|
|
|
|
|
|
বেলিলিয়াস রোড |
নিকাশির গেরো |
দেবাশিস দাশ |
কাজ শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালে। কিন্তু আজও শেষ হয়নি বেলিলিয়াস রোডে মাত্র ৬১০ মিটার পাইপ লাইন বসানোর কাজ।
যার জেরে গত তিন বছর ধরে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় বন্ধ রয়েছে বাস বা চার চাকার যান চলাচল। তিন চাকা বা দু’চাকার যান যা-ও বা চলাচল করে তা চলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। তাই ফি বর্ষায় জমা পাঁকজল, বড় বড় গর্ত আর কাদা ঘেঁটে হেঁটেই যাতায়াত করতে হয় অফিসযাত্রী থেকে বাসিন্দাদের। তাই স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষোভ জমেছে এলাকার মানুষের মনে।
ক্ষোভের কেন্দ্রে বেলিলিয়াস রোড। ‘শেফিল্ড’ হাওড়ার ‘জীবনরেখা’। এই রাস্তার দু’পাশে রয়েছে অজস্র ছোট-বড় লোহা ও লেদ কারখানা। হাওড়ার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এখানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। কিন্তু শিল্পাঞ্চলের সব থেকে প্রয়োজনীয় শর্ত বলা হয় যে ব্যবস্থাকে সেই পরিবহণের হাল বছরের পর বছর বেহাল হয়ে পড়ায় কলকারখানাগুলির কাজকর্ম প্রায় শিকেয় উঠেছে। কাজকর্মের অভাবে চরম সমস্যায় পড়েছেন শ্রমিকরা। অনেকেই পাততাড়ি গুটিয়ে দেশে ফিরে গিয়েছেন, নয়ত অন্যত্রে নতুন কাজ
খুঁজে নিয়েছেন। |
|
এ ছাড়া বেলিলিয়াস রোডে রয়েছে হাওড়ার একটি প্রাচীন কলেজ। সেখানে কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী আসেন। কিন্তু ওই কলেজের ছাত্রছাত্রীদের গত তিন বছর ধরে প্রাণান্তকর অবস্থার মধ্য দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, প্রতি বছর বৃষ্টির জমা জল কলেজে ঢুকে পড়ায় সেই জল মাড়িয়েই ক্লাসে আসতে হচ্ছে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের। ওই কলেজের শিক্ষক অপর্ণা দাসের অভিযোগ, “এ বারের বর্ষার প্রথম বৃষ্টিতে কলেজে যে জল জমে ছিল তা নামতে প্রায় ১৫ দিন লেগেছে। যেখানে নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতির জন্য এত দিন ধরে আমাদের কষ্ট সহ্য করা, সেই নিকাশির এই হাল কেন?”
একই প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার বাসিন্দা গৌতম কোলে। তাঁর কথায়: “গত তিন বছর ধরে এলাকার মানুষ বিয়ে বা সামাজিক অনুষ্ঠানে লোকজন নিমন্ত্রণ করতে ভয় পাচ্ছেন, নিমন্ত্রিতরা কী ভাবে আসবেন তা ভেবে। আমাদের যেন শাঁখের করাত অবস্থা। প্রতিবাদও করতে পারছি না এলাকার জল জমার সমাধান হবে ভেবে। আবার দিনের পর দিন এই পরিস্থিতি মেনেও নিতে পারছি না।”
এ কথা ঠিকই, হাওড়া পুরসভার ওই এলাকায়, বিশেষ করে ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডে দীর্ঘ দিনের সমস্যা নিকাশি। এক দিকে পুরসভার দীর্ঘ দিনের উদাসীনতা, অন্য দিকে, এলাকার মানুষ ও কলকারখানার শ্রমিকদের অসাবধানতা এই দু’য়ে মিলে কার্যত প্রতি বছর বর্ষায় নাভিশ্বাস ওঠে এলাকার মানুষের। সামান্য বৃষ্টিতেই ভেসে যায় তিনটি ওয়ার্ডের অলি-গলি। এমনকী, গৃহস্থের হেঁসেলেও নর্দমা উপচে পাঁকজল ঢুকে পড়ে।
