দুর্নীতি হোক বা সন্ত্রাস হামলা— যাবতীয় দায় শরিকদের ঘাড়ে ঠেলে দেওয়ার প্রবণতাকে সমালোচনা করে সনিয়া-মনমোহনকেই আক্রমণ করলেন বিজেপির প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী।
এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে সদ্য ইস্তফা দেওয়া কংগ্রেস নেতা গুরুদাস কামাথ সন্ত্রাস রোধে ব্যর্থতার জন্য মহারাষ্ট্র সরকারের সমালোচনা করে সনিয়া-মনমোহনের অস্বস্তি বাড়িয়েছেন। মুম্বইয়ে হামলার পর কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে যে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে, এখনও তা চলছে। গত কাল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক দিগ্বিজয় সিংহ মুম্বই সন্ত্রাস হামলার পিছনে আরএসএসের ভূমিকা খতিয়ে দেখার কথা বলে সঙ্ঘকে খোঁচা দিয়েছিলেন। আজ তার পাল্টা জবাব দিয়ে বিজেপি নেতা রাজনাথ সিংহ সন্ত্রাসের সঙ্গে দিগ্বিজয়ের যোগসাজশের অভিযোগ তুললেন।
মুখে রাজনীতি না করার কথা বললেও রাজনৈতিক দলগুলি আসলে সবকলেই সন্ত্রাস নিয়ে আসরে নেমে পড়েছে। |
দুর্নীতির অভিযোগে জেরবার মনমোহন সিংহ সরকারকে এখন সন্ত্রাসের ধাক্কাও সামলাতে হচ্ছে। বিরোধীদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ যেমন রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর এনসিপি-র হাত থেকে নেওয়ার পক্ষে সওয়াল করছেন, তেমনই দিগ্বিজয় সিংহের মতো নেতারা ফের হিন্দু সন্ত্রাসের হাওয়া উস্কে দিচ্ছেন। কিন্তু বিজেপিও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়। বিজেপি নেতৃত্ব জানেন, পৃথ্বীরাজের মন্তব্যের পর কংগ্রেস-এনসিপি টানাপোড়েন ফের শুরু হয়েছে। সেই সুযোগকে রাজনৈতিক ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে আডবাণী আজ তাঁর আক্রমণের অভিমুখকে ঘুরিয়ে দেন সনিয়া-মনমোহনের দিকেই। তিনি বলেন, “মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র দফতর এনসিপি-র বদলে কংগ্রেসের হাতে থাকলে সন্ত্রাস এড়ানো যেত, মুখ্যমন্ত্রীর এই যুক্তি অসার। খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম যখন বলছেন, এ’টি গোয়েন্দা ব্যর্থতা নয়, তা হলে রাজ্য পুলিশের কোনও গাফিলতিও থাকতে পারে না। তাই অহেতুক বলির পাঁঠা খুঁজে লাভ নেই।” আডবাণী বলেন, অতীতেও দুর্নীতির সব দায় শরিক ডিএমকের উপরে চাপিয়ে দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে চেয়েছে কংগ্রেস। সন্ত্রাস মোকাবিলার প্রশ্নেও সনিয়া গাঁধী ও মনমোহন সিংহকে বুঝতে হবে, কেন্দ্রীয় স্তরে কঠোর আইন করা না গেলে এমন ঘটনা আবার ঘটবে।
বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, সন্ত্রাস মোকাবিলায় কেন্দ্রের নরম মনোভাবই সন্ত্রাসবাদীদের শক্তি জোগাচ্ছে। বাটলা হাউসে পুলিশি অভিযানের পর দিগ্বিজয় সিংহ আজমগড় চলে যান। এতে সন্ত্রাসবাদীরাই প্রশ্রয় পায়। গত কাল সঙ্ঘকে খোঁচা দেওয়ার জবাব দিতে গিয়ে বিজেপি নেতা রাজনাথ সিংহ বলেন, “আজমগড় জেলায় সঞ্জারপুরে সন্ত্রাসের যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। আর সেখানেই কিছু দিন আগে গিয়েছিলেন দিগ্বিজয়। ফলে সন্ত্রাসের পিছনে দিগ্বিজয়ের কোনও ভূমিকা আছে কি না, তদন্তকারী সংস্থার তা খতিয়ে দেখা উচিত।” বিজেপির আক্রমণের মুখেই সনিয়া-মনমোহনের অস্বস্তি বাড়িয়ে তুলেছেন দলের নেতা গুরুদাস কামাথ। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার রদবদলে নিজের দফতর নিয়ে ক্ষুব্ধ কামাথ ইস্তফা দিয়ে দলীয় নেতৃত্বকে অস্বস্তিতে ফেলেছেন। প্রকাশ্যে মুখ খুলে এ বার তিনি মুম্বই হামলার জন্য মহারাষ্ট্র সরকারের ‘অকর্মণ্যতা’কে দুষেছেন। ২৬/১১-র পরে গত তিন বছরে সন্ত্রাস রোধে কেন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, সে প্রশ্ন তুলে সনিয়া ও মনমোহনকে চিঠিও লিখেছেন কামাথ। |