|
|
|
|
|
|
 |
ক্লিক অর প্রেস |
হ্যাকিং-এর দুনিয়া |
|
এঁদের নামে কুখ্যাতি বড় কম নয়। কিন্তু কম্পিউটার ব্যবস্থার উন্নতির পিছনে এঁদের
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। হ্যাকিং-এর গোপন দুনিয়া ঘুরে দেখলেন সুরিত ডস |
বন্ধ হয়ে গেল নিউজ অফ দ্য ওয়ার্ল্ড। অন্যতম কারণ হ্যাকিং। ফলে আবার শিরোনামে উঠে এল এই সমস্যা। এ নিয়েই এ বার কথা বলব।
গণমাধ্যমে হ্যাকিং শব্দটির কুখ্যাতি কম নয়। শুনলে মনে হয় এক দল লোক কম্পিউটারের সামনে বসে সর্ব ক্ষণ অনিষ্ট করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ ব্যবহারকারী, বড় বাণিজ্য সংস্থা থেকে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কে নেই তাঁদের আক্রমণের তালিকায়। কিন্তু, সত্যি হল এ রকম অনিষ্টকারী হ্যাকার থাকলেও, তাঁদের সংখ্যা বেশি নয়। বড় সংখ্যক হ্যাকার কম্পিউটার ও নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার উন্নতির পিছনে নানা ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
বিগত শতাব্দীর ষাটের দশকে প্রথম হ্যাকিং শব্দটি শোনা যায়। সে সময়ে এক দল কম্পিউটার প্রোগ্রামার কম্পিউটার কোড হ্যাক করতেন। তীব্র অনুসন্ধিৎসা এঁদের সর্বক্ষণের সঙ্গী। নতুন প্রোগ্রাম লেখার পাশাপাশি কী ভাবে কোনও প্রোগ্রাম কাজ করছে, কোথায় উন্নতি সম্ভব, কোনও প্রোগ্রামে বাগ থাকলে তা মেরামতির জন্য প্যাচ তৈরির মতো নানা কাজ করতেন এঁরা। এ ভাবে এঁরা কম্পিউটার ব্যবস্থার উন্নতির নানা দিগন্ত খুলে দিয়েছিলেন। বিল গেটস, স্টিভ জোবস থেকে স্টিভ ওয়াজনিক পরবর্তী সময়ে কম্পিউটার জগতে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি সে সময়ে এই দলে ছিলেন।
কম্পিউটার ব্যবস্থার উন্নতির পরবর্তী ধাপে এল নেটওয়ার্কিং। বিশ্বের অসংখ্য কম্পিউটার জুড়ে যেতে থাকল। যার চূড়ান্ত ফল ইন্টারনেট ব্যবস্থা। এর সঙ্গেই হ্যাকারদের কাজের ধরন পাল্টে গেল। কী ভাবে কোনও নেটওয়ার্ক কাজ করছে তা জানাই অন্যতম লক্ষ্য হয়ে উঠল। এর পিছনে ক্ষতি করার চেয়ে জানার ইচ্ছেই ছিল প্রবল। এখনও এই ইচ্ছেই প্রবল। বেশির ভাগ হ্যাকার নেটওয়ার্কের মধ্যে ঢুকে কী ভাবে তা কাজ করছে এবং কোথায় খামতি রয়েছে তা বোঝার চেষ্টা করেন। কোনও খামতি ধরতে পারলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বা সংস্থাকে তা জানিয়ে দেন। আর এক দল, যাঁরা সংখ্যায় কম, খামতির সুযোগ নিয়ে নেটওয়ার্কে ঢুকে তথ্য চুরি করা থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়া নানা ক্ষতিকারক কাজ করেন। |
 |
