নিজস্ব সংবাদদাতা • অন্ডাল |
ছোট্ট পায়ের অংশটা দেখা যেতেই গর্তের দিকে হুমড়ি খেয়ে পড়ল জনতা।
যন্ত্রের কোপে মাটি সরতেই দেখা মিলল দেহগুলির। বাবন বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশেই তাঁর ছেলে সায়ন। কিছু ক্ষণের মধ্যে দেখা মিলল তারক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তার পরেই বৃষ্টি। ডান পায়ের একাংশ নেই। ভিড়ের মধ্যে কেঁদে ফেললেন অনেকেই। |
সারা গ্রামেই উনুন চড়েনি রবিবার। ছেলেমেয়েকে নিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় বেরিয়েছিলেন অন্ডালের পরাশকোল গ্রামের বাসিন্দা, দুই বন্ধু তারক ও বাবন। একই পাড়ায় বাড়ি দু’জনের। সন্ধ্যায় খবর আসে গ্রামের সীমানায় ধসপ্রবণ এলাকায় ছাই ভেঙে তলিয়ে গিয়েছেন চার জন। পড়িমরি করে ঘটনাস্থলের দিকে দৌড় দিয়েছিলেন পড়শি ও আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা। শুরু আশা-আশঙ্কার দোলাচল। ইসিএলের উদ্ধারকারী দল গর্তে নেমে জানিয়ে দেয়, কারও দেখা মেলেনি। মাটি কাটতে হবে। এর পরে রাতভর অপেক্ষা। অপেক্ষা শেষ হল রবিবার সকাল সাড়ে ৯টায়। যখন গর্তে দেখা মিলল ছোট্ট বৃষ্টির পায়ের অংশ।
|
শোকস্তব্ধ তারক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাবা বলরামবাবু। নিজস্ব চিত্র। |
বলরাম বন্দ্যোপাধ্যায় ও বাণীদেবীর চার সন্তানের মধ্যে একমাত্র ছেলে তারক। এ দিন তাঁদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন দু’জনেই। একই অবস্থা তারকের স্ত্রী নূপুরের। স্বামী ও একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে চোখে ভাষা নেই তাঁর। কথা বলার মতো অবস্থায় নেই বাড়ির কেউই। সান্ত্বনা দিতে এসে কথা হারিয়ে ফেলেছেন প্রতিবেশীরাও।
অদূরেই বাড়ি বাবনের। একটি ঠিকাদার সংস্থায় কাজ করতেন তিনি। ঘটনার পর থেকেই বাকরুদ্ধ বাবা ভোলানাথবাবু ও মা সন্ধ্যাদেবী। বাবন ও পিয়ালিদেবীর একমাত্র ছেলে সায়ন খাঁদরা প্রাইমারি ইনস্টিটিউশনে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত। তার সঙ্গেই পড়ত বৃষ্টি। এলাকাবাসী জানান, সকলেরই খুব প্রিয় ছিল ফুটফুটে এই দুই বালক-বালিকা। |
এলাকায় জনপ্রিয় ছিলেন তারক এবং বাবনও। স্থানীয় বাসিন্দা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “তারক বেশ ভাল ফুটবল খেলত। বাবনদা গত বছরও গ্রামে নাটক আয়োজনে বড় ভূমিকা নিয়েছিল। ওদের যে এমন পরিণতি হবে, ভাবতেই পারছি না।” এমন পরিণতির জন্য অবৈধ খাদানের পাশাপাশি পুলিশ এবং ইসিএলকেও দায়ী করছেন মৃতদের পরিজনেরা। তারকের কাকা অমিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষোভ, “পুলিশ, কয়লা চোর এবং ইসিএলের অশুভ আঁতাতে আমরা বিপন্ন। এমন মর্মান্তিক ঘটনার দায় ইসিএলের নেওয়া উচিত।” অমিয়বাবু আরও দাবি করেন, কয়লা চোরেরা দীর্ঘ দিন পরিত্যক্ত খনিগুলিতে কয়লা কেটে এলাকার মাটির তলা ফাঁকা করে দিয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা অবৈধ খননকারীদের ধরার জন্য পুলিশ ও ইসিএলের কাছে লিখিত দাবি জানিয়েছি।” ঘটনার পরে রাতেই পৌঁছন জেলাশাসক ওঙ্কারসিংহ মিনা। রবিবার তিনি জানিয়েছেন, ইসিএলকে বিষয়টি খতিয়ে দেখে মৃতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ইসিএল কর্তৃপক্ষও জানিয়েছেন, মানবিকতার খাতিরে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন তাঁরা।আর্থিক ক্ষতিপূরণ হয়তো মিলবে। প্রিয়জন হারানোর ক্ষতে প্রলেপ পড়বে কি?
|
শনিবার রাত ও রবিবার সকালে অন্ডালের পরাশকোলে ছবিগুলি তুলেছেন ওমপ্রকাশ সিংহ। |