|
|
|
|
সম্পাদকীয় ২... |
ব্যর্থতার পিছনে |
মুম্বইয়ে বিস্ফোরণের পর কয়েক দিন কাটিয়া গেলেও তাহার তদন্ত এখনও নাটের গুরুদের শনাক্ত করিতে পারে নাই। কাহারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটাইল, সেটা যেমন নিশ্চিত রূপে জানা যায় নাই, তেমনই কী দিয়া বিস্ফোরণ ঘটানো হইল, সে ব্যাপারেও পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মীরা এখনও অন্ধকারে। বিস্ফোরণে আর ডি এক্স ব্যবহৃত হইয়াছে, নাকি টি এন টি, তাহা দূর-নিয়ন্ত্রিত ছিল নাকি মানব-বোমার ফিদাইন হামলা, নিশ্চিত রূপে তাহাও প্রতিষ্ঠা করা যায় নাই। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলিয়াছেন, বিস্ফোরণের কোনও আগাম পূর্বাভাস গোয়েন্দাদের কাছে ছিল না। তাই তাহার তদন্তের কাজটিও ঠিক মতো করা যাইতেছে না। গোয়েন্দাদের কাজটি জটিল। সন্ত্রাসবাদীদের গতিবিধির উপর নজর রাখা, তাহাদের পরিকল্পনা আগাম অনুমান করা, কোথাও সামান্যতম খবর পাইলে তাহা সংগ্রহ করা, বিভিন্ন তথ্য, সংবাদকণা, এমনকী গুজবও নিয়ম করিয়া নথিভুক্ত করা, ক্রমাগত সেগুলি বিশ্লেষণ করিতে থাকা, সেই বিশ্লেষণের ভিত্তিতে নিরাপত্তা-কর্মীদের কাছে নিজেদের সিদ্ধান্ত বা পূর্বানুমান পাঠাইয়া দেওয়া। কাজটি চব্বিশ ঘণ্টার এবং নিরবচ্ছিন্ন ভাবে করিয়া যাওয়ার। ভারপ্রাপ্ত অফিসারের বদলি কিংবা নূতন অফিসারের দায়িত্ব বুঝিয়া লওয়ার বিরতিতেও যাহা অব্যাহত থাকিবে, যাহাতে ছেদ পড়িবে না। প্রখর বুদ্ধি ও মেধাসম্পন্ন ব্যক্তিদের এই ধরনের কাজের সহিত যুক্ত করিতে হইবে।
পশ্চিমের উন্নত দেশগুলিতে অনুরূপ দৃষ্টিভঙ্গি ও পদ্ধতিই সন্ত্রাসবাদের উপর্যুপরি হামলা বন্ধ করিতে সফল হইয়াছে এবং বহু পরিকল্পিত সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ আগাম রুখিয়া দিয়া অপরাধীদের সময়োচিত গ্রেফতারেও সক্ষম হইয়াছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের মতো দেশে যে ৯/১১ বা ২০০৫-এর লন্ডন হামলার মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় নাই, তাহা ওই সব দেশের প্রশাসন তথা গোয়েন্দা ব্যবস্থার সাফল্য। তাঁহারা জানেন, প্রতি মুহূর্তেই জঙ্গিরা ষড়যন্ত্র আঁটিতেছে, নূতন-নূতন লক্ষ্যবস্তু স্থির করার এবং সেখানে হামলা চালাইবার ফন্দি করিতেছে। সেই সব ফন্দি ও চক্রান্ত কার্যকর হওয়ার আগেই ফাঁস করিতে হইবে এবং তাহা রোধে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে। মুম্বইয়ের নাগরিকরা যে সেই নিশ্চিন্তি হইতে বঞ্চিত, বারংবারই যে তাঁহাদের সন্ত্রাসবাদের শিকার হইতে হইতেছে, তাহার কারণ গোয়েন্দা-পরিকাঠামোর অসম্পূর্ণতা। খবরাখবর সংগ্রহে, সন্দেহভাজনদের উপর নজরদারি চালাইতে কিংবা সম্ভাব্য হামলাকারীদের শনাক্ত করার প্রশ্নে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি এখনও প্রাচীন, এমনকী আদিম কালের পন্থাপদ্ধতির উপযোগ করিয়া থাকে। এখনও প্রায়শ সন্দেহভাজনকে লক-আপে ভরিয়া থার্ড ডিগ্রি মারফত স্বীকারোক্তি আদায়ই প্রচলিত ও জনপ্রিয় গোয়েন্দা-পদ্ধতি। তুলনায় আধুনিক প্রযুক্তি সহযোগে ধারাবাহিক নজরদারি, নিরন্তর তথ্য সংগ্রহ, উপগ্রহ-চিত্র মারফত জঙ্গিদের ডেরা তল্লাশি, যাবতীয় তথ্যের পূর্ণাঙ্গ ও নিয়মিত বিশ্লেষণ ও তাহার ভিত্তিতে সন্ত্রাসীদের গতিবিধি ও ফন্দি-ফিকির সম্পর্কে অগ্রিম ধারণা সঞ্চয়ের জরুরি কাজটি এখনও উপেক্ষিতই থাকিয়া যাইতেছে। সন্ত্রাসের হাত হইতে নাগরিকদের নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা দিতে হইলে কিন্তু এই বিষয়টির উপর সরকারকে আরও গুরুত্ব দিতে হইবে। |
|
|
 |
|
|