|
|
|
|
কাজের ধারায় সংস্কার চায় সিপিএম |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
এ বার ‘পরিবর্তনে’র স্লোগান গ্রহণ করল সিপিএম! ক্ষমতা হারানোর পরে দল এবং সংগঠনে সংস্কারের কর্মসূচি হাতে নিল তারা। এবং সেই লক্ষ্যে তাদের মন্ত্র হল কাজের ধারা ‘পরিবর্তন’ ও নিজেদের ‘পুনর্গঠন’।
রাজ্য কমিটির বৈঠকে বিভিন্ন প্রতিনিধির মতামত শুনে রবিবার জবাবি ভাষণে পরিবর্তনের কর্মসূচি বেঁধে দিয়ে গেলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটই। সেই সূত্র ধরেই রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু তাঁর জবাবি বক্তৃতায় সাফ জানিয়েছেন, দলের এই বিপর্যয়ের মুহূর্তে যে কর্মীরা কোনও ‘কাজে আসছেন না’, তাঁদের আর রাখা হবে না। প্রয়োজনের সময়ে যাঁরা নিষ্ঠা সহকারে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন, তাঁদেরই গুরুত্ব দিয়ে সামনে তুলে আনা হবে। দলের সংস্কার ও পুনর্গঠনের জন্য ১০ দফা করে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কর্মসূচিও ঠিক করেছে রাজ্য কমিটি। তবে সংস্কারের এই প্রক্রিয়ায় প্রত্যাশিত ভাবেই নেতৃত্ব বদল নেই। কারণ, তা হলে বিপর্যয়ের নৈতিক দায় নিয়ে সাধারণ সম্পাদক কারাটকেও সরে দাঁড়াতে হয়!
নির্বাচনী বিপর্যয়ের বিশদ পর্যালোচনার জন্য ডাকা রাজ্য কমিটির বৈঠকে কারাট ব্যাখ্যা করেছেন, দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থাকার ফলে দলের ‘শ্রেণি অভিমুখ’ কী ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সরকার পরিচালনার দিকেই মূল মনোযোগ চলে যাওয়ায় রাজনৈতিক কর্তব্য থেকে সরে গিয়েছিল সিপিএম। পরবর্তী কালে দলের সঙ্গে যোগ দেওয়া কর্মীরা মনে করছিলেন, ভোটে জিতে ক্ষমতায় যাওয়াই বোধহয় সিপিএমের একমাত্র কাজ। গরিব মানুষের কল্যাণে সিপিএমের মতো একটি ‘বিপ্লবী’ দলের যে ভাবে কাজ করা উচিত, তা হচ্ছিল না। সমাজ ও অর্থনীতিতে পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শ্রেণি সম্পর্কের বিন্যাস যে ভাবে বদলেছে, তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই দলের কাজের ধারা ‘পুনর্বিন্যাস’ করতে হবে। ক্ষমতায় ফেরার থেকেও নিজেদের কাজের ধারা এবং শ্রেণি অভিমুখ ঠিক করা আরও বেশি জরুরি। কারাটের মতে, কেন্দ্রে ইউপিএ সককারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আন্দোলনের মাধ্যমে এক দিকে যেমন জনতার কাছে দলের বিশ্বাসযোগ্যতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে, তেমনই দলের অন্দরে কাজের ধারা পুনর্বিন্যাসের জন্য ‘সংগ্রাম’ চলবে। |
 |
রাজ্য কমিটির বৈঠকের পর প্রকাশ কারাট। রবিবার। ছবি: রাজীব বসু |
কারাটের ব্যাখ্যায়, কেরলে পাঁচ বছর অন্তর ক্ষমতা হারানোর ফলে সরকারি কাজের দিকে দলের অভিমুখ ততটা ঘুরে যায়নি, যতটা পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে হয়েছিল। তবে ‘সংসদ সর্বস্বতার ঝোঁক’ সর্বত্রই সংগঠনের ক্ষতি করেছে। হায়দরাবাদে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে গৃহীত পর্যালোচনা রিপোর্টের সূত্র ধরেই কারাট বলেন, গত কয়েক দশকে দলের মূল ভিত্তি ছিল শ্রমিক শ্রেণি। কিন্তু রাজ্য কমিটির রিপোর্টেই দেখা যাচ্ছে, দুর্গাপুর-রানিগঞ্জের কয়লা-ক্ষেত্র ছাড়া কোনও শিল্পাঞ্চলেই সিপিএমের ফল ভাল হয়নি। শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে সমর্থনের ভিত এ ভাবে ধসে পড়াকে ‘উদ্বেগের বিষয়’ বলে বর্ণনা করে তা নিয়ে আত্মসমীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন কারাট। সিপিএম সূত্রের খবর, সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যের সূত্র ধরেই বিমানবাবু বলেন, ব্যারাকপুরের মতো শিল্পাঞ্চলে দল কেন ‘শুয়ে পড়ল’, তার জবাবদিহি নিশ্চয়ই ‘বিমান বসু দেবেন না’!
