বিস্ফোরণের ঘটনার ৯৬ ঘণ্টা পর মালদহের বৈষ্ণবনগরের বিশদিঘি গ্রামের বোমা-কাণ্ডের ধোঁয়াশা কাটল। বোমা বিস্ফোরণের পর যে মৃতদেহগুলিকে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল, শুক্রবার পুলিশ কবর খুঁড়ে তাদের মধ্যে তিন জনের দেহ উদ্ধার করেছে। তিন জনের বাড়ির লোকই পলাতক। বিস্ফোরণের পর কারা দেহগুলি কবর দেয় এবং কাদের জন্য মৃতেরা বিশদিঘি গ্রামের জাহিরুল শেখের বাড়িতে বোমা তৈরি করছিল তার খোঁজে তল্লাশিতে নেমেছে পুলিশ। এ দিন কবর খুঁড়ে যে তিন জনের দেহ পুলিশ উদ্ধার করেছে তারা হল দাউদ শেখ, আজিজুর হক এবং আজিজুল শেখ।
বৃহস্পতিবারই রেলের পুলিশ কুকুরের সাহায্য নিয়ে ওই কবরগুলির সন্ধান মেলে। শুক্রবার কালিয়াচক-৩ নম্বর ব্লকের বিডিও সুমন বিশ্বাস, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ মণ্ডল, ডিএসপি সৈকত ঘোষের উপস্থিতিতে বৈষ্ণবনগরের পোস্টঅফিস পাড়ার পাটখেত ও বাঁশঝাড়ের ভিতর থেকে কবর খুঁড়ে একটি এবং পরে ছিটমহল গ্রামের হলুদের জমি থেকে আরও দু’টি মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। জহিরুল শেখের বাড়িতে বিস্ফোরণের পরে এই তিন জন নিখোঁজ ছিল। বিস্ফোরণে মৃত্যুর পরে পরিবারের লোকেরাই দেহগুলি পুঁতে দেয় বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। বিস্ফোরণের পরেই জেলার কংগ্রেস, সিপিএম এবং তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা নেতারা একযোগে দেহগুলি পুঁতে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন। কিন্তু জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বিস্ফোরণের ঘটনাকেই গুজব বলে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ। |
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ ওঠার পরে রাজ্যের শিশু, নারী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র মালদহের পুলিশ সুপার ভুবন মণ্ডলকে মাটি খুঁড়ে দেহ খুঁজে বার করার নির্দেশ দেন। গ্রামের লোকেদের অভিযোগ, ওই দিন বিস্ফোরণে আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়। বাকি তিনটি দেহকে কোথায় পুঁতে রাখা হয়েছে পুলিশ তার সন্ধানে নেমেছে। পুলিশ সুপার বলেন, “ওই বিস্ফোরণে আরও কেউ মারা গিয়েছিল কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কাদের জন্য মৃতেরা বোমা তৈরি করছিল সেটাও জানার চেষ্টা হচ্ছে।”
এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ পুলিশ পারদেওনাপুরের পোস্টঅফিস পাড়ায় যান। বিস্ফোরণের ঘটনার পরে ওই গ্রামের কৃষক গাজলু শেখের ছেলে দাউদ শেখ নিখোঁজ ছিল। সে হাই মাদ্রাসার একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিল। এ দিন গাজলু শেখের বাড়ির পিছনে কবর খুঁড়ে দাউদের দেহ উদ্ধার হয়। বিস্ফোরণে ওই তরুণের মাথা একেবারে ঝলসে গিয়েছে। গাজলু শেখের এক প্রতিবেশী বলেন, “বিস্ফোরণের পরে রাতেই কিছু লোক বাড়িতে দাউদকে জখম অবস্থায় তুলে আনে। তখনও দাউদ বেঁচে ছিল। গ্রামের এক ডাক্তারকেও ডেকে আনা হয়। কিন্তু বাঁচানো যায়নি।”
কালিয়াচক-৩ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ মণ্ডল বলেন, “বেশ কিছুদিন ধরেই বিশদিঘি গ্রামে উমেশ মণ্ডলদের সঙ্গে সুবোধ সরকারদের গোলমাল চলছিল। দু’পক্ষের গোলমাল মেটাতে বৈষ্ণবনগর থানার আইসিকে নিয়ে ৭-৮ বার বৈঠক করি। কিন্তু গোলমাল মেটেনি। মনে হচ্ছে দু’পক্ষের কেউ বোমা তৈরির বরাত দিয়েছিল।” |