বিপন্ন শৈশব
বোমার লড়াই দেখতে গিয়ে মৃত্যু পথশিশুর
ন্য কোনও শিশু হলে আতঙ্কে সিঁটিয়ে থাকত। কিন্তু নিত্য বোমাবাজির মধ্যে বড় হয়ে ওঠা ন’বছরের ছোট্ট ছেলে তার মধ্যেই বেরিয়ে এসেছিল অকুতোভয়ে, দু’দল সমাজবিরোধীর লড়াই দেখার ঔৎসুক্যে। আর সেই কৌতূহলই কাল হল পানিহাটির পি বি ঘাট রোডের পথশিশু শেখ রাজুর। শনিবার রাতে বোমার আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় তার শরীরের নীচের অংশ। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। বোমার আঘাতে গুরুতর জখম হয়েছেন ফুটপাথবাসী আর এক যুবক। তাঁকে ভর্তি করা হয়েছে আর জি করে। বোমাবাজির সঙ্গে যুক্ত এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
রাজুর বাবা শেখ রহমান অন্ধ। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ভিক্ষা করাই পেশা ছিল ওই বালকের। বাবা ছাড়া আর কোনও পরিজনও নেই তার। দু’জনের রাত কাটত ফুটপাথের প্লাস্টিকের ছাউনির তলায়। সেখানে চোলাই মদের ঠেকে নিত্য মারামারি সমাজবিরোধী দলের। স্থানীয় কাউন্সিলর শিখা দত্ত বলেন, “রোজই এখানে দুষ্কৃতীদের মধ্যে বোমা-গুলির লড়াই চলে। গত চার দিন তা চরমে উঠেছিল।” এই পরিবেশেই বড় হয়ে উঠছে রাজুর মতো পথশিশুরা। শনিবার রাতে ভিক্ষের সামান্য রোজগার দিয়ে পাউরুটি-ঘুগনি খেয়ে শুয়ে পড়েছিল বাবা-ছেলে। এর মধ্যেই বোমাবাজি। সেই আওয়াজ মিলিয়ে যেতেই অন্ধকার রাস্তায় পাওয়া গেল লুটিয়ে পড়া রক্তাক্ত রাজুকে। স্থানীয়েরা পাঁজাকোলা করে তাকে প্রথমে নিয়ে যান সাগর দত্ত স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। সেখান থেকে নেওয়া হয় আর জি করে। বোমায় জখম রশিদ নামে এক যুবককেও সাগর দত্ত থেকে আর জি করে পাঠানো হয়। তাঁর অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানায় পুলিশ।
পুলিশ জানায়, ঘটনার সূত্রপাত চোলাই মদের ঠেকের দখল নিয়ে। গুলি-বোমা নিয়ে লড়াই চালায় এলাকায় বেড়ে ওঠা দুষ্কৃতীরাই। স্থানীয়েরা পুলিশকে জানিয়েছেন, গোলমাল দেখতে নিজের ঝুপড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিল রাজু। তখনই বোমাবাজির মধ্যে পড়ে যায় সে।
পানিহাটির পি বি ঘাট রোডের এই ছবি শিল্পাঞ্চলে অবশ্য নতুন নয়। স্থানীয় সমাজকর্মীরাও জানান, এই পরিবেশে বড় হওয়া বহু শিশুরই আকর্ষণের কেন্দ্রে আসে দুষ্কৃতী-মস্তানরা। তারাও বয়ঃসন্ধিতেই হাত পাকায় বোমা-গুলিতে। জীবন সংগ্রামে কোনও মতে টিকে থাকা ওই শিশুরাই ক্রমে দুষ্কৃতী হয়ে ওঠে। উত্তর কলকাতায় পথশিশুদের নিয়ে কাজ করেন সমাজকর্মী অলকানন্দা ঘোষ। তিনি বলেন, “সরকার উদ্যোগী না হলে শুধুমাত্র সমাজকর্মীদের চেষ্টায় এমন শিশুদের মূলস্রোতে ফেরানো অসম্ভব।”
কিন্তু সরকার কি আদৌ চিন্তিত এই শিশুদের নিয়ে? নারী, শিশু উন্নয়ন ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “ঘটনাটি আমি জানতাম না। ওই বালকের মৃত্যু দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু ৩৪ বছরের বাম জমানার অভ্যাসকে ৬২ দিনে বদলে ফেলা অসম্ভব। আমরা চেষ্টা করছি। অনেক সমস্যা আছে। সেগুলো আটকাতে পুলিশকেও আরও সক্রিয় হতে হবে।”
মনোবিদ হিরণ্ময় সাহা মনে করেন, এই পরিবেশে দুষ্কৃতীদের চোখের সামনে দেখতে দেখতে তাদের কাজের প্রতি প্রবল আকর্ষণ জন্মায় শিশুদের। তার থেকেই নিজেরাও দুষ্কর্মে লিপ্ত হয়। হিরণ্ময়বাবু বলেন, “সম্প্রতি যে সব বড় অপরাধ হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে অপরাধীদের বয়স অত্যন্ত কম।” সমাজতত্ত্ববিদ প্রশান্ত রায়ের মতে অবশ্য সামান্য ফারাক রয়েছে। তিনি মনে করেন, এই পরিবেশে বেড়ে ওঠা সব শিশুর মনেই যে এই হানাহানি প্রভাব ফেলবে, এমনটা না-ও হতে পারে। হাতে বোমা, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে যে দুষ্কৃতীরা এলাকা দখল করছে, তারা যে সব ক্ষেত্রেই শিশুমনে ‘হিরো’ হয়ে উঠবে, এমনটা ভেবে নেওয়ার কোনও কারণ নেই। তবে এই পরিবেশ কখনওই সুস্থ বা কাম্য নয়।
First Page South Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.