এক অস্থায়ী কর্মীকে স্থায়ীকরণের প্রতিবাদে এবং নিয়োগে স্থানীয়দের অগ্রাধিকার দেওয়ার দাবিতে বর্ধমান শহরের কৃষ্ণসায়র পরিবেশ কানন বন্ধ করে দিলেন তৃণমূলের কিছু নেতা-কর্মী। বৃহস্পতিবার দুপুরে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা কাননে ঢুকে কর্মীদের হুমকি দেয় এবং ভ্রমণকারীদের বের করে দেয়। শুক্রবার পুলিশের আশ্বাসে ওই কানন খোলা হলে ফের চড়াও হন ওই নেতা-কর্মীরা। মানুষজনকে বের করে কর্মীদের তাঁরা তাড়া করেন বলে অভিযোগ। পরে কাননের গেট বন্ধ করে চলে যায় হামলাকারীরা। কেন এ দিন ওখানে পুলিশ ছিল না, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর।
পরিবেশ কানন সূত্রে জানা যায়, মলয় মুখোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে অস্থায়ী নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। সম্প্রতি তাঁকে স্থায়ী কর্মী হিসেবে নিয়োগকে কেন্দ্র করেই তৃণমূলের ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কমিটি ক্ষোভ প্রকাশ করে। স্থানীয় তৃণমূল নেতারা কয়েক দিন ধরে কৃষ্ণসায়র অছি পরিষদের কাছে দাবি জানাচ্ছিলেন, এলাকার ১০ যুবককে কাননের বিভিন্ন পদে স্থায়ী চাকরি দিতে হবে। কিন্তু পরিবেশ কানন কর্তৃপক্ষ তা না মেনে মলয়বাবুকে স্থায়ী কর্মী হিসেবে নিয়োগ করায় গোলমাল শুরু হয়। |
বৃহস্পতিবার স্থানীয় তৃণমূল নেতা শেখ বাদশা ও ঝন্টু খান দলবল নিয়ে পরিবেশ কাননে ঢুকে ভিতরে থাকা নিরাপত্তাকর্মীদের হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। ভ্রমনকারীদের জোর করে বের করে দেওয়া হয়। ওই দিন গোলমালের খবর পেয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক তথা মন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়কে ফোন করা হয়। উপাচার্য সুব্রত পাল শুক্রবার বলেন, “রবিরঞ্জনবাবু জানান, পুলিশ সুপারের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। পুলিশ পাঠিয়ে কানন খোলার আশ্বাস দেওয়া হয়। তাই এ দিন কানন খোলা হয়েছিল।’’ এ দিন দুপুর ১২টা নাগাদ কানন খোলা হয়। শুরু হয় টিকিট বিক্রি। তবে কোনও পুলিশ ছিল না। বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ প্রায় ২০০ লোক কাননে চড়াও হয়ে মানুষজনকে বের করে দিতে শুরু করে। কর্মীদের তাড়া করা হয়। অভিযোগ, গেট বন্ধ করে চলে যাওয়ার সময়ে হামলাকারীরা শাসিয়ে যায়, “আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করে গেট খুললে চরম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ দিন কাননে বেড়াতে আসা সুকন্যা দাস, প্রীতম বন্দ্যোপাধ্যায়রা বলেন, “কাননে ঢুকে এ ভাবে তাড়া খেতে হবে, স্বপ্নেও ভাবিনি।” ঘটনার পরে বর্ধমান থানা থেকে তিন ভ্যান পুলিশ পৌঁছয়। নিরাপত্তা কর্মীরা বলেন, “কর্তৃপক্ষকে ঘটনার কথা জানানো হয়েছে। পুলিশ প্রহরার ব্যবস্থা না হলে, শনিবার থেকে আমরা আর গেট খুলব না।” এই পার্কের দায়িত্বে থাকা কৃষ্ণসায়র অছি পরিষদের সম্পাদক তথা বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন (কলা বিভাগ) অরূপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “২৭ নম্বর ওয়ার্ডের লোকজনের দাবি মতো লোক নিয়োগ করা সম্ভব নয়। সে কারণে আমি কাল রাতেই পদত্যাগ করেছি।”
স্থানীয় তৃণমূল নেতা বাদশা বলেন, “৩৪ বছর ধরে সিপিএম সমর্থকদের ওই কাননে চাকরি দেওয়া হয়েছে। এ বার আমাদের লোক নিতে হবে বলে ন্যায্য দাবিই জানিয়েছি।” তাঁর হুমকি, “দাবি না মানা পর্যন্ত কাননটি খুলতে দেব না।” মন্ত্রী রবিরঞ্জনবাবু এ দিন বলেন, “বাদশারা যা করেছে, তা ঠিক হয়নি। আমি পুলিশ সুপারকে কাননের নিরাপত্তা বজায় রাখার কথা বলেছিলাম। তা কেন হয়নি, জানি না।” পুলিশ সুপার বলেন, “বর্ধমান থানাকে ঘটনার দিকে নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছিলাম। কেন পুলিশ ওখানে ছিল না, তা খতিয়ে দেখা হবে।” |