|
|
|
|
টাউন হল নিয়ে উৎসাহ তুঙ্গে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নবদ্বীপ |
শহরের প্রায় মাঝখানে বিরাট একটি অট্টালিকার ভগ্নস্তূপ। অর্ধসমাপ্ত। চার দিকে বেরিয়ে রয়েছে মরচে পড়া লোহার রড। আগাছায় ছাওয়া সারা দেহ।
নবদ্বীপ মতি রায়ের বাঁধে অসমাপ্ত ওই টাউন হল নিয়েই এখন কিন্তু নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু হয়েছে।
আটের দশকে বাম পুরবোর্ডের আমলে শুরু হয়েও শেষ হয়নি ওই টাউন হল। তারপরে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। নবদ্বীপের নাট্যকর্মী সংস্কৃতি কর্মী মানুষ অনেক মিটিং মিছিল করেছেন, স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন বহু বার, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। টাউন হল সেই পড়েই রয়েছে, আগাছা বাড়ছে তার গা বেয়ে। যে নবদ্বীপ ছিল এক সময়ে বাংলার সংস্কৃতির প্রধান কেন্দ্র, সেখানে স্থায়ী নাট্যমঞ্চের অভাব পূরণ করতে এ বার তৃণমূল পুরবোর্ড সেই স্বপ্ন সম্পূর্ণ করতে উদ্যোগী হয়েছে। উল্টোরথের দিন নবদ্বীপ পুরভবনের ঠিক পাশে টাউন হল তথা নাট্যমঞ্চের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা। তিনি বলেন, “দেড় বছরের মধ্যে এই প্রকল্প সম্পূর্ণ হবে।”
নবদ্বীপের মানুষ ভাবতে শুরু করেছেন, কেমন হবে সেই টাউন হলের চেহারা। নবদ্বীপ নাট্য উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি প্রভাস দত্ত বলেন, “আমরা চাই নাট্যমঞ্চ হোক অত্যাধুনিক। তার আলো, শব্দের ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে যেন প্রথম থেকেই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে এগোনো হয়। তার ভাড়াও যেন থাকে আয়ত্তের মধ্যে।” বহু দিনের নাট্যকর্মী দেবাশিস নন্দীর বক্তব্য, “অন্তত এক হাজার আসনের প্রেক্ষাগৃহ যেন হয়। কিন্তু তার সঙ্গে যদি ছোট একটা দেড়শো আসনের সভাকক্ষও থাকে, তা হলে ছোট সংগঠনগুলির পক্ষে খুব সুবিধা হবে।”
নবদ্বীপের ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক উত্তম সাহার কথায়, “আমরা চাই টাউন হলকে ঘিরে সাংস্কৃতিক পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গে একটি বাণিজ্যিক বৃত্তও গড়ে উঠুক। হলের উপরে একটি অতিথি নিবাস করা হোক।” তাঁর পরামর্শ, “একটা ভাল কমপ্লেক্সই গড়ে উঠতে পারে টাউন হলকে ঘিরে। যেখানে থাকবে তাঁত, কাঁসা-পিতল, মিষ্টান্ন শিল্পের ঐতিহ্যের নমুনা নিয়ে একটি গ্যালারি। ভাল মানের রেস্তোরাঁও রাখা জরুরি।”
পাশাপাশি, নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদের সম্পাদক শান্তিরঞ্জন দেবের বক্তব্য, “নবদ্বীপের কীর্তন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন। তার একটি আর্কাইভ করা যেতে পারে টাউন হলে।” অতিথি আবাস এবং রেস্তোরাঁ চান তিনিও। সনাতন সন্ত সমাজের সভাপতি অদ্বৈত দাসের কথায়, “এই টাউন হলই হোক নবদ্বীপের তথ্য কেন্দ্র। নবদ্বীপের মঠ-মন্দিরগুলির তালিকা, সে সম্পর্কে তথ্য, বিগ্রহগুলির ছবি এখানে রাখা থাকলে গবেষক থেকে সাধারণ অতিথি সকলেই উপকৃত হবেন। পর্যটন শিল্পেও তাতে জোয়ার আসবে।” নবদ্বীপ নাগরিক কমিটির সম্পাদক দিলীপ চট্টোপাধ্যায়ও চান এই টাউন হল সংস্কৃতি, বাণিজ্য ও নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যের মিলনকেন্দ্র হয়ে গড়ে উঠুক।
পুরপ্রধান জানিয়েছেন, দেড় বিঘার কিছু বেশি জমির উপরে টাউন হল গড়ে উঠবে। নীচে থাকবে গাড়ি রাখার জায়গা। দোতলায় কমবেশি হাজার আসনের প্রেক্ষাগৃহ। যেখানে সিনেমাও দেখানো যাবে। আলো ও শব্দের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে প্রাথমিক কথা হয়েছে। নির্মাণ কাজ শুরু হলেই তাঁরা আসবেন। বিমানকৃষ্ণবাবু বলেন, “তিন তলার পরিকল্পনা কিন্তু এখনও বলার মতো জায়গায় আসেনি।” গোটা পরিকল্পনার কথা মুখ্যমন্ত্রীকেও জানানো হয়েছে।
কিন্তু এত অর্থের সংস্থান? পুরপ্রধান বলেন, “পুরসভা উন্নয়ন খাতে ব্যয় থেকে মোট খরচের ৩০ শতাংশ দেবে। সাংসদ এক কোটি টাকা দেবেন বলে কথা দিয়েছেন। বিরাট অংশের ব্যয় বহন করবেন বিধায়কও। এ ছাড়াও পুরসভা এই কাজের জন্য একটি তহবিল তৈরি করছে। পুরবাসীর কাছে আবেদন করছি, সেই তহবিলে সাহায্য করুন।” |
|
|
 |
|
|