|
|
|
|
কালকা মেলে মৃত্যু সেনাকর্মীর |
কিনে রেখেছিলেন ইট, পাকা বাড়ি আর করা হল না |
দেবব্রত দাস • পাত্রসায়র |
একতলা মাটির বাড়ির সামনে কার্যত ভেঙে পড়েছিল গোটা গ্রামই। শুক্রবার দুপুর ১২টা নাগাদ কফিনবন্দি দেহটা পৌঁছতেই চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না প্রতিবেশীরা। পাত্রসায়রের হাটকৃষ্ণনগর গ্রামের বাসিন্দা, সেনাকর্মী উজ্জ্বল বাউরির (২৯) পরিবারের রেখচিত্রটাই বদলে গেল এক লহমায়। কফিনেই আছড়ে পড়লেন বাউরি পরিবারের সদস্যেরা।
কালকা মেলের দুর্ঘটনায় প্রাণ কেড়েছে সেনাবাহিনীর ‘ল্যান্সনায়েক’ উজ্জ্বলের। গত ১০ মে বাড়ি এসেছিলেন তিনি। ২৮ দিন ছুটি কাটিয়ে ৯ জুলাই বর্ধমান স্টেশন থেকে অভিশপ্ত ট্রেনটিতে তিনি ওঠেন কর্মস্থল লাদাখে যাওয়ার জন্য। এস-২ কামরার ৫৬ নম্বর আপার বার্থে তাঁর ‘রিজার্ভেশন’ ছিল। কালকা মেলের দুর্ঘটনার খবর শুনে তাঁর ঘনিষ্ঠ তিন বন্ধু বাদল রায়, সঞ্জয় ঘোষ ও শ্যামল দে বিশেষ ট্রেনে পরের দিনই (১০ জুলাই) উত্তরপ্রদেশের মলওয়াঁর উদ্দেশে রওনা দেন। সেখান থেকে ফতেপুর জেলা হাসপাতালে গিয়ে তাঁরা উজ্জ্বলের দেহ শনাক্ত করেন। শুক্রবার বন্ধুর কফিনবন্দি দেহ নিয়ে তিন জন ফেরেন সেনার গাড়িতে। |
|
শোকার্ত স্ত্রী। নিজস্ব চিত্র। |
পাত্রসায়রের কাঁকরডাঙ্গা মোড়ের বাসিন্দা বাদল জানান, গত রবিবার রাতে টিভিতে কালকা মেলের দুর্ঘটনার খবর দেখেই তাঁদের মন খারাপ হয়ে যায়। তিন বন্ধু মিলে বারবার উজ্জ্বলের মোবাইলে ফোন করছিলেন। কিন্তু ফোন বন্ধ ছিল। বাদলের কথায়, “তখনই বুঝতে পারি, কিছু একটা হয়েছে। আমরা তিন জন দুর্ঘটনাস্থলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। সোমবারই রওনা দিই।” সঞ্জয় বলেন, “ফতেপুর হাসপাতালে গিয়ে উজ্জ্বলের দেহ আমরা শনাক্ত করি। কানপুরে দেহের ময়নাতদন্ত করানোর পরে সেনাবাহিনীর সাহায্যে কফিনবন্দি দেহ নিয়ে বাড়ি ফিরলাম।” খুবই গরিব পরিবারের উজ্জ্বল ছিলেন চার বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। স্থানীয় হাটকৃষ্ণনগর হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করে ২০০২ সালে সেনাবাহিনীর জওয়ান পদে যোগ দেন। বছর খানেক আগে পদোন্নতি হয়ে ‘ল্যান্সনায়েক’ হন। বাড়িতে রয়েছেন পক্ষাগাতগ্রস্ত বৃদ্ধ বাবা, মা, স্ত্রী এবং ছয় ও চার বছরের দুই মেয়ে প্রিয়াঙ্কা ও শিল্পী। কফিনবন্দি দেহের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়ে উজ্জ্বলের স্ত্রী ঝুমাদেবী কোনও রকমে বললেন, “রবিবার সকালেও ওর সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল। আমাদের সাবধানে থাকার কথা বলেছিল। মেয়েদের মন খারাপ করতেও বারণ করে। বলেছিল, পুজোয় ছুটি পেলে বাড়ি আসবে।” দীর্ঘদিন ধরেই ডান পা পঙ্গু উজ্জ্বলের বাবা পিরু বাউরির। ছেলের চাকরি তাঁদের সংসারে কিছুটা হলেও স্বচ্ছলতা এনেছিল। মাটির বাড়ি ভেঙে ইটের পাকা বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছিলেন ওই সেনাকর্মী। পিরুবাবুর কথায়, “বাড়ি তৈরি করবে বলে চার গাড়ি ইট কিনে রেখে গেল। বলে গেল, পুজোর সময় ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরে কাজ শুরু করবে। একটা পাকাবাড়ির স্বপ্ন দেখত উজ্জ্বল। সব শেষ হয়ে গেল!” প্রিয় বন্ধুকে হারানোর শোক ভুলতে পারছেন না বাদল, সঞ্জয়রা। তাঁরা বললেন, “ছুটিতে বাড়ি এলেই সারাদিন হইহই করে আড্ডা মারত। সব সময় হাসিখুশি থাকত। উজ্জ্বল নেই, ভাবতেই পারছি না।” এ দিন দুপুরে গ্রামের শ্মশানঘাটে উজ্জ্বলের অন্ত্যেষ্টি সম্পন্ন হয়। |
|
|
|
|
|