ভাঙনের কবলে মাটিয়ারির কাঁসা-পিতল শিল্প
গেই গঙ্গার গ্রাসে চলে গিয়েছে একটা আস্ত গ্রাম। এ বার এলাকার মূল অর্থনীতিকে পিতল, কাঁসা শিল্পকেও যেন গ্রাস করছে এই ভাঙন।
গত কয়েক বছরের ভাঙনে সম্পূর্ণ ভাগীরথীর গর্ভে ২০০ পরিবারের গ্রাম বাবলাড়ি। সেখানে ছিল মন্দির, বাবলাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন। সবই বর্তমানে গঙ্গা গর্ভে। গত দু’বছরে এলাকার প্রচুর চাষযোগ্য জমিও গঙ্গা গর্ভে। তাই বর্তমানে ঝড়বৃষ্টি হলেই মানুষ আতঙ্কে থাকে এ বার কার জমি গঙ্গা গ্রাস করবে। গত তিন বছরে গঙ্গার গ্রাসে বাবলাড়ির বাসিন্দারা বর্তমানে গঙ্গার ধারে জগৎখালি বাঁধের ধারে বসবাস শুরু করেছেন।
কালীগঞ্জের মাটিয়ারি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মাটিয়ারি অঞ্চলে প্রায় ১০ হাজার মানুষ বাস করেন। তাঁদের মূল জীবিকা পেতল ও কাঁসার বাসন তৈরি। এই শিল্পের উপরে ভর করে এলাকার অর্থনীতি বেশ উন্নত। গ্রামীণ এলাকা দেখলেই বোঝা যায় এলাকায় মানুষ কেন অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সমৃদ্ধ। এই এলাকায় থাকায় বাড়ি ও মাটিয়ারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০০ মিটারের মধ্যে ভাগীরথী পৌঁছে যাওয়ায় এলাকার মানুষ এখন ভীত।
একটু একটু করে এগোচ্ছে গঙ্গা।-- সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়।
এলাকার বাসিন্দা ও কালীগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্য দিব্যেন্দু দাস বলেন, ‘‘এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই ওই বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। এই ভাঙন এমন ভাবে শুরু হয়েছে যাতে এলাকার কাঁসা, পেতল শিল্পও ক্ষতির মুখে যেতে শুরু করেছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে পঞ্চায়েত সমিতিতে আলোচনাও করেছি। আমাদের পক্ষে যতটা সম্ভব গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’’ স্থানীয় কাঁসা, পিতল শিল্পী অমর ঘোষ বলেন, ‘‘আমার বাড়ি থেকে ১০০ মিটারের মধ্যে গঙ্গা। জোরে হাওয়া দিলে বা প্রচণ্ড বৃষ্টি হলে আমার ভয় করে।” বাবলাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় বর্তমানে পূর্ব দিকে বেশ খানিকটা সরে এসেছে। ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক সনৎ দাস বলেন, ‘ওই এলাকায় মূলত দরিদ্র মানুষ বসবাস করেন। তাঁদের গ্রাম গঙ্গাবক্ষে চলে যাওয়ার ফলে অবস্থা আরও শোচনীয়। অনেকেরই স্থায়ী ঠিকানা নেই।”
এলাকার বাসিন্দা দেবেশ দাস বলেন, ‘‘এই সমস্যার মধ্যে মানুষ পড়ে আছেন কারণ ওই কাঁসা, পিতল শিল্প। এ ছাড়া এই এলাকা অনেক পুরনো। সকলেরই পূর্বপুরুষ ওই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। সেই স্মৃতিকে আগলেই মানুষ দিন কাটাচ্ছেন।’’ এলাকার গৃহবধূ সঞ্চিতা রাহা বলেন, ‘‘আমার বিয়ে হয়েছে ৭ বছর। এসে এই গঙ্গার ভাঙন দেখেছি। ভাল জমি, বাড়ি গ্রাস করতে দেখেছি। তবুও মানুষ পড়ে আছেন কারণ এলাকার মূল অর্থনীতি কাঁসা, পেতল শিল্প। সেই শিল্প যত দিন, মানুষও তত দিন। যদি তাও শেষ হয় তবে মানুষ এলাকায় থাকতে পারবেন না।’’
গত ১০ বছর মাটিয়ারি এলাকায় কাঁসা, পিতল শিল্পে যুক্ত রুদ্র রাহা বলেন, ‘‘পিতল, কাঁসার শিল্পে দীর্ঘদিন কাজ করি। সেই কাজ করে এলাকায় জমি কিনে বাড়ি তৈরি করেছি। সেই বাড়ি ঘিরেই আমার স্ত্রী, পুত্র, কন্যা সকলের আশা-আকাঙ্ক্ষা। যদি ভাঙনে জমি গঙ্গা গ্রাস করে, তবে স্ত্রী ও পুত্রসন্তান নিয়ে কোথায় যাব জানি না।’’
First Page Murshidabad Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.