পুলিশের দ্বারস্থ হয়ে নিজেই বিয়ে রুখল নাবালিকা
স্বপ্ন শিক্ষিকা হওয়ার। কিন্তু বাড়ির লোক চেয়েছিলেন মাত্র ১৪ বছরেই বিয়ে দিয়ে সংসারী করে দিতে। এই টানাপোড়েনে জীবন সম্পর্কেই ভরসা চলে যায় করিমপুরের যমশেরপুরের কিশোরী পূজা মণ্ডলের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মরিয়া হয়ে সে পালিয়ে যায় করিমপুরেই মাসির বাড়িতে। সেখান থেকেই পুলিশকে গিয়ে পূজা বলে, সে চায় বিয়ে না করে পড়াশোনা করতে। পুলিশের চাপেই তার বাড়ির লোকজন জানিয়েছেন, সাবালিকা না হওয়া পর্যন্ত পূজার বিয়ে দেবেন না তাঁরা।

পূজা মণ্ডল
ছবি: কল্লোল প্রামাণিক
সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী পূজার বাবার বাড়ি যমশেরপুরে হলেও সে থাকত দিদার কাছে আনন্দপল্লিতে। বাবা লক্ষ্মী মণ্ডল দিনমজুর। তাঁর দুই মেয়ের মধ্যে বড় পূজা পড়াশোনা করত করিমপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে। দাদু সমর সরকার কলেজের পাশের একটি দোকানে সামান্য কাজ করে কোনও রকমে সংসার চালান। পাটকাঠির বেড়া দেওয়া মাটির উঠোনের ছোট্ট বাড়িতে থাকে পূজারা তিন জন। এ মাসের গোড়ায় পূজার সম্বন্ধ আসার পরে দিদা শেফালি সরকারও চেয়েছিলেন নাতনির বিয়ে হয়ে যাক। তিনি বলেন, “আমার ও আমার মেয়ের সংসারে অভাব নিত্যসঙ্গী। তার মধ্যে ভাল পাত্র পেয়ে বিয়ে দিয়ে দেওয়ার কথাই ভেবেছিলাম।”
নাতনি বেঁকে বসায় প্রথমে বকাঝকা শুরু হয়। তাতেও পূজা রাজি না হওয়ায় তার উপরে চাপ তৈরি করা হয়েছিল নানা ভাবে। কিন্তু পূজা ছিল অনড়। পূজার মা সুধা মণ্ডল বলেন, “জীবন শেষ করে দিতে চেয়েছিল। এমন অসুস্থ হয়ে পড়ে যে, দু’বার তাকে করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়।” কিন্তু তার পরেও কেন তাঁরা মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেওয়ার জন্য জেদ ধরে রেখেছিলেন? সুধাদেবী বলেন, “মেয়ের বয়স বেড়ে গেলে অনেক পণ দিয়ে বিয়ে দিতে হত। সে ক্ষমতা আমাদের নেই। তাই চেয়েছিলাম, সে কথাটাই ওকে বুঝিয়ে পাত্রস্থ করে দিতে।”
কিন্তু পূজা বলে, “স্কুলে পড়েছি সাবালিকা না হয়ে বিয়ে করলে প্রচণ্ড সমস্যায় পড়তে হয়। সে কথা বাড়ির লোক শুনতে চায়নি। জীবন সম্পর্কেই ভরসা চলে গিয়েছিল। ভেবেছিলাম মরে যাব। তাই মাসির কাছে পালিয়ে যাই।” মাসি রূপালি সিকদার বলেন, “হঠাৎ করে এক রাতে ও আমাদের বাড়ি চলে আসায় অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। গোটা ঘটনাটা শুনে আমরাও দিদি আর মা’কে বোঝানোর চেষ্টা করি। কিন্তু তাতে আগে কোনও লাভ হয়নি। তার পরে বাধ্য হয়েই পুলিশের কাছে যেতে বলি ওকে।” এখন পূজা আবার ফিরে গিয়েছে তার দিদার বাড়িতেই। করিমপুরের সিআই বিমলকুমার বিশ্বাসের কথায়, “ওই পরিবারটির উপরে পুলিশ নজর রাখবে। আমরা চাই মেয়েটি সুস্থ স্বাভাবিক ভাবেই পড়াশোনা করে বড় হোক।” করিমপুর বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ইন্দ্রাণী সিকদার বলেন, “এক ছাত্রী যে এমন সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটা সত্যিই প্রশংসার। শুনেছি ও বিয়ের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে না পেরে জীবন সম্পর্কেই হতাশ হয়ে পড়েছিল। আমরা ওকে যতটা পারি সাহায্য করব।”
যমশেরপুরেই বাড়ি ছিল কবি যতীন্দ্রমোহন বাগচির। ‘শোলোক পরা কাজলা দিদি’র মতোই হারিয়ে যেতে চেয়েছিল যে কিশোরী, সে এখন নতুন করে ভরসা পেয়েছে।
Previous Story Desh Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.