দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার হুগলি নদীর তীরে ডায়মন্ড হারবার আধুনিক ভারতের ইতিহাসে এক বিশেষ প্রসিদ্ধ স্থাননাম। এ অঞ্চলের পূর্বতন নাম ছিল হাজিপুর। ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষের এই স্থানটি বন্দরশহর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল। এখানকার বন্দর সম্বন্ধে ১৮১৫-র ইস্ট ইন্ডিয়া গেজেটিয়ারে লেখা আছে ‘At Diamond Harbour the Company’s ships usually unload their outward and receive the greater part of their homeward bound cargoes from whence they proceed to Sagar roads where the remainder is taken in.’ উল্লেখ্য, ডায়মন্ড হারবারেই ১৮৫১ সালে ভারতের প্রথম টেলিগ্রাফ স্টেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৬৮-১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশরা ডায়মন্ড হারবারেই একটি দুর্গ নির্মাণ করেন, যা ‘ডায়মন্ড হারবার চিংড়িখালি কেল্লা’ নামে পরিচিত। এই দুর্গেই ইট-পাথরের বাঙ্কারে একাধিক কামান বসানো হয়েছিল নদীর দিকে নিশানা করে, যার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল জলদস্যুদের হাত থেকে নিম্ন গাঙ্গেয় বাংলাকে বাঁচানো। এল এস এস ও ম্যালি ১৯১৪-য় তাঁর বেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ার্স/ ২৪ পরগনাজ গ্রন্থে ডায়মন্ড হারবার কেল্লা সম্বন্ধে লিখেছেন “About half a mile to the South is Chingrikhali Fort, where heavy guns are mounted and the Artillery encamp annually for gun practice... Diamond Harbour was a favourite anchorage for ships a century and more ago.” অর্থাৎ, ডায়মন্ড হারবারের এই কেল্লা যে ব্রিটিশদের এক বিশেষ শক্ত ঘাঁটি ছিল, এ কথা অনস্বীকার্য। কিন্তু বর্তমান নদীভাঙনে কেল্লা প্রায় বিলুপ্তির পথে। ভগ্নদশাপ্রাপ্ত এই কেল্লার গুটিকতক দেওয়াল একেবারে নিশ্চিহ্ন হওয়ার জন্য সম্ভবত এখন দিন গুনছে। আর এ ছাড়া ডায়মন্ড হারবারে (কয়েকটি প্রশাসনিক কার্যালয় বাদে) তৎকালীন সময়ের সকল প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শন প্রকৃতির গ্রাসে, মানুষের অবহেলায় নদীগর্ভে বিলীন। তবে, বিগত বেশ কিছু দিন আগে এই কেল্লা সংলগ্ন নদীপাড়েই দু’টি প্রাচীন কামান সর্বসমক্ষে উদ্ভাসিত হয়েছে। বর্তমানে এই সমগ্র ঐতিহ্যবাহী স্থানটি ডায়মন্ড হারবার পৌরসভা দেখভালের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। |
বিশেষ তৎপরতা দেখালে আগামী দিনে এই গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক কেল্লা হয়তো রক্ষা করা যেতে পারে; সঙ্গে সঙ্গে যদি অন্তত কামান দু’টি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়, তা হলেও ইতিহাসের কিছু অংশ বেঁচে থাকতে পারে। স্থানীয় পৌর প্রশাসন থেকে ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব সর্বেক্ষণ প্রত্যেকেই এই ঐতিহাসিক কেল্লা ও কামানের অবস্থা সম্বন্ধে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল। একজন ইতিহাস-ঐতিহ্য সচেতন নাগরিক হিসেবে সংশ্লিষ্ট কাছে বিশেষ নিবেদন, বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে ইতিহাস সংরক্ষণে একটু সক্রিয় পন্থা নিন। আসলে, এ ভাবেই অবহেলা-অনাদরে আমাদের চারপাশে বহু ইতিহাস-ঐতিহ্য প্রতিনিয়ত একের পর এক শেষ হচ্ছে। আমরাই পারি আমাদের ইতিহাসকে আগামী প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে। আসুন, সকলে আমরা একটু ইতিহাস সচেতন হই।
উজ্জ্বল সরদার। কুন্দরালি, বারুইপুর, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা
|
সম্প্রতি কৃষ্ণনগর-করিমপুর জাতীয় সড়কে চাপড়া থেকে বড় আন্দুলিয়া পর্যন্ত প্রায় দশ কিমি পথে দশটি স্থায়ী বাম্পার সরকারি উদ্যোগে স্থাপিত হওয়ায় জনজীবন খুবই বিঘ্নিত হচ্ছে। বাম্পারগুলি এত উঁচু এবং বিস্তৃত যে, কোনও পথচারী বা দু’চাকার গাড়ির পক্ষে তা পারাপার হওয়া কষ্টসাধ্য। ফলে সেই সব জায়গায় নানা ভাবে পথ-দুর্ঘটনা ঘটছে। এ ধরনের বাম্পার পথে গাছের গুঁড়ি ফেলে গাড়িতে লুঠপাট করার সামিল। এমন ঘটনা কিছু দিন আগেই ঘটেছে এবং একজন বি ডি ও বাম্পারের জায়গাতেই তার শিকার হয়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন। এই পথে করিমপুর এবং তেহট্ট স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা গ্রামাঞ্চল থেকে সর্বদা অ্যাম্বুল্যান্সে গুরুতর রোগী কৃষ্ণনগরে স্থানান্তরিত হন। অসুস্থ মানুষের পক্ষে সুউচ্চ বাম্পার পারাপারে প্রবল ঝাঁকুনি মোটেই কাম্য নয়। দুধ, দমকল, বি এস এফ-এর গাড়ি দ্রুত চলাচলেরও সমস্যা হচ্ছে এতে। জানি না, এই ভাবে বাম্পার তৈরি কতখানি বিধিসম্মত। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীত নিবেদন, বাম্পারগুলি সরিয়ে চলার পথ অবাধ ও মসৃণ করা হোক।
ডা. বিশ্বনাথ হালদার। বড় আন্দুলিয়া, নদিয়া
|