|
|
|
|
বাসিন্দারাই রুখলেন অবৈধ বালি তোলা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
প্রশাসনের উপরে আর ভরসা রাখতে না-পেরে স্থানীয় মানুষই এ বার কংসাবতী নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালি তোলা রুখলেন। শুক্রবার সকালে মেদিনীপুরের গাঁধীঘাটে গণ-প্রতিরোধের মুখে বালি তুলতে আসা গাড়ি ফেলেই পালালেন গাড়ি-চালক ও শ্রমিকেরা। পরে পৌঁছলেন জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্মীরা। শেষমেশ জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিকের আশ্বাস, যে সমস্ত গাড়ি বেআইনি ভাবে বালি তোলায় যুক্ত বলে আটক হয়েছে, সেগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিন্তু প্রশ্ন রয়েই গেল। গাড়ি তো আর নিজে নিজে বালি তুলতে আসে না। শ্রমিকরাও পেটের দায়ে কাজ করেন। যারা করান, সেই রাঘব বোয়ালদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কি ব্যবস্থা নেবে? নেয় না বলেই মানুষ জানেন। তাই শুক্রবার নিজেরাই প্রতিরোধে নামেন। কিন্তু কতকাল আর এ ভাবে প্রশাসন দায় এড়িয়ে চলবে? নাকি ভূমি দফতরের একাংশের সঙ্গে রফা করে অবৈধ কারবার যেমন চলছে, চলতেই থাকবে? আইনরক্ষার দায় যাদের তারাই বেআইনি কারবারে ইন্ধন জোগালে সাধারণের আইন হাতে তুলে নেওয়ার সম্ভাবনা রোখা যাবে তো? বা তার নৈতিক অধিকার থাকবে তো প্রশাসনের? |
|
পড়ে রয়েছে বালি বোঝাই লরি। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
মেদিনীপুর শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে কংসাবতী। প্রতিদিনই নদীবক্ষ থেকে অবৈধ ভাবে তোলা বালি নিয়ে যায় কয়েকশো লরি। আধুনিক যন্ত্র দিয়েও বালি তোলার কাজ চলে। ফলে নদীবক্ষে বিপজ্জনক গহ্বর তৈরি হচ্ছে। ধসে যাচ্ছে নদীর পাড়। এ ভাবে বালি তোলার কারণেই অ্যানিকেত বাঁধ ভেঙে শেষ হতে বসেছে মেদিনীপুর ও খড়্গপুর শহরে পানীয় জলের সরবরাহ ব্যবস্থা। বালি তোলার বিরুদ্ধে বার বার সরব হয়েছেন স্থানীয় মানুষ, কোনও কোনও রাজনৈতিক দলও। এমনকী সম্প্রতি অ্যানিকেত ভাঙার পরে ওই বাঁধের ২০০ মিটার আগে-পরে পর্যন্ত বালি তোলা যাবে না বলে প্রশাসনিক বিজ্ঞপ্তিও জারি হয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞপ্তি থেকে গিয়েছে কাগজে-কলমেই। বালি তোলার কাজ চলছেই। অভিযোগ, কোনও কোনও রাজনৈতিক দলের গুটিকয় নেতা ও কয়েক জন প্রশাসনিক আধিকারিকের মদত থাকার ফলেই অবৈধ কারবার বন্ধ করা যাচ্ছে না।
তাই প্রশাসনের উপরে আর ভরসা না রেখে শুক্রবার গাঁধীঘাট এলাকার বাসিন্দারা নিজেরাই প্রতিরোধে নামেন। এলাকা ঘিরে ফেলেন তাঁরা। তখন বেশ কয়েকটি লরি বালি তোলার জন্য নদীর ধারে পৌঁছেছে। শুরু হয় বিক্ষোভ। অবস্থা বেগতিক বুঝে লরিচালক ও শ্রমিকরা পিঠ-টান দেন। এক লরিচালক জয়দেব সামন্ত আবার জানিয়েছেন চমকপ্রদ তথ্য। তাঁর দাবি, তিনি টাকা জমা দিয়ে বালি তুলতে এসেছিলেন। কিন্তু কোনও অনুমতিজ্ঞাপক কাগজপত্র তাঁকে দেওয়া হয়নি প্রশাসনের তরফে। যদিও ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের পাল্টা দাবি, তারা কোনও টাকা নেয়নি।
প্রশাসনের উপরে অবশ্য আমজনতার ক্ষোভ বাড়ছেই। গাঁধীঘাট এলাকার বাসিন্দা শেখ লিয়াকত আলি বলেন, “নদীর ভিতরে বড় বড় গর্ত হচ্ছে। নদীতে স্নান করতে গিয়ে আমাদের এলাকার মানুষ মারা গিয়েছেন। প্রশাসনের হুঁশ নেই। মোক্তার হোসেনের বক্তব্য, “প্রশাসন নির্বিকার বলেই আমরা নিজেরাই রাস্তায় নেমেছি।” জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক শঙ্কর হালদার অবশ্য জানিয়েছেন, বেআইনি ভাবে বালি তোলা হচ্ছে জানলেই এ বার থেকে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে। সত্যি হবে কি না, মানুষ কিন্তু নজর রাখবেন। |
|
|
|
|
|