|
|
|
|
বিপর্যয় কেন, চিনেও প্রশ্নের মুখে সিপিএম |
সন্দীপন চক্রবর্তী • কলকাতা |
ভারতে বামপন্থীরা কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন কেন, এ বার বিদেশ-বিভুঁইয়ে সেই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হল সিপিএমকে! তা-ও কমিউনিস্ট বিপ্লবের পীঠস্থান চিনেই!
দীর্ঘ ৩৪ বছর পরে পশ্চিমবঙ্গে বাম দুর্গের যে পতন ঘটেছে, বিলক্ষণ জানেন চিনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) নেতৃত্ব। ভারতের সিপিএমকে হাতের কাছে পেয়ে সরাসরি তাদের কাছেই চিনা নেতারা জানতে চেয়েছেন, এমন বিপর্যয়ের কারণ। সিপিএম নেতৃত্ব আর কী করবেন? অগত্যা তাঁরা তাঁদের কেন্দ্রীয় কমিটির বিশ্লেষণের কথাই বেজিংয়ে বসে শুনিয়ে এসেছেন। শুধু সেখানেই শেষ নয়! পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরলে নির্বাচনে ভরাডুবির কারণ দুই সংশ্লিষ্ট রাজ্যের নেতারা সিপিসি-র কাছে ব্যাখ্যা করেছেন। স্বভাবতই সেখানে উঠে এসেছে সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের কথাও। গত কয়েক বছরে যে ‘ভূত’ কোথাও সিপিএমের পিছু ছাড়ছে না!
সিপিসি-র আমন্ত্রণে চিন সফরে গিয়েছেন এ দেশের সিপিএমের একটি প্রতিনিধিদল। নেতৃত্বে দলের পলিটব্যুরো সদস্য এবং রাজ্যসভায় সদ্য পুনর্নির্বাচিত সাংসদ সীতারাম ইয়েচুরি। রাজ্যসভায় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্যই তিনি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে একটু পরে যোগ দিয়েছেন। ইয়েচুরি গিয়ে পৌঁছনোর পরে চিনের প্রশাসনের স্টেট কাউন্সিলর দাই বিঙ্গুও এবং সিপিসি-র পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটির (সে দেশে পলিটব্যুরোর এমনই নাম) সদস্য লি ইউয়ানচাওয়ের সঙ্গে তাঁর আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে বেজিংয়ে। এ ছাড়া, ঘরোয়া আলাপ-আলোচনা চলছেই। ভারতে কমিউনিস্টদের বর্তমান অবস্থা এবং তাদের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি সম্পর্কে ইয়েচুরির কাছে খোঁজ নিয়েছেন লি। ইয়েচুরির কথায়, “আমাদের দেশে পার্টির কী অবস্থা, দুই রাজ্যে আমাদের যে এ বার পরাজয় হয়েছে, সব খবরই এঁরা রাখেন দেখলাম!”
