ধস ভরাটের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন, দায় এড়াচ্ছে ইসিএল
ক জন নয়। ইসিএলের ভরাট করা গর্তে তলিয়ে গিয়ে প্রাণ হারালেন দুই যুবক ও তাঁদের দুই সন্তান। আর এই মর্মান্তিক ঘটনা ফের উস্কে দিল পুরনো বিতর্ক। বিধি না মেনে কাজ করার অভিযোগ উঠল ইসিএলের বিরুদ্ধে।
অবৈধ খাদান বা ধসে সৃষ্টি হওয়া গর্ত ভরাটের ব্যবস্থা নিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভ দীর্ঘ দিনের। তাঁদের অভিযোগ, যে ভাবে গর্ত ভরাট করার কথা, সেই পদ্ধতি মেনে কখনই গর্ত ভরাট করা হয় না। শনিবারের দুর্ঘটনার জন্যও সরাসরি ইসিএলকেই দায়ী করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মৃত তারক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাবা বলরাম বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রশ্ন তুলেছেন, “কাজ ঠিক মতো হলে শক্ত জমি বসে যায় কী করে?”
মাস চারেক আগেই ধসের জেরে অন্ডালের পরাশকোল গ্রামে রাস্তার বেশ কিছুটা অংশ বসে গিয়েছিল। ইসিএল ছাই দিয়ে সেই অংশ ভরাট করে। বাসিন্দারা তখনই পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছিলেন। এর পরে ছ’দিন আগে রাস্তার অদূরে ধসের জেরে প্রায় তিরিশ ফুট গভীর একটি গর্ত তৈরি হয়। সেই গর্তও ভরাট হয়েছে একই ‘নিয়মে’। ছাই ফেলে।

গ্রামবাসীর দাবি নিয়ে বৈঠক কাজোড়ায়। নিজস্ব চিত্র।

গর্ত ভরাটের প্রকৃত নিয়ম কী?
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসিএলের এক মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারই বলেছেন, “কোনও জায়গায় ধস হলে প্রথমেই কাঁটাতার দিয়ে এলাকা ঘিরে ফেলার কথা। ‘বিপজ্জনক এলাকা’ হিসাবে চিহ্নিত করার জন্য একটি বোর্ড লাগানোর কথা সেখানে। এর পরে প্রথমে পাথর বা গাছের গুড়ির ছোট ছোট খণ্ড দিয়ে এবং তার উপরে মাটি ও পাথর দিয়ে মজবুত ভাবে গর্ত ভরাট করার কথা। এ সবের সঙ্গে ছাই ব্যবহার করা যেতে পারে।”
গ্রামবাসীরা অবশ্য জানাচ্ছেন, এ গুলির কোনওটাই করা হয়নি পরাশকোলে। শুধুমাত্র ছাই ফেলেই ওই গর্তটি ভরাট করা হয়েছিল। গর্তের অদূরেই বাড়ি জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ের। ২৬ মিটার দূরে। ঘটনার আতঙ্ক চোখে মুখে স্পষ্ট। কোনও মতে বললেন, “কী ভাবে যে দিন কাটাচ্ছি! যখন তখন পায়ের তলার মাটি ধসে যেতে পারে। ঢুকে যেতে পারে ঘরবাড়ি। দীর্ঘ দিন ধরেই আমরা পুনর্বাসনের দাবি জানাচ্ছি। এই ঘটনার পরেও কি ইসিএলের চোখ খুলবে না?”
তৃণমূল নেতা, পাণ্ডবেশ্বরের ব্লক সম্পাদক সন্দীপ সরকার বলেন, “চার-পাঁচ মাস আগে যখন রাস্তা ধসে বসে গিয়েছিল, তার পরে জনরোষে ইসিএল কর্তৃপক্ষ সংলগ্ন পরিত্যক্ত খনি ভরাটের কাজ শুরু করে। কিন্তু কোনও এক অজানা কারণে মাত্র ২০ শতাংশ ভরাটের পরেই কাজ বন্ধ করে তারা চলে যায়। ফের চলতে থাকে অবৈধ খনন। কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের মদত ছাড়া কী ভাবে এমন হতে পারে?”
ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় অবশ্য বলেন, “জাতীয়করণের আগে ওই এলাকায় ভূগর্ভস্থ বেসরকারি খনি ছিল। উপরিভাগে ছিল খোলামুখ খনি। এর পরে অবৈধ খননকারীরা গর্ত খুঁড়ে একেবারে ভূগর্ভস্থ খনিতে নেমে যায়। এমনকী, খনির মধ্যে ভারবাহী পিলারগুলিও তারা কেটে ফেলে। তার ফলেই এই ধরনের বিপদ ঘটছে। আমরা বহু বার পুলিশের কাছে অবৈধ খনন নিয়ে এফআইআর করেছি।”
শুধু অভিযোগ করেই কি দায় এড়াতে পারে ইসিএল?
নীলাদ্রিবাবুর পরিষ্কার জবাব, “সংস্থা এখানে কখনও কয়লা কাটেনি। স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের কাছে কোনও নকশা নেই। কোথাও ধস হলে সেই জায়গা আমরা ভর্তি করে দিই।” কিন্তু মাটি-পাথর ব্যবহার না করে শুধু ছাই দিয়ে কেন ওই গর্ত ভরাট করা হল, তার কোনও জবাব মেলেনি।
মেলেনি আর কত বাসিন্দা ধসের বলি হবেন, তার জবাবও।
Previous Story Bardhaman Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.