কম্পিউটার প্রোগ্রামিং-এর জগতে কিন্তু হ্যাকারদের সুনাম রয়েছে। কম্পিউটার ও নেটওয়ার্ক-এর সুরক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির পিছনে এঁদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এঁদের হোয়াইট হ্যাট বা এথিক্যাল হ্যাকার বলেও ডাকা হয়। কিন্তু যাঁরা ক্ষতি করেন তাঁদের ক্র্যাকার বা ব্ল্যাক হ্যাট বলে। হ্যাকার-জগতের বদনামের জন্য এঁরা দায়ী। তবে সব ধরনের হ্যাকাররা ওপেন সোর্স সফটওয়্যারের সমর্থক। ওপেন সোর্স সফটওয়্যারের সোর্স কোড সবাই জানতে পারেন, ব্যবহার করতে পারেন, অন্যকে দিতেও পারেন। এ ধরনের সফটওয়্যারের উন্নতির জন্য হ্যাকাররা পরস্পরকে সাহায্যও করেন। এ বার কয়েক জন হ্যাকার ও ক্র্যাকারদের কথা জানিয়ে শেষ করব।
অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জোবস ও স্টিভ ওয়াজনিকের কথা আগেই বলেছি। প্রথম দিকে এঁরা হ্যাকিং-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে ব্যক্তিগত কম্পিউটারের জগতে তাঁদের অবদান আজ সবাই জানেন। আজ কম খরচে বাড়ি বাড়ি কম্পিউটারের পিছনে এঁদের অবদান রয়েছে। লিনাস টোরভালডস আর এক জন বিখ্যাত হ্যাকার। লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম তৈরিতে এঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। লিনাস ওপেন সোর্স সফটওয়্যার ব্যবহারের পক্ষে। এই ব্যবস্থার সুবিধার দিকগুলি তিনি প্রচারও করেন। রিচার্ড স্টলম্যান ওরফে ‘আরএমএস’, জিএনউ প্রকল্পের জনক। এই প্রকল্পে বিনামূল্যের অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করা হয়। তিনি ফ্রি সফটওয়্যার ফাউন্ডেশন-এর সঙ্গেও যুক্ত। এঁরা ডিজিট্যাল রাইটস ম্যানেজমেন্টের (ডিআরএম) বিরোধী। ইনিও প্রথম দিকে হ্যাকার ছিলেন।
এ বার কয়কে জন ব্ল্যাক হ্যাটের বিষয়ে জানাব। যেমন, কেভিন মিটনিক। আশির দশকে ১৭ বছর বয়েসে মিটনিক নর্থ আমেরিকান অ্যারোস্পেস ডিফেন্স কমান্ড-এর নেটওয়ার্কে ঢুকে পরে। তাঁর নেশা ছিল নতুন সফটওয়্যার সংগ্রহ করা। তিনি অনেক বারই গ্রেফতার হয়েছিলেন। কেভিন পলসন একটি রেডিও স্টেশনের ফোন ব্যবস্থাকে এমন ভাবে হ্যাক করেছিলেন যে শুধু তার বাড়ির ফোনই যেত। ফলে রেডিও স্টেশনের নানা প্রতিযোগিতায় তিনিই জিততে থাকেন। এখন তিনি একটি ম্যাগাজিনের সম্পাদক।
অ্যাড্রিয়ান লামো অতিসুরক্ষিত বিভিন্ন সংস্থার নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার মধ্যে ঢুকে পড়ে তথ্য সংগ্রহ করতেন। তার পরে সংস্থাকে মেল করে খামতির কথা জানাতেন। বিভিন্ন লাইব্রেরি বা ইন্টারনেট কাফেতে বসে তিনি এ কাজ করতেন। ভাল হলেও এ কাজ বেআইনি। একটি বিখ্যাত পত্রিকার নেটওয়ার্ক-এ ঢোকার অপরাধে গ্রেফতার হন। ১৬ বছর বয়সে জোনাথন জেমস নাসা ও ডিফেন্স থ্রেট রিডাকশন এজেন্সির মতো কয়েকটি অতি সুরক্ষিত সার্ভারে ঢুকে পরেন। জোনাথন ‘comrade’ ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন। ধরা পরার পরে বিচারে তার জেল হয়।
|
কম্পিউটার সংক্রান্ত আপনার প্রশ্ন পাঠান:
askdoss@abpmail.com-এ
সাবজেক্ট লাইনে লিখুন abp kolkata |
|
|
|
 |
|
|