|
|
|
|
সম্পাদকীয় ২... |
তালিবানি উত্থান |
তালিবান জঙ্গিদের হামলায় কন্দহরের মুকুটহীন সম্রাট আহমেদ ওয়ালি কারজাইয়ের হত্যা আফগানিস্তানে জেহাদি ইসলামের সাফল্যের ইতিবৃত্ত নূতন করিয়া তুলিয়া ধরিল। পক্ষ কাল আগেই কাবুলের ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে মানব-বোমার ফিদাইন হামলা দেখাইয়া দিয়াছিল, জঙ্গি সন্ত্রাস প্রশমিত হওয়ার কোনও লক্ষণই সেখানে নাই। তাহার পর কন্দহরের কার্যকরী প্রশাসক আহমেদ কারজাইয়ের গুপ্তহত্যা আফগানিস্তানের ক্ষমতাবৃত্তে উপর্যুপরি আঘাত। আহমেদ কারজাই ছিলেন আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের ভাই এবং তালিবানরোধী অভিযানে হামিদের বিশ্বস্ত সহযোগী। কন্দহর যদি তালিবানের আধ্যাত্মিক আঁতুড়ঘর হইয়া থাকে, তবে আহমেদ কারজাই ছিলেন আফগানিস্তানের দ্বিতীয় ক্ষমতাশীল ব্যক্তি। গুপ্তহত্যায় কেবল তাঁহাকে অপসারিতই করা হইল না, তাঁহার অন্ত্যেষ্টি অনুষ্ঠানেও বোমারু হামলা চালাইয়া জঙ্গিরা নিজেদের ভবিষ্যৎ অভিপ্রায়ও জানাইয়া দিল। আর এই সব কিছুই ঘটিতেছে এমন সময়, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো জোটভুক্ত পশ্চিমী রাষ্ট্রগুলি আফগান ভূখণ্ড হইতে ধাপে-ধাপে সৈন্য প্রত্যাহারের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করিয়া ফেলিয়াছে।
বোমায়-ক্ষেপণাস্ত্রে আফগানিস্তানকে প্রস্তর যুগে ফিরাইয়া দিবার জর্জ বুশের অভিযান তালিবানকে ক্ষমতাচ্যুত করিয়া হামিদ কারজাইয়ের জমানার অভিষেক ঘটাইলেও তালিবান কখনওই নিঃশেষিত হয় নাই, গেরিলা যুদ্ধের কৌশল অবলম্বন করিয়া ‘জলের মধ্যে মাছ’-এর ন্যায় জনসাধারণের মধ্যে মিশিয়া থাকে, ছড়াইয়া পড়ে, শক্তি সঞ্চয় করিতে থাকে এবং সঞ্চিত শক্তিকে সংহত, কেন্দ্রীভূত করিয়া দখলদার বাহিনীর দুর্বল স্থানগুলি আঘাতে-আঘাতে দুর্বলতর করিয়া তোলে। তালিবানদের উত্তরোত্তর শক্তিবৃদ্ধিই এখন পশ্চিমী বাহিনীর অপসরণের মঞ্চ প্রস্তুত করিতেছে। অতঃপর মার্কিন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ভূমিপুত্র আফগানদের যে নিরাপত্তা বাহিনী হামিদ কারজাইয়ের ‘গণতন্ত্র’কে রক্ষা করার জন্য পড়িয়া থাকিবে, তালিবানদের পক্ষে এক ঝটকায় তাহাদের উৎখাত করা কেবল সময়ের ব্যাপার। কারণ স্বাধীনতা, সাম্য ও সৌভ্রাত্র্যের ত্রি-নীতি লইয়া যে পাশ্চাত্য গণতন্ত্রের ধারণা, তাহা অপেক্ষা জেহাদের মতাদর্শ অনেক বেশি জোরালো। অন্তত আফগানিস্তানের মতো জনজাতীয় ইসলামি সমাজের অনগ্রসর চৈতন্যের কাছে পশ্চিমী গণতন্ত্রের চেয়ে জেহাদি ইসলামের আবেদন ও আকর্ষণ অনেক বেশি। উপরন্তু গণতান্ত্রিক সু-রাজ-এর যে নমুনা কারজাইয়ের সরকার আফগানদের সম্মুখে পেশ করিয়াছে, তাহাও তত লোভনীয় নয়— ব্যাপক কারচুপি করিয়া ভোটে জেতা ও সেই ভোটের রায় অর্থাৎ ভুয়া জনাদেশ লইয়া একটি চরম দুর্নীতিপরায়ণ ক্ষমতাকেন্দ্র রচনা করা। আফগানিস্তান তাই নিশ্চিত ভাবেই তালিবান পুনর্বিজয়ের পথে। অস্যার্থ, পাকিস্তানের পোয়াবারো, কেননা পাক দেওবন্দি মাদ্রাসাগুলিই একদা তালিবান জঙ্গিদের প্রশিক্ষণকেন্দ্র ছিল। নয়াদিল্লি তাই মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের লগ্ন যথাসম্ভব বিলম্বিত করিতে চায়। কিন্তু আফগানিস্তানে আপন অবস্থান প্রলম্বিত করা মার্কিন প্রশাসনের স্বার্থের অনুকূল নয়, মার্কিন প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তার অনুকূল তো নহেই। সুতরাং ভারতের উদ্বেগের কারণ আছে। |
|
|
|
|
|