চিনের তিয়ানজিন থেকে ইয়েচুরি আনন্দবাজারকে বলেছেন, “সিপিএম যে সংসদীয় গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য লড়াই চালাচ্ছে, তার প্রশংসাই করেছেন সিপিসি নেতৃত্ব।” দুই রাজ্যে ক্ষমতা হারিয়ে স্রেফ ত্রিপুরায় এসে যখন সিপিএমকে ঠেকতে হয়েছে, সেই সময়ে চিনের উৎসাহ যথেষ্ট ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই ইয়েচুরি মনে করছেন। তিনিই সিপিএমের আন্তর্জাতিক বিভাগের দায়িত্বে। অন্য দিকে, লি আবার সিপিসি-র কেন্দ্রীয় কমিটির তরফে দলের সাংগঠনিক বিভাগের দায়িত্বে। চিনের কমিউনিস্ট পার্টিতে সংগঠনের গুরুত্ব প্রবল, তাদের ক্যাডার-নীতিও সারা বিশ্বের কমিউনিস্টদের কাছেই চর্চার বিষয়। ইয়েচুরির কথায়, “ক্যাডারদের কী ভাবে আরও ভাল ভাবে প্রশিক্ষিত করা যায়, কোন কাজে ক্যাডারদের নিয়োগ করলে সব চেয়ে ভাল ফল পাওয়া যায়, এই সব নিয়ে লি-র সঙ্গে আলোচনায় আমরা উপকৃত হয়েছি।”
প্রতিনিধিদলে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, যিনি ইয়েচুরি যাওয়ার আগে দলের নেতৃত্বও দিচ্ছিলেন। বঙ্গ সিপিএমের রাজ্য কমিটি হারের কারণ কী ভাবে বিশ্লেষণ করেছে, তার একটা প্রাথমিক রূপরেখা সিপিসি-র সঙ্গে আলোচনায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বিগত বাম সরকারের কাজের ক্ষেত্রে বেশ কিছু ঘাটতি, জমি অধিগ্রহণের পদ্ধতিতে ভুল, দলের একাংশের দুর্নীতি ও ঔদ্ধত্য সব প্রশ্নই আলোচনায় এসেছে বলে প্রতিনিধিদল সূত্রের খবর। ভারতে কমিউনিস্টদের সব চেয়ে ‘শক্ত ঘাঁটি’ পশ্চিমবঙ্গ থেকে তাদের উৎখাত করতে অতি বাম থেকে দক্ষিণপন্থী যাবতীয় শক্তি কী ভাবে জোট বেঁধেছিল, কী ভাবে সংবাদমাধ্যমের একাংশ ‘অপপ্রচারে’ সামিল হয়েছিল, রাজ্য কমিটির বিশ্লেষণের সব প্রসঙ্গই সিপিসি-কে অবহিত করা হয়েছে। একই ভাবে কেরল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ভি গোবিন্দন মাস্টার দক্ষিণী রাজ্যে সিপিএমের ‘হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে পরাজয়ে’র কাহিনি শুনিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত ক্ষমতা হারাতে হলেও সে রাজ্যে সিপিএমের মনোবল ভেঙে যাওয়ার মতো কিছুই যে ঘটেনি, গোবিন্দন ব্যাখ্যা করেছেন সে কথা। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, “ভোটের ফলের কথা ভেবে কমিউনিস্টরা রাজনীতি করেন না। কিন্তু দুই রাজ্যে পরাজয় ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের পক্ষেই বড় ধাক্কা, সন্দেহ নেই। দেশের এখন যা পরিস্থিতি, তাতে কমিউনিস্ট আন্দোলনের পুনর্জাগরণের সুযোগ রয়েছে। চিনের কমিউনিস্ট পার্টিকে এই বার্তাই দিতে চান আমাদের প্রতিনিধিরা। সিপিসি-র সঙ্গে আমাদের বোঝাপড়া বরাবরই ভাল।” স্টেট কাউন্সিলর বিঙ্গুও সীমান্ত সমস্যা নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনার দায়িত্বপ্রাপ্ত। ইয়েচুরি তাঁকে জানিয়েছেন, দু’দেশের পারস্পরিক আস্থা ও সম্পর্ক উন্নয়নে সিপিএম আন্তরিক ভাবে সহযোগিতা করবে। |
আজ রাজ্য কমিটি, থাকছেন কারাট
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
আজ, শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে সিপিএমের দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠক। বিধানসভা নির্বাচনে দলের বিপর্যয়ের কারণ নিয়ে আলোচনা হবে এই বৈঠকে। এবং তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই বৈঠকে হাজির থাকবেন দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব এ খবর দিয়ে জানান, এই বৈঠকে কারাটের আসার কথাই ছিল না। কিন্তু শুক্রবার কারাট দলকে জানান, তিনি রাজ্য কমিটির বৈঠকে থাকতে চান। আর এক পলিটব্যুরো সদস্য তথা এ রাজ্য থেকে রাজ্যসভায় নির্বাচিত সাংসদ সীতারাম ইয়েচুরি অবশ্য বিদেশে থাকায় এই বৈঠকে থাকছেন না। |
|
|
|
|
|