আনন্দবাজার পত্রিকায় আমার প্রতিবেদনের (২১/২২-৬) সূত্রে ৫ জুলাই যে তিনটি চিঠি মুদ্রিত হয়েছে, তারই প্রেক্ষাপটে এই পত্র।
নেট/স্লেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা যে কমছে তা সর্বজনবিদিত। যত দূর জানি ২০০৯ ও ২০১০-এ স্লেটে পাশের হার ছিল যথাক্রমে ১.৩৪ ও ৩.৭৬ শতাংশ। নেটের সাফল্যের হারও সমতুল্য। এর পর প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষক নির্বাচন নিয়ে। কলেজ সার্ভিস কমিশনে বিভিন্ন বিষয়ের নির্বাচকমণ্ডলী কীসের ভিত্তিতে শিক্ষক নির্বাচন করেছেন এবং কাদের নিয়োগপত্র দিয়েছেন তা আমার পক্ষে জানা সম্ভব নয়। সুতরাং প্রকৃত তথ্য জেনেও আমি অর্ধসত্য তথ্য জনসমক্ষে তুলে ধরছি এ কথা ঠিক নয়। কোনও বিষয়ে যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দিয়ে যদি অযোগ্য প্রার্থী নিয়োগ করা হয়ে থাকে, তা কখনওই অভিপ্রেত নয়। কিন্তু যেহেতু ওই সব নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে আমি জড়িত ছিলাম না, সেই হেতু ওই বিষয়ে সত্যাসত্য জানার সুযোগ আমার নেই। তবে কারও প্রতি অন্যায় হলে প্রতিকার নিশ্চয়ই হওয়া উচিত।
দ্বিতীয়ত, ইউ জি সি-র পিএইচ ডি সংক্রান্ত সাম্প্রতিক নিয়মাবলির ফলে ২০০৯-এর আগে যাঁরা পিএইচ ডি ডিগ্রি পেয়েছেন, তাঁদের ডিগ্রির অবমূল্যায়ন ঘটানো হোক, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অন্তত এ জাতীয় কোনও অবস্থান নেয়নি। ইউ জি সি-র নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষক পদপ্রার্থী কেউ যদি নেট/স্লেট উত্তীর্ণ না হন, তা হলে তাঁদের নতুন নিয়মে পিএইচ ডি করতে হবে। ২০০৯-এর আগে যাঁরা পিএইচ ডি পাঠ্যক্রমে রেজিস্টার করেছেন তাঁদের ক্ষেত্রে যে এই নিয়ম প্রয়োগ করা উচিত না, সে বিষয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে আমি ইউ জি সি-কে একাধিক চিঠি দিয়েছি। কিন্তু লাভ হয়নি। এটা অবাঞ্ছিত। কিন্তু তার দায় আমার উপর চাপানো ঠিক নয়। সংবিধান অনুযায়ী ইউ জি সি-র নির্দেশিকা ও সরকারের নির্দেশ মানতে বিশ্ববিদ্যালয় বাধ্য। যদি নিয়মগুলি পাল্টানো যায়, তা হলে নিশ্চয়ই আনন্দিত হব।
তৃতীয়ত, শিক্ষিক-শিক্ষিকার সামাজিক দায়বদ্ধতা সুনিশ্চিত করার জন্য সুচিন্তিত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা নিশ্চয় সমর্থনযোগ্য। নিঃসন্দেহে আধুনিকীকরণের নামে যাতে শ্রেণিবিন্যাস না ঘটে, সেই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সব সময় যুক্ত থাকব। তা না হলে কি এই সম্পর্কে আমার প্রতিবেদনে লিখতাম? |
রংগন চক্রবর্তী কবি কাজি নজরুল ইসলামের একটি জীবনী (২৯-৫) ‘বিদ্রোহী’ লিখেছেন। কিন্তু তিনি একটি ভুল করেছেন। নজরুল তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক সঙ্গীতের অনুবাদ করেছিলেন, তা ঠিক। তবে রংগন চক্রবর্তী সেই সঙ্গীতের যে বাণী উল্লেখ করেছেন, তা নজরুলের নয়। নজরুলের অনুবাদের মাত্র একটি লাইন আমার আবছা মনে আছে: ‘জাগো...অনশনলাঞ্ছিত ভাগ্যহত’। কিন্তু রংগনের উদ্ধৃত সঙ্গীতের বাণী অন্যের অনুবাদ। এত বছর পরে সেই অনুবাদকের নাম ভুলে গিয়েছি। ‘ইন্টারন্যাশনাল’ নামে অভিহিত গানটি রংগনবাবু আংশিক উদ্ধৃত করেছেন। পুরো গানটি এখনও আমার মোটামুটি মুখস্থ (সুর-সহ): ‘জাগো, জাগো সর্বহারা/অনশনবন্দি ক্রীতদাস। শ্রমিক দিয়াছে আজ সাড়া/লভিয়াছে মুক্তির আশ্বাস সনাতন জীর্ণ কুআচার/চূর্ণ করি ওঠ জনগণ/ইন্টারন্যাশনাল/ মিলাবে মানব জাত¶’ নজরুল গবেষকরা নিশ্চয় এই সঙ্গীতের নজরুলকৃত অনুবাদ খুঁজে বের করতে পারবেন। কিন্তু আমার বিস্ময় জাগে, নজরুলের অনুবাদ কেন বঙ্গীয় কমিউনিস্ট পার্টি পছন্দ করেনি? |
রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের উদ্যোগে সরকারের মাসিক মুখপত্র ‘পশ্চিমবঙ্গ’ পত্রিকার একটি ‘সার্ধশতবর্ষ’ রবীন্দ্রস্মরণ সংখ্যা ২০১০ প্রকাশিত হয়েছিল। পৃষ্ঠা সংখ্যা ১০২৪, হার্ডবোর্ড বাঁধাই, জ্যাকেট শোভিত, দাম দুশো টাকা। আয়তন ও প্রকাশনার তুলনায় সুলভ বলতেই হবে। সম্পাদক: নন্দন রায়, তথ্য অধিকর্তা, তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ভাল সাংস্কৃতিক কাজ। মধ্যবিত্তের সঙ্গতির মধ্যেই। কিন্তু তামাশা অন্যখানে। যে বইটি হয়তো লক্ষ লক্ষ মানুষ কিনতেন, তার প্রকাশ ও বিপণন সম্পর্কে রাজ্যের মানুষের অধিকাংশই (এখানে সংস্কৃতিসেবীদের কথাই বলা হচ্ছে) কিছু জানতে পারেননি। কোনও বিজ্ঞাপনের হদিশ মেলেনি। তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের কলকাতা ও জেলা দফতরগুলিতে দেখা করে বা দূরভাষে কথা বলেও বিশেষ কিছু জানা যাচ্ছে না। প্রকাশনার মুদ্রণের সংখ্যা, প্রকাশনার তারিখ কিছুই উল্লিখিত নেই। এত গোপনীয়তার কারণ কী? সম্প্রতি শিয়ালদহ স্টেশন থেকে জনৈক পাঠক একটি কপি কিনে আনায় আমরা, মালদহবাসীরা প্রকাশনাটি দেখলাম। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেই এখন তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের দায়িত্ব। অনুগ্রহ করে ব্যাপারটি সম্পর্কে তদন্ত করুন। এবং অনুরোধ, প্রয়োজনে পুনর্মুদ্রণ করার বন্দোবস্ত করুন। |