সম্পাদকীয় ১...
উন্নয়নের ঔষধ
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জঙ্গলমহলে গিয়া যে ‘প্যাকেজ’ ঘোষণা করিয়াছেন, তাহাতে উন্নয়নের একটি সার্বিক চিন্তা ধরা পড়িয়াছে। কর্মসংস্থান, পেশাদারি প্রশিক্ষণ, সর্বস্তরে শিক্ষার ব্যবস্থায় উন্নতি, স্বাস্থ্য পরিষেবার মানোন্নয়ন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, এই সব বিষয়ই তাঁহার ঘোষণায় স্থান পাইয়াছে। কোনও এলাকার দ্রুত উন্নয়নের জন্য এই ব্যবস্থাগুলির প্রয়োজনীয় তো বটেই, উপরন্তু সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্যও এমন উদ্যোগ অপরিহার্য, সন্দেহ নাই। বার্ধক্যভাতার সংখ্যাবৃদ্ধি, স্বল্পমূল্যে চাল, বাইক-আরোহী স্বাস্থ্যকর্মীর দ্বারা গ্রামে গ্রামে চিকিৎসা পৌঁছাইয়া দেওয়া, এগুলি দরিদ্রতম মানুষকে মর্যাদার সহিত বাঁচিতে সাহায্য করিবে। কেহ প্রশ্ন করিতেই পারেন, কী করে এত ব্যবস্থা এত দ্রুত করা যাইবে? জঙ্গলমহল দীর্ঘদিন অবহেলিত, তাহার সুযোগ লইয়াই মাওবাদীদের আন্দোলন এই অঞ্চলকে প্রভাবিত করিতে পারিয়াছে। কলেজ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কারখানা প্রভৃতি তৈরি হইবার এবং চালু থাকিবার জন্য একটি পরিবেশ প্রয়োজন হয়। যেখানে দীর্ঘ দিন অনেকগুলি স্কুল বন্ধ হইয়া রহিয়াছে, সেখানে কী করিয়া নূতন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা হইবে? সন্ত্রাসের আবহাওয়ায় সংস্কৃতিচর্চার ভবন তৈরি করিয়াই বা কী লাভ হইবে? রাজ্যের আর্থিক ভাঁড়ার যখন তলানিতে ঠেকিয়াছে, তখন এই বৃহৎ উন্নয়নযজ্ঞ সাধনের টাকা আসিবে কোথা হইতে? উন্নয়নের অর্থ জঙ্গলমহলে আসিয়া দুর্নীতিতে অপচয় হইবে, এই সম্ভাবনাই বা বাদ দেওয়া যায় কী উপায়ে? এইগুলি জরুরি প্রশ্ন বটে, কিন্তু সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন নহে। নূতন মুখ্যমন্ত্রী জঙ্গলমহলের সমস্যা কী রূপে সমাধান করিতে চাহেন, কী তাঁহার পরিকল্পনা এবং কৌশল, নয়াগ্রাম এবং ঝাড়গ্রাম সফরে তাহাই তিনি সর্বসমক্ষে তুলিয়া ধরিয়াছেন। এই ঘোষণার পর স্পষ্ট হইয়াছে যে, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে সন্ত্রাস মোকাবিলার প্রধান উপায় বলিয়া দেখিতেছেন তিনি। অবহেলা এবং অনুন্নয়নের অভিযোগ খণ্ডন করিতে পারিলে, এবং সেই সঙ্গে দরিদ্র মানুষের প্রতি পুলিশ-প্রশাসনের ব্যবহারে পরিবর্তন আনিতে পারিলে সন্ত্রাসের কবল হইতে এই এলাকাকে মুক্ত করিবার সম্ভাবনা থাকে। কারণ, স্বচ্ছ ও সক্রিয় প্রশাসন মাওবাদীদের যুক্তিগুলির ওজন ও আবেদন অনেকটাই কমাইয়া দিতে পারে। মমতা সেই পথই গ্রহণ করিয়াছেন।
ইহাতে মাওবাদীদের বেশ কিছুটা অস্বস্তিতে পড়িতে হইবে, সন্দেহ নাই। উন্নয়ন এবং সামাজিক ন্যায়কে সরকারের মূল নীতি করিবার ফলে, এবং মাওবাদীদের ‘প্রতিপক্ষ’ রূপে চিহ্নিত সি পি আই এম দলের বিরোধিতার ফলে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহিত আলোচনায় বসিবার বিরুদ্ধে কোনও জোরালো যুক্তি মাওবাদীদের হাতে নাই। অপর দিকে, কেন্দ্রীয় বাহিনী অপসারণের বিষয়ে মাওবাদীদের দাবির বিষয়ে প্রশাসনিক দৃঢ়তা দেখাইয়াছেন মুখ্যমন্ত্রী। অস্ত্র সমপর্ণের পূর্বে কেন্দ্রীয় বাহিনী অপসারিত হইবে না, এ বিষয়ে তিনি অনড়। এই অবস্থায় সংকীর্ণ স্বার্থের বাহিরে দরিদ্র মানুষের বৃহত্তর স্বার্থের নিরিখে আলোচনায় বসা কেন উত্তম পন্থা নহে, সে বিষয়ে মাওবাদীদের চিন্তা করিতে হইবে। উপরন্তু স্থানীয় মানুষকে পুলিশে চাকরি দিয়া ‘দেশের হইয়া’ অস্ত্র ধরিবার আহ্বান মাওবাদীদের চাপে ফেলিবে, সন্দেহ নাই। বিহারের নকশাল-অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে উন্নয়নের জন্য অর্থ বরাদ্দ করিয়া এবং আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি করিয়া নীতীশ কুমার ভাল ফল পাইয়াছিলেন। নির্বাচনে তাঁহার পুনরাবর্তনকে তাঁহার উন্নয়ন নীতির প্রতি জনসমর্থন বলিয়াই মনে করা হইয়াছে। সুতরাং মমতাও শিক্ষা-স্বাস্থ্য-পুষ্টির উন্নতি ঘটাইয়া জনসাধারণের মধ্যে মাওবাদীদের প্রভাব রুখিতে পারিবেন, এবং তাঁহার দলের প্রতি সমর্থন বাড়াইবেন, তাহার যথেষ্ট সম্ভাবনা রহিয়াছে। মাওবাদীরা যে মমতার জনসভায় যোগ দিতে গ্রামবাসীদের নিবৃত্ত করিয়াছে, তাহা সম্ভবত এই আশঙ্কা হইতেই। প্রথম যাত্রাতেই মাওবাদীদের উপর চাপ সৃষ্টি করিয়া মুখ্যমন্ত্রী তাঁহার রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক বিবেচনার স্বাক্ষর রাখিয়াছেন, সন্দেহ নাই।
First Page Editorial Next Item


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.