় বন্ধ হবেই বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ওই সংগঠনগুলি। দিনভর শিলিগুড়িতে বৈঠকের পরে সন্ধ্যায় আদিবাসী বিকাশ পরিষদের নেতারাও সোমবার বন্ধকে নৈতিক সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছেন। তৃণমূল নেতারা অবশ্য যে যাঁর
মতো করে বন্ধ প্রত্যাহার করানোর চেষ্টা করছেন। পুলিশ-প্রশাসনও জনজীবন স্বাভাবিক রাখার সব রকম আশ্বাস দিচ্ছে। কিন্তু অশান্তির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
বাংলা ও বাংলাভাষা বাঁচাও কমিটির সভাপতি মুকুন্দ মজুমদার বলেন, “আমরা মনে করি, দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদ গঠনের চুক্তি করে সিপিএম ভুল করেছিল। তেমন আরেকটা চুক্তি কোনও ভাবেই মানা যাবে না। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে
দেখা করতে চেয়েছিলাম। তিনি আমাদের ডাকেননি। আন্দোলন চলবেই।” আদিবাসী বিকাশ পরিষদের রাজ্য সভাপতি বীরসা তিরকি বলেন, “স্বশাসিত পর্ষদের এলাকা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। আমরা এই কারণেই বন্ধকে নৈতিক সমর্থন জানাচ্ছি।
তবে আমাদের কর্মীরা রাস্তায়
নামবেন না।”
এই অবস্থায় সিঁদুরে মেঘ দেখছে পুলিশ-প্রশাসন। কারণ অভিজ্ঞতা বলছে, এর আগে বামফ্রন্টের আমলেও এই সব সংগঠনের ডাকা বন্ধে শিলিগুড়ি ও লাগোয়া এলাকা এবং মালবাজার-সহ ডুয়ার্সের কয়েকটি এলাকায় জনজীবন পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়েছে। সোমবারের বন্ধ নামে ‘বাংলা বন্ধ’ হলেও প্রশাসনিক কর্তারা ভালই জানেন, এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে শিলিগুড়ি ও সংলগ্ন অঞ্চলগুলিতে। এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের উপস্থিতিতে মোচার্র সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক চুক্তির সময়ে জনজীবন স্বাভাবিক রাখাই পুলিশ-প্রশাসনের সবেচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কঠিন পরীক্ষার মুখে সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা ভোটে উত্তরবঙ্গে ‘কর্তৃত্ব’ স্থাপন করা তৃণমূলও।
ওই চুক্তি নিয়ে তাদের আপত্তির কথা আগেই জানিয়েছে সিপিএম। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, সব দলের প্রতিনিধিদের না-ডেকে স্রেফ মোর্চার নেতাদের নিয়ে যে চুক্তি হয়েছে, তা মানা সম্ভব নয়। চুক্তির দিনে ‘কালা দিবস’ পালনের ডাক দিয়েছে আরএসপি-ও। দলের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক বিনয় চক্রবর্তী বলেছেন, “স্বশাসিত সংস্থার নাম নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে মানুষ যে-ভাবে আন্দোলনে নেমেছিলেন, এ ক্ষেত্রেও সেভাবেই সরব হবেন বলে আশা করছি।”
স্বভাবতই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। রাতেই কয়েক দফায় রাজ্যের মন্ত্রীদের সঙ্গে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের বৈঠক হয়েছে। স্কুল সূত্রের খবর, গোলমালের আশঙ্কায় বেশ কিছু বেসরকারি স্কুলের বাস মালিকদের সংগঠন রাস্তায় গাড়ি বার না-করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যে এলাকায় চুক্তি হচ্ছে, সেই দার্জিলিং মোড় লাগোয়া এলাকার কয়েকটি স্কুল ও কলেজে অলিখিতভাবে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বন্ধের জেরে শিলিগুড়িতে পিছিয়ে গিয়েছে রাজ্য বার কাউন্সিলের ভোটও। সোমবার ও মঙ্গলবার ওই ভোট হওয়ার কথা ছিল। বন্ধ ডাকার পরে কংগ্রেস-তৃণমূল প্রভাবিত শিলিগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশন এ ব্যাপারে রাজ্য বার কাউন্সিলকে ভোট পিছিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করে। ঠিক হয়েছে, আগামী ২৫ ও ২৬ জুলাই শিলিগুড়িতে ভোট নেওয়া হবে।
শিলিগুড়ির তৃণমূল বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য অবশ্যের আশা, এমন একটা ‘ঐতিহাসিক’ দিনে শিলিগুড়ির মানুষ উন্নয়নের পক্ষেই থাকবেন। তাঁর কথায়, “রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ের সমস্যা মেটাতে যে দিশা দেখিয়েছেন তাকে শিলিগুড়ির উন্নয়নকামী মানুষ অবশ্যই সমর্থন জানাবেন। সোমবার জনজীবন বিপর্যস্ত হওয়ার কোনও আশঙ্কা করছি না। রাস্তায় নেমে আমরা সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের ভরসা জোগাতে চাই।” শিলিগুড়ির জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে দলীয় সমর্থকেরা রাস্তায় নামবেন বলেও তৃণমূল সূত্রের খবর।
শনিবার শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দফতরে শহরের সমস্ত ব্যবসায়িক এবং বেসরকারি পরিবহণ সংস্থার কর্তাদের নিয়ে বৈঠক হয়। ফেডারেশন অব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, নর্থ বেঙ্গলের (ফোসিন) পক্ষ থেকে শহরের সমস্ত ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে সোমবার ব্যাঙ্ক খোলার আর্জি জানানো হয়। ফোসিনের সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “বন্ধ মানেই ছোট ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। ফোসিন তাই সমস্ত ধরনের বন্ধেরই বিপক্ষে।”
তৃণমূল বন্ধ তুলতে বদ্ধপরিকর। বাংলা ও বাংলাভাষা বাঁচাও কমিটি-সহ একাধিক সংগঠন বন্ধ সফল করতে রাস্তায় নামবে।
আজ তাই মুখ্যমন্ত্রীর সামনে প্রশাসনের ‘অগ্নিপরীক্ষা’! |
|
|
 |
|
|