|
|
|
|
মিল মমতা-পথের |
উন্নয়নই অস্ত্রের চেয়ে ধারালো, মত রমনের |
সন্দীপন চক্রবর্তী • কলকাতা |
মাওবাদী সমস্যার সমাধানে বহুমুখী কৌশলের দাওয়াইয়ের কথাই কলকাতায় এসে জানিয়ে গিয়েছেন এই মুহূর্তে দেশের সর্বাধিক মাওবাদী-অধ্যুষিত রাজ্য ছত্তীশগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহ। তাঁর মতে, শুধু পুলিশ বা আধা-সামরিক বাহিনী নয়, মাওবাদী মোকাবিলায় উন্নয়নের অস্ত্রই বেশি কার্যকরী। এ রাজ্যে জঙ্গলমহলে ঠিক যে পথ নিয়েছেন নতুন সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়।
আদিবাসী তরুণদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে স্পেশ্যাল পুলিশ অফিসার (এসপিও) হিসাবে নিয়োগ করে এবং ‘সালওয়া জুড়ুম’ তৈরি করে তারা মাওবাদীদের বলপূর্বক দমন করতে চেয়েছে এবং তাতে বিপদ আরও বেড়েছে বলে প্রভূত সমালোচনা আছে ছত্তীশগঢ়ের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের রায়ও ‘সালওয়া জুড়ুম’ এবং এসপিও-দের নিরস্ত্র করতে বলেছে। ছত্তীশগঢ় সরকার তার বিরুদ্ধে পর্যালোচনার আবেদনও করতে চলেছে সর্বোচ্চ আদালতে। কিন্তু রমনের কথায়, “নকশাল বা মাওবাদী হিংসার পরেও আমরা এগোচ্ছি। আমার সামনে বড় চ্যালেঞ্জ কিন্তু শিশুমৃত্যু, প্রসূতি মৃত্যু, অপুষ্টির হার কমানো। মাওবাদী নয়! আমরা মনে করি, মাওবাদীদের সঙ্গে লড়ে নেওয়া যাবে! কিন্তু এই ব্যাধিগুলো না-আটকালে পরবর্তী প্রজন্ম ক্ষমা করবে না।” মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে জঙ্গলমহলে প্রথম সফরে গিয়ে সেখানকার মানুষের জীবনের এই জাতীয় দৈনন্দিন সমস্যার সমাধানের উপরেই বেশি জোর দিয়েছেন মমতাও।
পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছত্তীশগঢ়ের বিজেপি সরকারের প্রশাসনিক প্রধানের আরও একটি বিষয়ে মতের মিল আছে। মমতার মতো রমনও মাওবাদী সমস্যার সূত্রপাতের জন্য কমিউনিস্টদের দায়ী মনে করেন! রমনের বক্তব্য, “নকশালবাড়ির আন্দোলনকে সাধারণ ভাবে নকশাল রাজনীতির গোড়াপত্তন ধরা হয়। কিন্তু তারও অনেক আগে তেলেঙ্গানায় কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে সশস্ত্র বিদ্রোহ, বিক্ষোভ হয়েছিল। তখনকার মতো ওই আন্দোলন দমন করা হলেও তার বীজ রয়ে গিয়েছিল।” শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কলকাতায় এসে রমন বলেছেন, অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টিতে পি সি জোশী গণতান্ত্রিক পথে সংসদীয় ব্যবস্থায় ক্ষমতা দখলের কথা বলেছিলেন। কিন্তু বি টি রণদিভের সশস্ত্র সংগ্রামের লাইন তখন বেশি গুরুত্ব পেয়েছিল। বাম বা অতি-বাম আন্দোলনে হিংসার ব্যবহারের শিকড় সেখানেই নিহিত বলে পেশায় চিকিৎসক ছত্তীশগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রীর মত।
রমনের দাবি, আদিবাসী বা মাওবাদী-অধ্যুষিত দুই জেলা বস্তার ও সরগুজার মানুষকে জোর করে অস্ত্র ধরানো হয়নি। মাওবাদীদের হাতে মার খেয়ে তাঁরাই সরকারকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন। রমনের কথায়, “বস্তারে গত ১০ বছরে ৯০ থেকে ৯৫% গ্রাম পঞ্চায়েত আমাদের হাতেই এসেছে। যেখানে ভোট দিলেই মাওবাদীদের বুলেটের ভয়, সেখানে এই ঘটনাই তো আমাদের সাফল্য!” তবে একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী স্বীকার করছেন, অস্ত্র এবং বাহিনী দিয়ে মাওবাদীদের বশে আনা যথেষ্টই কঠিন। তাঁর বক্তব্য, “এক বীরাপ্পনকে ধরতে তিনটি রাজ্যের সরকার ৪০ হাজার সেনা নামিয়েছিল! এখানে তো হাজারটা বীরাপ্পন! তা ছাড়া, ভারতের পুলিশ কখনওই গেরিলা যুদ্ধের জন্য মানসিক বা শারীরিক ভাবে প্রস্তুত নয়। এখন গেরিলা যুদ্ধের কৌশল শিখিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশ ‘গ্রে হাউন্ড’ তৈরি করেছে। আমরাও স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স গড়েছি। সরগুজার পরিস্থিতি অনেকটা ভাল। ৪০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা-বিশিষ্ট বস্তারের মানুষও সাহায্য করছেন।”
তাঁরা যে উন্নয়নের কর্মকাণ্ডে হাত দিয়েছেন, তার কথাও সবিস্তার জানিয়ে গিয়েছেন ছত্তীশগঢ়ে দ্বিতীয় দফার মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের ৩৪
লক্ষ অন্ত্যোদয় পরিবারের জন্য ৩৫ কিলো চাল সস্তায় দেওয়ার জন্য সমবায় প্রথায় কিছু বিপণি খোলা হয়েছে, যাতে চাল চুরি আটকানো গিয়েছে। সমবায় বিপণিগুলিকে সরকার আর্থিক সাহায্য করছে এবং তার মাধ্যমেই
সরকারের সঙ্গে আদিবাসী জনতার যোগসূত্র নিবিড় করার চেষ্টা হচ্ছে। স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নতি ঘটানো হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলেও প্রসূতিদের জন্য অ্যাম্বুল্যান্স পাঠিয়ে প্রসব-প্রক্রিয়ার পুরো
খরচ সরকার বহন করছে। তবে রমন
বলছেন, এই উন্নতির ধারা আরও বাড়াতে হবে। এ রাজ্যে ঠিক যে চেষ্টায় হাত দিয়েছেন মমতাও! ছত্তীশগঢ়ে যেমন সমবায় বিপণির মাধ্যমে সস্তায় চাল দেওয়া হচ্ছে, এ রাজ্যে জঙ্গলমহলে
তেমনই থানাকে সেই কাজে লাগাতে
চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা।
বস্তারে আকরিক লোহার খনি বহুজাতিকের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগকেও নস্যাৎ করছেন রমন। একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, “ওখানে ২৪ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। তফসিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত পরিবারগুলির ৬ হাজার ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার সম্পূর্ণ নিঃশুল্ক। আমিই দেশের একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী, যিনি বলতে পারেন, আগামী ২০ বছর আমার রাজ্যে লোডশেডিং হবে না!” |
|
|
 |
|
|