বর্ষাকালে সব থেকে খারাপ অবস্থা হয় ২১ নম্বর ওয়ার্ডের। ওই ওয়ার্ডের শ্রীকৃষ্ণ ভকত লেন, অন্নদাপ্রসাদ ব্যানার্জি লেন, কালীপ্রসাদ ব্যানার্জি লেন, বেলিলিয়াস প্রথম বাই লেন, বদন রায় লেন, ফকির দাসমণ্ডল লেনে সামান্য বৃষ্টিতেই জল জমে যায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই জমা জলে মিশে যায় বিভিন্ন কারখানার অ্যাসিড জল। সেই জল পায়ে লেগে চর্মরোগ হয়। অভিযোগ উঠেছে, পুরসভাকে বার বার জানিয়েও কোনও ফল হয়নি। |
|
এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর গোপাল পাত্রের অভিযোগ, হাওড়া উন্নয়ন সংস্থা (এইচআইটি) জাতীয় সেবাদল ক্লাব থেকে যে নিকাশি পাইপ বসানোর কাজ করছিল তা অনেক ক্ষেত্রে তিন বছর পরেও সম্পূর্ণ করতে পারেনি। এমনকী, বহু নর্দমার উপর অনেক কালভার্টও তৈরি করে দেওয়া হয়নি। ফলে এ বারের বর্ষাতেও ভয়াবহ অবস্থা হয়েছে বেলিলিয়াস রোড ও আশপাশের গলির। গোপালবাবু বলেন, “নতুন নিকাশির কাজ শেষ না হওয়ায় বর্তমানে মধ্য হাওড়ার সমস্ত জল ২১ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য দিয়ে টিকিয়াপাড়া ক্যানালে ফেলা হচ্ছে। অথচ ওই নিকাশি নালাটির পলি ও আবর্জনা নিয়মিত পরিষ্কার না করায় জল বেরোতে পারছে না। ফলে বৃষ্টি না হলেও বিভিন্ন রাস্তায় জল জমে থাকছে।”
মেয়র মমতা জয়সোয়াল এইচআইটি-র চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর ওই সংস্থার নতুন চেয়ারম্যান হয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক শীতল সর্দার। গোপালবাবু জানান, শীতলবাবুকে ওই এলাকার সমস্যা জানিয়ে চিঠি দিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
কিন্তু নিকাশির কাজ এত দিনেও শেষ না হওয়ার কারণ কী?
এইচআইটি সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত ড্রেনেজ ক্যানালের বিকল্প হিসেবে বেলিলিয়াস রোডে একটা নতুন নিকাশি তৈরির কাজ শুরু হয় ২০০৮ সালে। ঠিক হয়, মধ্য হাওড়ার সব জল ওই নিকাশি দিয়ে ড্রেনেজ ক্যানালে ফেলা হবে। এ জন্য ১৪০০ ডায়ামিটার মাপের পাইপ বসানো শুরু হয় বেলিলিয়াস রোডে। অন্য দিকে, ৯০০ ডায়ামিটারের পাইপ বসানোর কাজ শুরু হয় বেলিলিয়াস লেনে। এইচআইটি-র ইঞ্জিনিয়ারদের অভিযোগ, এই কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই নানা সমস্যা তৈরি করেন এলাকার এক শ্রেণির বাসিন্দা। কাজে বার বার বাধা দেওয়া হয়। রাতে কাজ করতে নিষেধ করা হয়। এ জন্য টেন্ডার দিয়ে ঠিকাদার পেতেও সমস্যা হয়। যদিও এর মধ্যে গত ৩ বছরের মধ্যে মূল ৬১০ মিটার পাইপ লাইনের মধ্যে ৪৪০ মিটার পাইপ লাইন বসানোর কাজ শেষ হয়ে যায়। বর্তমানে মাত্র ১৪০ মিটার কাজ বাকি রয়েছে। বর্ষা চলে গেলেই কাজ
শুরু হবে।
এইচআইটি-র চিফ ইঞ্জিনিয়ার শিখরেশ দত্ত বলেন, “কাজের গতি কিছুটা কমে গিয়েছে টাকার জোগানের অভাবে। গত বছর রাজ্য সরকারের কাছে ১৯ কোটি টাকা চেয়ে মাত্র ৭ কোটি টাকা পেয়েছি। আশা করছি, অর্থের জোগান এলেই কাজ শেষ হয়ে যাবে।” শিখরেশবাবুর দাবি, রাস্তা খারাপের যে অভিযোগ উঠছে তা ঠিক নয়। আগে রাস্তা খারাপ ছিল ঠিকই কিন্তু বর্তমানে বেশির ভাগ রাস্তা সারিয়ে দেওয়া হয়েছে। |
ছবি: রণজিৎ নন্দী |
|
|
|
|
|