|
|
|
|
বাবা-মায়ের সন্দেহ নারী পাচারচক্রের দিকে |
বনগাঁয় একই পরিবারের তিন বোন নিখোঁজ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বনগাঁ |
একই পরিবারের তিন বোনের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে বনগাঁয়। বনগাঁর দেবগড় দাসপাড়ার বাসিন্দা পেশায় ভ্যানচালক রাজের টিকাদারের তিন মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ে মিনতির বয়স বাইশ, মেজ মেয়ে উন্নতির বয়স পনেরো ও ছোট মেয়ে মালতীর বয়স মাত্র নয়। মিনতি ও উন্নতি কথা বলতে পারে না। মালতী তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। গত বৃহস্পতিবার থেকেই তিন বোন নিখোঁজ। আত্মীয়-স্বজনদের কাছে কোনও খোঁজ না পেয়ে রাজেনবাবু শুক্রবার থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। নিখোঁজের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে প্রতিবেশীরা স্থানীয় এক যুবককে ধরে পুলিশের হাতে দিলেও প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের বক্তব্য ওই যুবক এই ঘটনায় জড়িত নয়। তবে নিখোঁজ তিনটি মেয়ের খোঁজে জোর তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। |
 |
শোকগ্রস্ত বাবা-মাকে সান্ত্বনা প্রতিবেশীদের। |
এদিকে পুলিশ ঠিকমতো তদন্ত করছে না বলে অভিযোগ করে স্থানীয় বাসিন্দা তথা বনগাঁ পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান কৃষ্ণা রায় বলেন, “আমরা আমাদের তরফে খোঁজখবর করছি। কিন্তু পুলিশের যতটা উদ্যোগ নেওয়া উচিত তাঁরা তা নিচ্ছেন না।”
অভিযোগ অস্বীকার করে বনগাঁর এসডিপিও বিমলকান্তি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “নিখোঁজ ওই তিনটি মেয়ের সন্ধান পেতে পুলিশ যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। ”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বনগাঁয় দেবগড় দাসপাড়ায় রেললাইনের ধারে বস্তিতে স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে থাকেন রাজেনবাবু। স্ত্রী বীণাদেবী পরিচারিকার কাজ করেন। ছেলে রাজু স্কুলবাস চালান। তিন মেয়ে মিনতি, উন্নতি ও মালতী মধ্যে প্রথম দু’জন শারীরিক প্রতিবন্ধী। কথা বলতে পারে না। অন্যদিনের মতো বৃহস্পতিবারও তিনি মেয়েকে ঘরে রেখে রাজেনবাবু, বীণাদেবী ও রাজু কাজে বেরিয়ে যান। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ বাড়ি ফেরেন বীণাদেবী। কিন্তু তিন মেয়ের কাউকেই ঘরে দেখতে না পাননি। মেয়েদের খোঁজে বীণাদেবী এদিক ওদিক খোঁজাখুজি শুরু করেন। কিন্তু কোথাও খোঁজ না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে আসেন। ইতিমধ্যে প্রতিবেশী স্থানীয় এক ভ্যানচালক শুকদেব দাস জানান, তিনি তিন বোনকে এক সঙ্গে ব্যাগ হাতে বনগাঁ-চাকদহ রোডে একটি পেট্রোল পাম্পের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছেন। মিনতির পরনে ছিল সাদা চুড়িদার ও ওড়না, উন্নতির ছিল আকাশি রঙের জামা ও মালতীর লাল জামা। |
|
একট স্কুলব্যাগ ও একটি বড় কালো ব্যাগে তিন মেয়ে জামাকাপড়, কিছু সোনারূপোর গহনা এবং সামান্য কিছু টাকা নিয়ে গিয়েছে বলে তাদের পরিবার সূত্রে জানানো হয়। এর পরই আত্মীয়স্বজনদের কাছে খোঁজ-খবর নেওয়া হয়। কিন্তু কোথাও খোঁজ না পাওয়ায় শুক্রবার বনগাঁ থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। অভিযোগ পেয়ে তল্লাশিতে নামে বনগাঁ থানার পুলিশ। পুলিশকে বীণাদেবী জানান, তিন মেয়ের কোউই কোনওদিন একা বাড়ি থেকে বেরোয়নি। তবে কিছুদিন আগে তারা মাসির বাড়ির ঠিকানা জানতে চায়। মেয়েরা নিখোঁজ হওয়ার পরে গোপালনগর থানার মেদিয়ায় মাসির বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নেওয়া হয়। কিন্তু তারা সেখানে যায়নি। এদিকে তিন মেয়ের শোকে বাড়িতে রান্নাবান্না বন্ধ। কান্নাকাটি করছেন বাবা-মা স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এর আগেও এমনই কয়েকটি ঘটনায় দেখা গিয়েছিল নিখোঁজ হওয়ার সঙ্গে নারী পাচার চক্রের যোগ রয়েছে। রাজেনবাবুর আশঙ্কা, তাঁর মেয়েরাও কোনও নারী পাচারচক্রের কবলে পড়েছে।
|
ছবি: পার্থসারথি নন্দী। |
|
|
 |
|
|