নীলোৎপল রায়চৌধুরী • অন্ডাল |
সকাল ৯টা ২৫ মিনিট। যন্ত্র দিয়ে মাটি সরাতে চোখে পড়ল এক শিশুর দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন পায়ের অংশ। তার পাশের মাটি কাটতেই একে একে মিলল বাবন বন্দ্যোপাধ্যায় (৩৪), সায়ন (৭), তারক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (৩৫) দেহ। সব শেষে সাত বছরের বৃষ্টি। তার ডান পায়ের হাঁটুর নীচের অংশ নেই।
প্রায় চোদ্দো ঘণ্টার চেষ্টায় রবিবার উদ্ধার হল ছাইধসে গর্তে তলিয়ে যাওয়া দুই যুবক ও তাঁদের দুই সন্তানের মৃতদেহ। |
বর্ধমানের অন্ডালের পরাশকোল গ্রামে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ ধস নেমে গর্তে ঢুকে যান ইসিএল কর্মী তারক, তাঁর বন্ধু বাবন এবং তাঁদের ছেলেমেয়ে বৃষ্টি ও সায়ন। সপ্তাহখানেক আগেই এলাকার একটি রাস্তার পাশে ধস নেমে ফুট তিরিশেক ওই গর্তটি তৈরি হয়। ইসিএল ছাই দিয়ে তা ভরাট করে। শনিবার বিকেলে তারক মেয়েকে নিয়ে ওই এলাকায় যান। ছেলেকে নিয়ে এসেছিলেন বাবন। বৃষ্টি ও সায়ন সেখানে খেলছিলেন। হঠাৎ চার জনই তলিয়ে যান। এর পরে ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা পরাশকোল কোলিয়ারি এজেন্ট কার্যালয়ে ভাঙচুর চালান।
প্রায় দু’ঘণ্টা পরে ইসিএলের উদ্ধারকারী দল এসে জানায়, গর্তে কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। মাটি কাটতে হবে। সারা রাত মাটি কাটার পরে এ দিন সকালে চার জনের দেহ মেলে। তবে মৃতদের পরিবারের সদস্যদের চাকরির দাবিতে বিকেল পর্যন্ত গর্ত থেকে দেহ তুলতে দেননি এলাকার বাসিন্দারা। ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় জানান, সংস্থার কর্মী হওয়ায় তারকের পরিবারের এক জনকে চাকরি দেওয়া হবে। তবে বাবন ইসিএলের কর্মী না হওয়ায় তাঁর পরিবারের সদস্যকে চাকরি দেওয়া যাবে না। |
মাটি সরিয়ে তোলা হচ্ছে দেহ। |
জট কাটাতে দুপুরে অন্ডালের কাজোড়ায় ইসিএলের অফিসার্স ক্লাবে দুর্গাপুরের এসডিপিও জয় বিশ্বাস, পাণ্ডবেশ্বরের বিডিও সুশান্ত রায় ও দু’জন এগজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ২৫ জন গ্রামবাসীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন কাজোড়া এরিয়ার চিফ জেনারেল ম্যানেজার রাধিকারঞ্জন কিশোর-সহ সংস্থার অন্য আধিকারিকেরা।
বিকেলে বৈঠক শেষে ইসিএল কর্তৃপক্ষ জানান, মৃতদের পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। তারকের পরিবারের এক সদস্যকে ইসিএলে এবং বাবনের পরিবারের এক জনকে বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থায় চাকরি দেওয়া হবে। এর পরেই দেহগুলি তুলতে দেওয়া হয়। তারকের কাকা অমিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “কয়লা চোরেদের দৌরাত্ম্যে এলাকা বিপন্ন। পুলিশ, ইসিএল ব্যবস্থা নেয় না।” স্থানীয় মানুষ এ দিন পুলিশের কাছে লিখিত ভাবে অবৈধ খাদান বন্ধের দাবি জানান। দুর্গাপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শুভঙ্কর সিংহ সরকার বলেন, “অবৈধ খাদান বন্ধে অভিযান চলছে। তা আরও বাড়ানো হবে।”
|
রবিবার ওমপ্রকাশ সিংহের ছবি। |