রাজ্য নেতৃত্ব যে কোনও ভাবেই এই নজিরবিহীন বিপর্যয়ের দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারেন না, তা-ও উল্লেখ করেছেন বিমানবাবু। সেই সঙ্গেই তিনি জোর দিয়েছেন, ‘নিষ্ক্রিয়’ কর্মীদের বিদায় করে নতুন প্রজন্মের সক্রিয় কর্মীদের সংগঠনে গুরুত্ব দেওয়ার উপরে। রাজ্য কমিটির পর্যালোচনায় মেনে নেওয়া হয়েছে, গরিব ও শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থরক্ষায় বিগত বামফ্রন্ট সরকারের অগ্রাধিকারের ভাবমূর্তি ‘কিছু সময়ের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছিল। উন্নয়নের কিছু ক্ষেত্রে সরকারের কাজের দুর্বলতা জনমনে অসন্তোষ তৈরি করেছিল। বিগত সরকারের শেষ পর্যায়ে গরিব ও শ্রমজীবী মানুষের উন্নয়নে বহু কাজ হলেও ঘাটতি পুরোটা পূরণ করা যায়নি বলে দল মেনে নিচ্ছে।
কাজের ধারা পুনর্বিন্যাসের কথা বলতে গিয়ে প্রকারান্তরে এ দিন ফের ‘সতর্ক’ করা হয়েছে প্রাক্তন মন্ত্রী আব্দুর রেজ্জাক মোল্লাকে। দলীয় নেতৃত্ব নাম না-করেই বার্তা দিয়েছেন, প্রকাশ্যে অসতর্ক মন্তব্য করার ক্ষেত্রে সবাইকেই সংযত হতে হবে। রাজ্য কমিটির বৈঠক শেষে আলিমুদ্দিন ছাড়ার সময় রেজ্জাক জানিয়ে যান, আগামী পার্টি কংগ্রেস পর্যন্ত তিনি আর কিছু বলবেন না। তবে অতীতেও দলের হুঁশিয়ারির মুখে তিনি একই রকম অঙ্গীকার করে পরে বলেছেন, তাঁকে ‘লাগাম’ পরিয়ে লাভ নেই! এ বারের ‘সংযম’ কত দিন বজায় থাকে, সে দিকে নজর রাখছেন রাজ্য নেতৃত্ব। রাজ্যে জোট সরকার আসার পরে যে ভাবে ‘গণতন্ত্রের উপরে আঘাত’ আসছে, ‘সন্ত্রাসের রাজনীতি’ শুরু হয়েছে, নির্বাচিত পঞ্চায়েতকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না এই বিষয়গুলি নিয়েও রাজ্য কমিটির দু’দিনের বৈঠকে সবিস্তার আলোচনা হয়েছে। এই তিন প্রশ্নেই অগস্টে কলকাতায় বিক্ষোভ অবস্থান ও দিল্লিতে ধর্ণা কর্মসূচি পালিত হবে। মূলত আন্দোলন কর্মসূচি চূড়ান্ত করতেই আজ, সোমবার বামফ্রন্টের বৈঠক ডাকা হয়েছে। |
|
|
 |
|
|